Saturday, May 16, 2015

মালেশিয়া ভ্রমন - ১: ভিসা পাওয়া


ডিশ চ্যানেলগুলোয় ট্রাভেলারদের ভ্রমনের ডকুমেন্টারি দেখে দেখে মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে যে আমিও এদের মত হয়ে যাই। ট্রাভেলিং আমার স্বভাবের মধ্যে আছে কিনা জানি না, তবে যখন কোথাও বেড়াতে যাই তখন সময়টা আমার খুবই ভাল কাটে। ঘর থেকে বেরিয়ে ত্রিশ থেকে চল্লিশ কিলোমিটার পার হলেই মনে হয় যেন বন্দী জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি, কিন্তু আবার একদিন দুদিন পার হলেই নিজের ঘরের প্রতি তীব্র আকর্ষন অনুভব করি।

একলা একলা ভ্রমন জিনিসটা অনেকেই পছন্দ করেন, কিন্তু আমি সেটা পারি না। একজন বোকা সোকা টাইপের মানুষ হওয়ায় কোথা থেকে সব আয়োজন শুরু করবো, কোথায় থাকব, কি করব, কি খাব এসব কিছু মাথার মধ্যে তালগোল পাকিয়ে যায়, নার্ভাস ব্রেকডাউনে পড়ে যাই। দেশ ছেড়ে বিদেশে একলা একলা রওনা দেয়া তো স্বপ্নেরও বাইরে। এর আগে দেশের বাইরে বলতে "নেপাল" গিয়েছিলাম, সেই যাত্রায় সহযাত্রী ছিল তিনজন, তাঁরাই সবকিছু আয়োজন করেছিলো। মালেশিয়া যাত্রায় কোন সহযাত্রী পাওয়া গেলনা, কিন্তু তারপরও কেমন করে যেন সবকিছু গুছিয়ে নিজে একলা একলা মালেশিয়া রওনা দিয়ে দিলাম।

এত জায়গা থাকতে মালেশিয়ায় কেন? বছর খানেক হলো বেশ কিছু বন্ধু পড়াশোনার জন্যে মালেশিয়ার সারাওয়াক প্রদ্রেশের কুচিং শহরে গিয়েছেন। প্রথমত, তাঁদের দাওয়াতেই মালেশিয়ায় ভ্রমনে আগ্রহের সূচনা। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশের ভিসা সহজে পাওয়া যায় তারমধ্যে অন্যতম হলো মালেশিয়া। তৃতীয়ত, মালেশিয়া একটি আধুনিক ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যা খুব তাড়াতাড়ি একটি উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশি হিসেবে আমার অনেক কিছু শেখার আছে বলে সেখানে যাবার ব্যাপারে আগ্রহটা প্রবল হয়েছে। চতুর্থত, আমার মত গরীব ট্রাভেলারের জন্যে সস্তায় উন্নত দেশ দেখে আসার সুযোগ আর কোথাও নেই।

ভ্রমনের পরিকল্পনাটা শুরু হয়েছে যাত্রার প্রায় তিন চারমাস আগে থেকেই। সহযাত্রী কাউকে পাওয়া যায় কিনা, তাদের জন্যে অপেক্ষা আর মানসিক ও আর্থিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে করতেই কেমন করে যেন তিনমাস চলে গেল। তারপর, অন্যদের জন্যে আর অপেক্ষা না করে ভিসার জন্যে আবেদন করে ফেললাম। মালেশিয়ার ভিসা অপেক্ষাকৃত সহজে পাওয়ার সুযোগ থাকলেও আসলে তা খুব বেশি সহজ নয়। তাদের ভিসার আবেদনের জন্যে কিছু শর্ত রয়েছে। মালেশিয়া ভিসা দেবার ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট, ওয়ার্কার ও ব্যবসায়ীদেরকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা ইনভাইটেশন বা কাগজপত্র থাকে যা ভিসা আবেদনের সাথে যুক্ত করে দিতে হয়। ট্রাভেলার বা ভ্রমনেচ্ছুদের ক্ষেত্রে শুধু অবস্থাপন্ন ব্যবসায়ী ও বড় চাকরিজীবিদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

ভ্রমনের জন্যে ভিসার আবেদন মালেশিয়ান এম্বাসী কখনোই সরাসরি গ্রহন করে না। ভিসার আবেদনের জন্যে তাদের পছন্দের বেশ কিছু ট্রাভেল এজেন্সির শরনাপন্য হতে হবে। এম্বাসির রেজিস্টার্ড ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে প্রায় বিশ থেকে তিরিশটি, ভিসার জন্যে আপনাকে অবশ্যই এদের মধ্যে যে কোন একটি এজেন্সীর মাধ্যমে ভিসার আবেদন জমা দিতে হবে

চাকরিজীবি ভ্রমনকারীর ক্ষেত্রে তার অফিসের ছাড়পত্র, চাকরীর নিয়োগপত্রের কপি ও ব্যাক্তিগত ব্যাংক একাউন্টের তিনমাসের স্টেটম্যান্ট ভিসা আবেদনের সাথে যুক্ত করে দিতে হয়। এক্ষেত্রে চাকরীজীবির পদ, বেতন, ছুটির দিনসংখ্যা ও ব্যাক্তিগত ব্যাংক একাউন্টের ব্যালেন্সের পরিমানের উপর ভিত্তি করে মালেশিয়ান এম্বাসী ভিসা দিতেও পারে, কিংবা আবেদন বাতিল করে দিতে পারে। আবার ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্যবসায় ব্যবহৃত ব্যাংক একাউন্টের কমপক্ষে তিনমাসের স্টেটম্যান্ট ও সলভেন্সি লেটার জমা দিতে হয় এবং ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের সিল সংশ্লিষ্ট লেটার প্যাডে ভিসার জন্যে লিখিত আবেদন করতে হয়।

এদিকে আমি পড়েছি বিপাকে। আমি তো ব্যবসায়ীও না, আবার চাকরিজীবিও না। বাবা-মার সাথে থাকি, বাবাই সংসার চালায়। আমি ছোটখাট কিছু সফটওয়ার ডেভলপমেন্ট আউটসোর্সিংয়ের কাজ করি, তার সঞ্চয় দিয়ে যদিও মালেশিয়ার ট্রিপের খরচ হয়ে যাবে। কিন্তু কোন ক্যাটাগরিতেই আমার ভিসার রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল হচ্ছে না। এজন্যে ভাগ্যের উপর ভরসা রেখে ভিসা আবেদনের প্রস্তুতি শুরু করে দিলাম। এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য ও শ্রম দিয়ে সাহায্য করেছে বন্ধু রনি(*)।

রনির কথা মত বাবার কাছ থেকে তাঁর ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি, তাঁর ব্যাংক একাউন্টের কয়েকমাসের স্টেটম্যান্ট, সলভেন্সি স্টেটম্যান্ট আর একটা লিখিত ভ্রমনের ব্যয়ভার গ্রহন সংক্রান্ত একটা লিখিত চিঠি নিয়ে নিলাম। গত বছরের শেষ কয়েক মাসের বিভিন্ন প্রজেক্টের বিল সব একসাথে পেয়েছিলাম, সেগুলো সবই ব্যাংকে আমার একাউন্টে রাখা ছিলো আর বাবাও কিছু টাকা জমা দিয়েছিলেন তার সব মিলিয়ে ভাল একটা সংখ্যা দাঁড়িয়েছিলো। আমার অ্যাকাউনটের হিসেবটাও ব্যাংকের কাছ থেকে স্টেটম্যান্ট হিসেবে নিয়ে নিলাম। তারপর ভ্রমনের কারন জানিয়ে ভিসার একটা আবেদন লিখে, ভিসার ফরম পুরন করে, ছবিসহ একসাথে করে নিয়ে পাসপোর্টসহ রনির কাছে দিয়ে এলাম। রনিই অনেক কষ্টে তার পরিচিত এজেন্টদের কাছে আবেদনটা জমা দেয়ার ব্যবস্থা করলো। পরিচিত বেশ কয়েকজন এজেন্ট আবেদনটা গ্রহন করতে রাজী হয়নি, পরে একটা প্রতিষ্ঠান অনেক রিকোয়েস্টের পর শর্তসাপেক্ষে আবেদনটা প্রসেস করতে রাজী হয়। ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি আবেদনই গৃহীত হবার ব্যপারে সম্পুর্নভাবে সংশ্লিষ্ট এমবাসির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে, ভিসা পাওয়াটা সবার জন্যেই অনিশ্চিত, আর আমার আবেদনপত্রটা বাতিল হয়ে যাবার ব্যপারে আমি পুরোপুরিই নিশ্চিত ছিলাম, কিন্তু ভাগ্য ভাল, মালেশিয়ান এম্বাসী প্রায় এক সপ্তাহ পরে তিনমাসের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসাসহ আমার পাসপোর্টটা ফেরত দিয়েছে। ভিসা পেয়ে ভ্রমনের প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্য হলো, এবার বাকি রইলো টিকেট, হোটেল আর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা। উল্লেখ্য ভিসা পাবার প্রায় চল্লিশ পরে আমি মালেশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলাম।


------------------------------------- ------------------------- --------------------------------
* যারা মালেশিয়ায় বেড়াতে কিংবা পড়তে বা অন্য কোন ভিসায় যেতে আগ্রহী, তাঁদেরকে বলব কনসাল্টেন্সির জন্যে আপনারা চাইলে THR এর কাছে যেতে পারেন। এ প্রতিষ্ঠান মালেশিয়া ছাড়াও যে কোন দেশের ভিসা, টিকেটিংএর ব্যপারে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের মাধ্যমে আপনাকে সহায়তা করতে পারবে। তাদের দেয়া তথ্য হয়ত আপনার বিদেশে বেড়াতে কিংবা যে কোন ভিসার ব্যাপারে অযাচিত হয়রানীর হাত থেকে বাচাতে পারে। ঢাকার বনানীতে ওল্ড ডিওএইচএস এর চমতকার লোকেশনে তাদের অফিস, তাদের সার্ভিস গ্রহন না করেও শুধুমাত্র পরামর্শের জন্যে সেখানে যেতে পারেন। সাধারন তথ্য ও পরামর্শের জন্যে ওরা হয়তো কোন চার্জ তো করবেই না, বরং তাদের অফিসে চমতকার চা বানানো হয়, ফ্রিতে তাও খেয়ে আসতে পারবেন।

* THR International Immigration Service
ফেসবুক পেইজ: https://www.facebook.com/thr.immigration
স্বত্বাধিকারী: তামিম হোসেন (ফেসবুক প্রোফাইল: https://www.facebook.com/thrbdnet)
যোগাযোগ:
  • ফোন: 01791028730
  • House # 05, (2nd Floor), Flat # 2C, Road # 04, Old DOHS, Banani
  • Dhaka Dhaka 1213
  • Bangladesh


No comments: