Friday, November 6, 2015

মালেশিয়া ভ্রমন-৮: লাংকাবির শেষ দিন (ষষ্ঠ দিন)

লাংকাবির মূল প্লান সব মোটামুটি খতম। আজকে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে শেষে রাতে আবার কুয়ালালামপুরে ফেরত যাব। সকালে নাস্তা করে এসে প্রথমে ব্যাগগুলো গুছিয়ে নেয়া হলো। তারপর হোটেল থেকে চেকআউট করে সব জিনিসপত্র আগের সন্ধ্যায় ভাড়া করা গাড়িতে তুলে নেয়া হলো। লাংকাবীর সর্বশেষ আকর্ষন "সেভেন ওয়েলস" এ যাওয়া হবে, সেখানে দুপুর পর্যন্ত থেকে লাঞ্চ সেরে আস্তে ধীরে এয়ারপোর্টের দিকে চলে যাওয়া হবে। এয়ারপোর্টের পাশেই চমতকার সীবিচ সেখানে সূর্যডোবাটুকু উপভোগ করে এয়ারপোর্টে ঢুকে পড়া হবে।

সেভেন ওয়েলস এর কার পার্কিং, লাংকাবী


সেভেন ওয়েলস জায়গাটা একটা পাহাড়ের চুড়ায়। অনেক উঁচু এই পাহাড়ে উঠার জন্যে সিড়ি আছে, কিছুদুর উঠার পর সিড়িটা দুদিকে ভাগ হয়ে গেছে। একদিকে একটা ঝর্না রয়েছে, আর সোজা উপরে গেলে সেভেন ওয়েলসের মূল উত্পত্তিস্থল। সিড়ির শুরুর অংশের চত্বরে বিভিন্ন দোকান পাট রয়েছে।

বামে গেলে বড় একটা ঝর্নার দেখা মিলবে, আর উপরে সেভেন ওয়েলস
প্রথমে সবাই মিলে বামের ট্রেকটা ধরলাম। বাধানো রাস্তা আছে। কিছুদুর গিয়ে আবার নিচের দিকে নেমে গেছে। সেখানে চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা একটা ঝর্না রয়েছে। এ সময় ঝর্নায় পানি কম, কিন্তু গভীরতা আর যতটুকু চওড়া তাতে মনে হয়েছে কখনো কখনো হয়তো ঝর্নাটা খুব উত্তাল হয়ে উঠে।

সেভেন ওয়েলসের ঝর্না
গত কয়েকদিনের টানা ভ্রমনে সবাই যথেষ্ট ক্লান্ত। শুধুমাত্র শাহিদ ভাই ছাড়া, উনি আমাকে নিয়ে সেভেন ওয়েলস জয় করতে ছুটলেন। জায়গাটা অনেক উঁচুতে। আর প্রচন্ড ভ্যাপসা আবহাওয়ায় শরীরের পানি সব খুব তাড়াতাড়ি ঘাম হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বিশাল আকারের কিছু গাছ দেখলাম।
পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা বিশাল বৃক্ষ
চুড়ায় উঠে আবার হতাশ হতে হলো। এখানেও শুকনো মওসুম চলছে, ওয়েলসের মধ্যে কোন পানি টানি নেই। যদ্দুর মনে হয়, কখনো কখনো এ জায়গায় এত পানি থাকে যে তা সাতটি আলাদা স্রোত ধরে নিচে নেমে যায়, সেই থেকে এর নাম সেভেন ওয়েলস, কিন্তু একটা স্রোতও চোখে পড়লো না।
সেভেন ওয়েলস
জায়গাটা খুবই স্যাঁতস্যাতে এবং পিচ্ছিল। পাশে সাবধানবানী ছিলো, তাই সাবধানে সাবধানে পা চালানোর চেষ্টা করলাম, তবু পিছলা খেয়ে কোনমতে তাল সামলাতে পারলাম। ভাগ্যিস স্রোত নেই, নইলে স্রোতে টেনে নিয়ে যেত।
সেভেন ওয়েলস
নিচে নেমে গিয়ে কিছু খাওয়া দাওয়া করা হলো। চত্বরে নারিকেলের ডাবের চমতকার একটা বরফকুচি দেয়া পানীয় পাওয়া যায় সেটা খেলাম। তারপর কিছুক্ষন বসে জিরিয়ে নিয়ে আবার গাড়িতে চড়ে বসলাম। গাড়িতে এদিক ওদিক খানিক্ষন ঘোরাঘুরি শেষে আরেকটি সৈকতে পৌছুলাম। সেখানেও চমতকার একটা চত্বর আছে, আর এখান থেকে দুরে অনেকগুলো দ্বীপ দেখতে পাওয়া যায়।

কুয়াহ এর কাছাকাছি একটি সৈকত
শেষ বিকেলে এয়ারপোর্টের কাছে চলে এলাম। এয়ারপোর্টের পাশের সৈকতটির বৈশিষ্ট্য হলো এখান থেকে সুর্য ডোবার খুব সুন্দর একটা দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয়রা ও পর্যটকরা এখানে এসে সুর্যাস্ত উপভোগ করতে চলে আসে।

লাংকাবী এয়ারপোর্টের পাশের সৈকত
সুর্যাস্তের সময় সুর্যের লাল আভায় পুরো সৈকত আর আকাশ এক ভিন্ন সাজ নেয়। ব্যাপারটা খুবই ভাল লেগেছে।

লাংকাবির সূর্যাস্ত
সবাই মিলে এয়ারপোর্টে গিয়ে ঢুকলাম। এরমধ্যে আমাদের প্লেন টিকেটের মধ্যেকার একটা ভুল খুজে পাওয়া গেলো। সেটি হলো আমরা টিকেট কেটেছি সেইদিন থেকে ঠিক একমাস পরের একটা ফ্লাইটের, এবং টিকেট পরিবর্তনের কোন সুযোগ নাই। অতএব, ঐ টিকেট বাদ দিয়ে নতুন করে বেশি দামে আবার টিকেট কেনা হলো। এগারোটায় ফ্লাইট ছিলো, বারোটা নাগাদ কুয়ালালামপুরে পৌছে গেছি। সেখান থেকে বাসে কেএল সেন্ট্রাল এবং হোটেলে পৌছুতে পৌছুতে রাত দুটা। তারপর ঘুম।

No comments: