Monday, October 5, 2015

মালেশিয়া ভ্রমন-৫: তৃতীয় দিন, লাংকাবির পথে

আগের দিনের ক্লান্তির রেশে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে অনেক দেরী হয়ে গেলো। আজকের দিনে তেমন কোন পরিকল্পনা নেই। আশ পাশে খানিকক্ষন ঘুরাঘুরি আর টুকটাক কেনাকাটা শেষে এয়ারপোর্টে চলে যাব, সেখান থেকে দুপুরের পর লাংকাবির ফ্লাইট। এয়ার এশিয়ার প্লেনের টিকেট কাটা হয়েছে।

কুয়ালালামপুরের সাধারন এপার্টমেন্ট ও ট্রান্সপোর্ট


যথারীতি সকালের নাস্তা খাওয়া হলো। ব্যাগগুলো সব আগের দিনের ভাড়া করা সেই গাড়িতে উঠানো হলো। গাড়ির মালিক এয়ারপোর্ট থেকে তার গাড়িটা রিসিভ করে নেবে। শাহিদ ভাই আর ইমরান ভাই ব্যাগসহ গাড়িতে করে এয়ারপোর্টে যাবে, আর আমরা তিনজন হাই-স্পীড ট্রেনে করে যাবো।

লইয়াত নামে একটা মার্কেট থেকে একটা আইপড শাফল কিনলাম, ছোট্ট একটা ডিভাইস, কিন্তু অডিও শোনার জন্যে চমতকার একটা জিনিস। মাত্র আশি ডলার দাম, কিনে ফেললাম। মুনতাসীর ভাই তাঁর ক্যামেরার জন্যে একটা প্রাইম লেন্স কিনলেন।

KLIA Ekspress ট্রেনের প্লাটফরম


আমরা তিনজন কেএল সেন্ট্রালে চলে এলাম। আধঘন্টা বা বিশ মিনিট পর পর এখান থেকে KLIA Ekspress ছেড়ে যায়। টিকেট কেটে প্লাটফরমে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেই ট্রেন চলে এলো। ট্রেনে চেপে বসলাম, জীবনের প্রথম হাইস্পীড ট্রেনে চড়া, প্রায় আশি কিলোমিটার রাস্তা মাত্র বিশ-পঁচিশ মিনিটের মধ্যে পাড়ি দিয়ে আমাদেরকে KLIA2 তে নামি দিলো। ট্রেনটা KLIA2 তে থামার আগে KLIA তেও কিছুক্ষনের জন্যে থামে, যারা ঐ এয়ারপোর্টে যেতে চান তারাও এতে করে আসতে পারেন।

KLIA2 Terminal


এদিকে শাহিদ ভাইরাও চলে এসেছেন। এখানে আমরা সবাই মিলে লাঞ্চ করে প্লেনের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম। প্রায় দুঘন্টা পরে ফ্লাইট। KLIA2 এর বারান্দা থেকে প্লেন স্পটিং এর খুব ভাল ব্যবস্থা রয়েছে। সময় কাটানোর জন্যে তিনশ মি.মি. লেন্সটা নিয়ে বারান্দায় কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে এলাম।

KLIA2
অজু করে যোহর আর আসরের নামাজ একসাথে পড়ে নিলাম। কিছুক্ষন পর সিকিউরিটি এয়ার এশিয়ার চেকইন আর সিকিউরিটি চেকআপ শেষ করে ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। আর বিশ পঁচিশ মিনিটের মধ্যেই ফ্লাইট।

এ প্লেনটায় করে লাংকাবি গিয়েছি
কুয়ালালামপুর থেকে লাংকাবী খুব বেশি সময়ের ফ্লাইট নয়। আকাশ খারাপ থাকাতে আজকে একটু বেশি সময় লেগে গেছে। তাও বড়জোর চল্লিশ-পঞ্চাশ মিনিট। খানিক পশ্চিম থেকে পুবে উড়ে যাওয়াতে বিকেলটা কেমন জানি তাড়াতাড়ি উড়ে চলে গেলো। প্লেন থেকে নেমে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
লাংকাবি এয়ারপোর্ট
এয়ারপোর্ট থেকে বের হবার আগে মাগরিবের নামাজ টা পড়ে নিলাম। এখানকার কর্মকর্তারাও খুব ভালো ও বন্ধুবত্সল। নামাজের জায়গার কথা জিজ্ঞেস করতেই একজন মহিলা কর্মী সাথে করে নিয়ে গিয়ে জায়গাটা দেখিয়ে দিলেন। লাংকাবিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কোন ব্যবস্থা নাই। অতএব, এখান থেকে বেরিয়ে হোটেল কিংবা অন্য কোথাও যেতে হলে আপনাকে ট্যাক্সি ক্যাব অথবা রেন্ট এ কারের শরনাপন্ন হতে হবে। ট্যাক্সি ক্যাব অনেক বেশি এক্সপেনসিভ, রেন্ট এ কার তুলনামূলক সস্তা। এয়ারপোর্টে বিভিন্ন রেন্ট এ কারের এজেন্সি আছে, এছাড়াও বাইরে অনেকেই নিজের গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করে ভাড়া দেবার জন্যে। আমরা ওরকম একজনের কাছ থেকে চব্বিশ ঘন্টার জন্যে একটা গাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম।
লাংকাবি এয়ারপোর্টের বাইরের দৃশ্য
লাংকাবিতে আমরা আগে থেকে কোন হোটেল বুক করিনি। গাড়ি নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে তেমন ভাল কোন হোটেল পাচ্ছিলাম না। শেষে একটা পেলাম কিন্তু তারা আমাদেরকে দুদিনের জন্যে ভাড়া দিতে রাজী হচ্ছিলোনা। সেখান থেকে বেরিয়ে মুনতাসীর আর সিয়াম ভাই একটা বুদ্ধি করলেন। ইন্টারনেটে হোটেলটার লিস্টিং খুজে বের করলেন একটা হোটেল বুকিং সার্ভিসের। তারপর সেখান থেকে অনলাইনে দুদিনের জন্যে বুকিং দিয়ে দিলেন। রিসিপ্ট ডাউনলোড হলো, এবার প্রিন্ট করে হোটেলে দেখালেই কেল্লা ফতে। আশপাশে একটা মার্কেট খুজে নিয়ে প্রিন্ট করে নিয়ে আবার ফিরে এলাম। বুকিং কাউন্টারের রিসিপশনিস্ট মেয়েটা আমাদের চালাকি দেখে রাগে গড়গড় করতে থাকলেন, উচ্চস্বরে কথা বলতে লাগলেন। সিয়াম ভাই আর মুনতাসীর ভাই হোটেলের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে কম্প্লেইন করার হুমকি দিতেই আরেকজন কর্মকর্তা এসে আমাদেরকে খুবই বিনয়ের সাথে রুম দেখিয়ে দিলেন। পরের দুদিনে আর কোন ঝামেলা হয়নি।

No comments: