Thursday, June 4, 2015

মালেশিয়া ভ্রমন - ৪ : কুয়ালালামপুর (দ্বিতীয় দিন) (Cyberjaya, Putrajaya, Genting Highlands, Batu Caves)

কার রেন্টাল:
রেন্টেড কার

আপনি যদি ড্রাইভিং জানেন আর ধৈর্য ধরে জিপিএস ট্রাকিং মোবাইল এপ এর ইন্সট্রাকশন গুলো ভালভাবে রেসপন্স করতে পারেন তবে কার রেন্টাল থেকে একটা গাড়ি ভাড়া নিয়ে কুয়ালালামপুর ঘুরে বেড়ানোর খরচ এক ধাক্কায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ বানিয়ে নিতে পারেন। কুয়ালালামপুরের ট্যাক্সি ভাড়া পুরোপুরি আকাশছোয়া, আর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সহজলভ্য মনে হয়নি। সেই হিসেবে মাত্র ১০০ রিঙ্গিতের মধ্যেই আপনি চাইলে একটা গাড়ি ৬/১২ বা ২৪ ঘন্টার জন্যে ভাড়া নিয়ে নিতে পারেন।

কার রেন্টালের জন্যে অনেকগুলো কোম্পানি আছে কুয়ালালামপুরে। তার মধ্যে এয়ার এশিয়া ও মে ফ্লাওয়ার অন্যতম। কুয়ালালামপুরের বিমান বন্দর থেকে এয়ার এশিয়ার গাড়ি ভাড়া করা যায়। আর শহরের মধ্যে গাড়ি ভাড়ার জন্যে মে ফ্লাওয়ার সবচে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। এদের অনেকগুলো অফিস আছে, যেকোন টি থেকে আপনি গাড়ি ভাড়া নিতে পারেন। গাড়ি ভাড়া সিদ্ধান্ত নেবার আগে যে ব্যপারটি আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো গাড়ি যেখান থেকে নিচ্ছেন, তা ঠিক সেখানেই ফেরত দিতে হবে। গন্তব্য থেকে ফিরে আসার সুযোগ না থাকে তবে ট্যাক্সি বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টই সবচে ভাল পরিবহন হবে আপনার জন্যে। আর গাড়ি ভাড়া নেবার সময় আপনার যেসব জিনিস জমা দিতে হবে সেগুলো হচ্ছে:
১. পাসপোর্ট,
২. ড্রাইভিং লাইসেন্স
৩. ক্রেডিট কার্ড

এ লিস্টের কোন একটিও যদি আপনার কাছে না থাকে তবে গাড়ি ভাড়া পাওয়া যাবে না। বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়া বা কোন ভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করে আরো অল্প ভাড়ায় ও কম শর্তে গাড়ি ভাড়া নেয়া যেতে পারে।

সাইবারজায়া
একটা ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া নিতে আমরা ট্যাক্সিতে করে সাইবার জায়ায় এসেছিলাম। এ জায়গাটি মূলত কুয়ালালামপুরের প্রধান স্টুডেন্ট জোন। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই এখানে অবস্থিত। ছাত্রছাত্রীদের জন্যে থাকার জন্যে আবাসিক এলাকাও রয়েছে এখানে। এছাড়াও বড় কিছু কম্পিউটার প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে।

পুত্রাজায়া
হলিউডি কায়দায় পুত্রাজায়া শহরের সাইনবোর্ড

কুয়ালালামপুরের জনবহুলতার কারনে গত দুই দশক ধরে মালেশিয়ান সরকার তাদের রাজধানী পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী করেছে পুত্রাজায়া নামক আনকোরা একটি শহর। সাইবারজায়ার খুব কাছাকাছি এই শহরটি অনেকটা বদ্বীপের মত। একদিক থেকে একটি সেতু পার হয়ে শহরে প্রবেশ করতে হয়, শহরটিতে কোন আবাসিক অঞ্চল আছে বলে মনে হয়নি, চারদিকে অনেক উঁচু উঁচু ইমারত থাকলে আশপাশে মানুষের দেখা পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও সরকারী গুরুত্বপূর্ন অফিসের জন্যে ইমারত গুলো তৈরী করা হয়ে থাকলেও বোধহয় এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।



চমতকার একটা লেক দেখতে পেলাম, লেকের চারপাশে কিছু চমতকার স্থাপনাও দেখলাম। লেকের যেপাশে গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা রয়েছে তার ঠিক উল্টো পাশে আকাশ ছোয়া কিছু ইমারতও রয়েছে।





রিসোর্টের মত একটা স্থাপনাও চোখে পড়লো তবে এটা আসলেই কোন রিসোর্ট কিনা তা জানতে পারিনি। পুত্রাজায়ায় অত্যাধুনিক একটি কনভেনশন সেন্টার রয়েছে যেটিতে একবার একটি ন্যাম সম্মেলন হয়েছিলো যেটি আসলে বাংলাদেশে হবার কথা ছিলো।




পুরো শহরটি ফাঁকা মনে হলেও শেষ পর্যন্ত কিছু মানুষের দেখা পাওয়া গেলো পুত্রা মসজিদের কাছে এসে। স্থানীয় ও বিদেশী অনেক টুরিস্টই এখানে এসেছেন মালেশিয়ান প্রধানমন্ত্রির কার্যালয় ও পুত্রা মসজিদের অনবদ্য স্থাপনাশৈলী উপভোগ করার জন্যে। এখানে পৌছুতে পৌছুতে জোহরের নামাজের জামাতের সময় পার হয়ে গিয়েছিলো, নয়তো দারুন এ মসজিদে জামায়াতে নামাজ পড়ার সৌভাগ্য হয়ে যেত। তারপরও যোহর আর আসরের নামাজ কসর আদায় করে নেয়া গেলো। এ মসজিদে একজন টুরিস্ট মুসল্লির জন্যে অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

পুত্রা মসজিদের ভেতরের অংশ


প্রথমে ঢোকার সময়ই আপনাকে অভিবাদন জানানোর জন্যে আসবেন মসজিদের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি যার কাছ থেকে মসজিদ সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। ওযু করার জায়গাটিতে গোসল করার ব্যবস্থাও রয়েছে। তাছাড়া টুরিস্ট যদি সতর ঢাকার উপযোগী পোষাক না পরে আসে তার জন্যে একটি স্টল থেকে সাময়িক ব্যবহারের জন্যে পরিচ্ছন্ন লম্বা এক ধরনের কুর্তা ও লুঙ্গির ব্যবস্থা রয়েছে। লুঙ্গির ব্যবস্থা অবশ্য্ মালেশিয়ার সব মসজিদ আর ছোট নামাজের স্থানগুলোতেও রয়েছে।



মালেশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
পুত্রা মসজিদের ডানপাশেই অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

গেন্টিং হাইল্যান্ডস
গেন্টিং হাইল্যান্ডের রিসোর্ট এলাকার একটি মডেল

কুয়ালালামপুর থেকে কাছে সেলাঙর প্রদেশের পাহাড়ি এলাকা গেন্টিং হাইল্যান্ডস। এখানে পাহাড়ের উপর বিশাল আকারের একটি রিসোর্ট শহর তৈরী করা হয়েছে। মূলত জুয়াড়িদের জন্যে তৈরী এ জায়গাটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে আসেন। কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় একশ মাইল দুরে অবস্থিত এ জায়গাটি আসার জন্যে বিশেষ বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া গাড়ি থাকলে তো কথাই নেই।

গেন্টিংএর কেবল কার

গেন্টিং এর পাহাড়টি অনেক ঢালু। সাধারন গাড়িতে করে এখানে ওঠাটা একটু কষ্ট সাধ্য। এই অংশের জন্যে বিশেষ বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। অপেক্ষাকৃত নিচু পাহাড়ের ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে সেই বাসে কিংবা কেবল কারে করে গেন্টিং হাইল্যান্ডে রিসোর্টটি আসা যায়।

ফারস্ট ওয়ারলড হোটেল

নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচে বেশি ধারনক্ষমতার হোটেল হিসেবে বিখ্যাত ছবিতে দেখানো রঙ্গীন ফার্সট ওয়ার্লড হোটেলটি। এখানে জুয়াড়িদের জন্যে রয়েছে ক্যাসিনো, এছাড়াও সাধারন দর্শনার্থীদের জন্যে চমতকার সব আয়োজন রয়েছে বিল্ডিংটিতে।

ফার্সট ওয়ার্লড হোটেলের কনভেনশন হলে প্রতিদিনই কোন না কোন আয়োজন থাকে দর্শনার্থীদের জন্যে। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত এন্টারটেইনারদের এসব আয়োজন উপভোগ করার জন্যে কোন ফি দিতে হয়না।

বাটু কেইভস


গেন্টিং থেকে ফিরতে ফিরতে যথেষ্ট রাত হয়ে গেল। ফেরার পথে বাটু কেইভস এ যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো। কুয়ালালামপুরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলো এই বাটু কেইভস। গেন্টিং থেকে কুয়ালালামপুরে ফেরার পথেই বাটু কেইভস পরে। তাই এখানটা ঘুরে যেতে খুব বেশি সময় নষ্ট হলো না।





এটি মূলত তামিল দের একটি তীর্থ স্থান। প্রতিদিনই তামিলগন এখানে প্রার্থনা ও নিজেদের সম্পদের শুভকামনার গুরুদের কাছে আসেন।

বাটু কেইভস থেকে হোটেলে ফিরে সেদিনের মত ঘুরাঘুরি শেষ হলো। কুয়ালালামপুরের চারপাশের সবগুলো দর্শনীয় জায়গা ও শখানেক হোটেল ও রেস্তোঁরায় ঘুরাঘুরির জন্যে আরেকটি চমতকার সার্ভিস চালু রয়েছে এখানে। একে বলা হয় "হপ ইন হপ অফ" বাস সার্ভিস। দোতলা ছাদখোলা এক ধরনের বাস যেগুলোর অনেকগুলো স্টপেজ রয়েছে। যেকোন একটি স্টপেজ থেকে বাসে উঠে টিকেট সেই টিকেট দিয়ে একদিন বা দুইদিন ধরে কুয়ালালামপুর ঘুরাঘুরি করা যায়। নির্ধারিত একদিন বা দুইদিনে যেকোন সময় যেকোন স্টপেজ থেকে বাসে চড়ে পরের গন্তব্যে যাওয়া জন্যে আর কোন টিকেট লাগবে না। এই লিংক থেকে এ সার্ভিস সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন: http://www.myhoponhopoff.com