Friday, November 6, 2015

মালেশিয়া ভ্রমন-৮: লাংকাবির শেষ দিন (ষষ্ঠ দিন)

লাংকাবির মূল প্লান সব মোটামুটি খতম। আজকে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে শেষে রাতে আবার কুয়ালালামপুরে ফেরত যাব। সকালে নাস্তা করে এসে প্রথমে ব্যাগগুলো গুছিয়ে নেয়া হলো। তারপর হোটেল থেকে চেকআউট করে সব জিনিসপত্র আগের সন্ধ্যায় ভাড়া করা গাড়িতে তুলে নেয়া হলো। লাংকাবীর সর্বশেষ আকর্ষন "সেভেন ওয়েলস" এ যাওয়া হবে, সেখানে দুপুর পর্যন্ত থেকে লাঞ্চ সেরে আস্তে ধীরে এয়ারপোর্টের দিকে চলে যাওয়া হবে। এয়ারপোর্টের পাশেই চমতকার সীবিচ সেখানে সূর্যডোবাটুকু উপভোগ করে এয়ারপোর্টে ঢুকে পড়া হবে।

সেভেন ওয়েলস এর কার পার্কিং, লাংকাবী


সেভেন ওয়েলস জায়গাটা একটা পাহাড়ের চুড়ায়। অনেক উঁচু এই পাহাড়ে উঠার জন্যে সিড়ি আছে, কিছুদুর উঠার পর সিড়িটা দুদিকে ভাগ হয়ে গেছে। একদিকে একটা ঝর্না রয়েছে, আর সোজা উপরে গেলে সেভেন ওয়েলসের মূল উত্পত্তিস্থল। সিড়ির শুরুর অংশের চত্বরে বিভিন্ন দোকান পাট রয়েছে।

বামে গেলে বড় একটা ঝর্নার দেখা মিলবে, আর উপরে সেভেন ওয়েলস
প্রথমে সবাই মিলে বামের ট্রেকটা ধরলাম। বাধানো রাস্তা আছে। কিছুদুর গিয়ে আবার নিচের দিকে নেমে গেছে। সেখানে চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা একটা ঝর্না রয়েছে। এ সময় ঝর্নায় পানি কম, কিন্তু গভীরতা আর যতটুকু চওড়া তাতে মনে হয়েছে কখনো কখনো হয়তো ঝর্নাটা খুব উত্তাল হয়ে উঠে।

সেভেন ওয়েলসের ঝর্না
গত কয়েকদিনের টানা ভ্রমনে সবাই যথেষ্ট ক্লান্ত। শুধুমাত্র শাহিদ ভাই ছাড়া, উনি আমাকে নিয়ে সেভেন ওয়েলস জয় করতে ছুটলেন। জায়গাটা অনেক উঁচুতে। আর প্রচন্ড ভ্যাপসা আবহাওয়ায় শরীরের পানি সব খুব তাড়াতাড়ি ঘাম হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বিশাল আকারের কিছু গাছ দেখলাম।
পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা বিশাল বৃক্ষ
চুড়ায় উঠে আবার হতাশ হতে হলো। এখানেও শুকনো মওসুম চলছে, ওয়েলসের মধ্যে কোন পানি টানি নেই। যদ্দুর মনে হয়, কখনো কখনো এ জায়গায় এত পানি থাকে যে তা সাতটি আলাদা স্রোত ধরে নিচে নেমে যায়, সেই থেকে এর নাম সেভেন ওয়েলস, কিন্তু একটা স্রোতও চোখে পড়লো না।
সেভেন ওয়েলস
জায়গাটা খুবই স্যাঁতস্যাতে এবং পিচ্ছিল। পাশে সাবধানবানী ছিলো, তাই সাবধানে সাবধানে পা চালানোর চেষ্টা করলাম, তবু পিছলা খেয়ে কোনমতে তাল সামলাতে পারলাম। ভাগ্যিস স্রোত নেই, নইলে স্রোতে টেনে নিয়ে যেত।
সেভেন ওয়েলস
নিচে নেমে গিয়ে কিছু খাওয়া দাওয়া করা হলো। চত্বরে নারিকেলের ডাবের চমতকার একটা বরফকুচি দেয়া পানীয় পাওয়া যায় সেটা খেলাম। তারপর কিছুক্ষন বসে জিরিয়ে নিয়ে আবার গাড়িতে চড়ে বসলাম। গাড়িতে এদিক ওদিক খানিক্ষন ঘোরাঘুরি শেষে আরেকটি সৈকতে পৌছুলাম। সেখানেও চমতকার একটা চত্বর আছে, আর এখান থেকে দুরে অনেকগুলো দ্বীপ দেখতে পাওয়া যায়।

কুয়াহ এর কাছাকাছি একটি সৈকত
শেষ বিকেলে এয়ারপোর্টের কাছে চলে এলাম। এয়ারপোর্টের পাশের সৈকতটির বৈশিষ্ট্য হলো এখান থেকে সুর্য ডোবার খুব সুন্দর একটা দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয়রা ও পর্যটকরা এখানে এসে সুর্যাস্ত উপভোগ করতে চলে আসে।

লাংকাবী এয়ারপোর্টের পাশের সৈকত
সুর্যাস্তের সময় সুর্যের লাল আভায় পুরো সৈকত আর আকাশ এক ভিন্ন সাজ নেয়। ব্যাপারটা খুবই ভাল লেগেছে।

লাংকাবির সূর্যাস্ত
সবাই মিলে এয়ারপোর্টে গিয়ে ঢুকলাম। এরমধ্যে আমাদের প্লেন টিকেটের মধ্যেকার একটা ভুল খুজে পাওয়া গেলো। সেটি হলো আমরা টিকেট কেটেছি সেইদিন থেকে ঠিক একমাস পরের একটা ফ্লাইটের, এবং টিকেট পরিবর্তনের কোন সুযোগ নাই। অতএব, ঐ টিকেট বাদ দিয়ে নতুন করে বেশি দামে আবার টিকেট কেনা হলো। এগারোটায় ফ্লাইট ছিলো, বারোটা নাগাদ কুয়ালালামপুরে পৌছে গেছি। সেখান থেকে বাসে কেএল সেন্ট্রাল এবং হোটেলে পৌছুতে পৌছুতে রাত দুটা। তারপর ঘুম।

Tuesday, November 3, 2015

মালেশিয়া ভ্রমন-৭: আইল্যান্ড হপিং (পঞ্চম দিন)

ভোর হতেই সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। আজকে লাংকাবীর দ্বীপপুঞ্জে বোটে করে ঘোরাঘুরি করা হবে। প্রস্তুতি নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম, কিছুক্ষনের মধ্যে একটা মাইক্রোবাস এসে আমাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে গেল সাগরপাড়ে। সেখানে অনেকগুলো বোট অপেক্ষা করছে পর্যটকদের জন্যে।

পর্যটকদের অপেক্ষায় লাংকাবি আইল্যান্ড হপিং বোট

আমাদের জন্যে নির্ধারিত বোটটায় উঠে পড়লাম। আইল্যান্ড হপিং লাংকাবির অন্যতম একটি পর্যটন আকর্ষন, মালেশিয়ান ও নন মালেশিয়ান সবাই এখানে এলে সুযোগটা হাতছাড়া করে না। আমাদের বোটে আমরা ছাড়াও ফুটফুটে দুটো শিশু কন্যাকে নিয়ে একটি মালেশিয়ান দম্পতি উঠেছিলো। তাঁরাও প্রথমবার লাংকাবিতে এসেছেন, তাঁদের সাথে একসাথে সময়টা ভালই কেটেছে।

বোট ছাড়ার পর সাগরেই কিছুক্ষনের জন্যে বোটটা থামানো হলো। বোটম্যান আমাদেরকে বাঁপাশে থাকা একটা দ্বীপ দেখালো। দ্বীপটার নাম ভুলে গেছি, তবে দ্বীপটা দেখলে মনে হয় যেন একজন প্রেগন্যান্ট মহিলা শুয়ে আছেন। একারনে এ দ্বীপকে অনেকে প্রেগন্যান্ট ল্যাডি আইল্যান্ড বলে থাকে।

প্রেগন্যান্ট লেডি আইল্যান্ড
বোটে স্টার্ট দিয়ে বোটম্যান কিছুদুর নিয়ে আরেকটি দ্বীপে নিয়ে গিয়ে থামালো। দ্বীপটিতে লাংকাবী দ্বীপপুঞ্জের উদ্ভব ও মৃত্তিকা কাঠামো নিয়ে একটি প্রদর্শনির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে প্রায় ঘন্টা খানেক থাকা হয়েছিলো।

দ্বীপের ল্যান্ডিং জেটি থেকে
 এ দ্বীপে ভীড় অনেক। একসাথে কয়েক হাজার পর্যটককে নামতে দেখলাম। বেশিরভাগই বোটে এসেছেন।

জিওফরেস্ট পার্ক দ্বীপের ল্যান্ডিং জেটি
দ্বীপের ভেতরে একটা চমতকার লেক আছে। সেখানে কৃত্রিম ও অকৃত্রিম ভাবে একটা চমতকার পুল বানানো হয়েছে। চারপাশে উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে একটা প্রাকৃতিক সুইমিং পুল, পুরোপুরি ভিন্ন এক জগত।

প্রাকৃতিক সুইমিং পুল
এ দ্বীপ ছেড়ে আবার বোট তার যাত্রা শুরু করলো। এবারের গন্তব্য লাংকাবির অন্যতম প্রধান আকর্ষন "ঈগল'স নেস্ট"। কিন্তু পথিমধ্যে দেখা দিলো বিপাক, আমাদের বোট গেলো নষ্ট হয়ে। নষ্ট বোট নিয়ে প্রায় আধঘন্টা ভেসে বেড়ানোর পর সাহায্য এসে পৌছুলো, আরেকটি বোট এসে আমাদের বাকি গন্তব্যগুলোয় নিয়ে গেলো।

মোড়ের ওপাশ থেকে আসা একটি জাহাজ, হঠাত আমাদের বোটটা দেখে সময়মত মোড় নিয়ে ঘুরে যেতে পেরেছিলো


মূলত লাংকাবি মানেই হলো "ঈগল পাখি"। পুরো দ্বীপপুঞ্জেই ঈগলের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ছিলো, তা থেকেই দ্বীপপুঞ্জের নাম লাংকাবি হয়েছে। তবে এখন ঈগল পাখিগুলোকে বিশেষ উপায়ে দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপে এনে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন বেলা করে ঈগলের জন্যে ঐ দ্বীপটির আশপাশের সাগরে তাজা মাছ খাবার হিসেবে দেয়া হয়, যা ঈগলগুলো শিকার করে খেতে পারে।। ফলে ঈগলগুলোকে শিকারের অভাবে এ দ্বীপ ছেড়ে দুরে কোথাও যেতে হয়না।
বোট দেখে খাবারের আশায় খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়া একটি ঈগল



দ্বীপের গাছগুলোর মগডালে এরকম অসংখ্য ঈগলকে বসে থাকতে দেখা যায়
ঈগল'স নেস্টের পর আমাদের সর্বশেষ গন্তব্য "বেরাস বাসাহ আইল্যান্ড"। এক কথায় চমতকার একটা আইল্যান্ড এটি, ছবির মত সুন্দর।

বেরাস বাসাহ আইল্যান্ডের সৈকত

স্নোরকেলিং সহ চমতকার চমতকার কিছু অভিজ্ঞতা নিতে পারেন এ দ্বীপে। সৈকতের পাশেই সব ধরনের যন্ত্রপাতি স্তুপ করে রাখা আছে, নির্দিষ্ট রেন্টের বিনিময়ে আপনি সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন, এবং এক্সপার্ট সাহায্যের জন্যে যথেষ্ট লোকবলও সেখানে রয়েছে।
স্নোরকেলিং গিয়ার
বেরাস বাসাহ এ প্রায় দুটা ঘন্টা থাকার পর সেখান থেকে আমরা সোজাসুজি বোটে করে মেইন আইল্যান্ডে ফিরে এলাম। গাড়িতে করে আমাদেরকে হোটেলে পৌছে দেয়া হলো। হোটেলের সুইমিং পুলে আরো ঘন্টাখানেক দাপাদাপি শেষে হোটেলরুমে গেলাম।

আমাদের হোটেলের ঠিক সামনেই একটা মিউজিয়ামের মত রয়েছে। সাগরের বিভিন্ন প্রানীদেরকে এখানে রাখা হয়েছে প্রদর্শনীর জন্যে। লাঞ্চের পর ঢুকে পড়লাম সেখানে। একুরিয়ামে রাখা চমতকার আর আজগুবি হাজারখানেক প্রানী দেখার সুযোগ হলো।

সমুদ্র বসবাসকারি আজগুবি একটা প্রানী

জীবন্ত পাখি

বিশালাকার একুরিয়ামের অনেক মাছই মানুষের সাইজের চাইতেও বড়


সিল আর পেঙ্গুইনও রাখা আছে বিশেষভাবে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রিত একুরিয়ামের ভেতরে


পুরো বিকেলটা হোটেল রুমেই কাটিয়ে দেয়া হলো। সন্ধ্যায় আবার আরেকটি গাড়ি ভাড়া নেয়া হলো। সেটিতে করে চলে গেলাম "কুয়াহ" এ। লাংকাবির মেইন টাউন ও জেটি সেখানেই, সেখানে ঈগলের একটা বিরাট ভাস্কর্য রয়েছে, সেখানে গিয়ে বেশ খানিকক্ষন কাটিয়ে পরে আবার হোটেলে ফেরত গেলাম।


আরো ছবির জন্যে ক্লিক করুন এই লিংকে: https://www.flickr.com/photos/uddinm/albums/72157650036378044

Wednesday, October 28, 2015

মালেশিয়া ভ্রমন - ৬: লাংকাবিতে ঘোরাঘুরি, কেবল কার আর সীফুড ডীনার ( চতুর্থ দিন )

গতরাতে লাংকাবীতে পৌছে অনেক রাত পর্যন্ত সাগরপাড় আর রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি করা হয়েছে। এজন্যে ঘুমাতে দেরী হয়েছে, তাই আজকে ঘুম থেকে উঠতেও দেরী হয়ে গেলো। হাতমুখ ধুয়ে সবাই মিলে নাস্তা খেতে বেরুলাম। আমি ছাড়া সবাইই অনেকদিন বর্নিও তে থাকে, তারা অনেকদিন পর কুয়ালালামপুরে এসে দেশী খাবার খেতে পেয়ে মজা পেয়ে গেছে, তাই ওরা এখানেও বাংলাদেশী কিংবা ভারতীয় খাবারের সন্ধানই করতে চাইলো। অনেক খুজে একটা ভারতীয় রেস্টুরেন্ট পেলাম, তার সার্ভিং বন্ধ হয়ে গেছে। পরে মালেশিয়ান ট্রেডিশনাল একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডাল-পরাটা টাইপের কি যেন খেলাম, খুব বেশি সুবিধে লাগলো না।

লাংকাবির একটি থাই রেস্টুরেন্ট, রাস্তার পাশে এরকম অসংখ্য রেস্টুরেন্ট রয়েছে

আগের দিনের ভাড়া করা গাড়িটা আছে, শাহিদ সেটায় করে নিয়ে পুরো লাংকাবি চক্কর দেয়ালো আমাদেরকে। দ্বীপের এ মাথা থেকে ওমাথা পুরোটা কয়েকবার দেখে ফেললাম, চমতকার ও আধুনিক একটা দ্বীপ। পুরো দ্বীপে অনেক রিসোর্ট রয়েছে এবং সেগুলোকে এমনভাবে জায়গা দেয়া হয়েছে যে এখানকার সাধারন মানুষদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যাতে খুব একটা প্রভাবিত না হয়। ন্যাটিভদের আবাসিক এলাকাগুলোতে এখনো দ্বীপসূলভ গ্রাম গ্রাম একটা ভাব রয়েছে।

শাহিদ ভাই আমাদেরকে চমতকার একটা জেটিতে নিয়ে গেলো। প্রাইভেট বোটে করে যারা মালেশিয়ায় আসতে চান তারা এখানে ল্যান্ড করতে পারেন। বোটে আসা শখের নাবিক পর্যটকদের জন্যে এখানে ইমিগ্রেশন অফিসও রয়েছে।

নাবিক পর্যটক ও ফিশিং বোটের জেটি

বোটে আসা পর্যটকদের জন্যে ইমিগ্রেশন অফিস
জেটি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে চড়ে এবার চলে এলাম একটা কুমিরের খামারে। জায়গাটা খুবই সুন্দর পুরো এলাাকাটা একটা বাগানের মতন। ভেতরে অনেকগুলো ছোট, বড় জলজ খাঁচায় বিভিন্ন সাইজের কুমির পালা হয়। ভয়ংকর সুন্দর একটা জায়গা‍‍‍।

কুমির খামারের প্রধান ফটক

বাচ্চা কুমিরের গন-খাচা

একটা পুকুরে ভেসে থাকা কুমির
কুমিরের খামার থেকে বেরিয়ে খামার এলাকার ভেতরেই দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়া হলো। এর পরের গন্তব্য কেবল কার। এখানকার কেবল কারটা গেন্টিং এর টার চাইতেও বেশি খাড়া আর ভয়ংকর। একটা পাহাড়ের চুড়ায় গিয়ে থেমেছে যেখানে হিন্দি মুভি "ডন" এর শুটিং হয়েছিলো।

লাংকাবি কেবল কার

কেবল কারের উপরের স্টেষন থেকে ভিউ
কেবল কারের ল্যান্ডিং স্টেষনের ভেতরে একটা থ্রিডি মুভি হল আছে। সেখানে ভয়ংকর একটা রোলার কোস্টার এক্সপেরিয়েন্স এর মুভি দেখানো হয়, কিন্তু মুভিটা খুব বেশি ভালো লাগেনি, অযথা এর জন্যে টিকেট কাটার কোন মানে হয় না। সাথে থাকা একশন ক্যাম দিয়ে কেবল কারের এক্সপেরিয়েন্সটা ক্যাপচার করতে চেয়ে্ছিলেম, নিচের ভিডিওতে চাইলে দেখে নিতে পারেন:


এরপর আর তেমন বিশেষ কোন ঘোরাঘুরি নেই। কিছুক্ষন সৈকতে সময় কাটিয়ে দিনের আলোটা নিভে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হলো। এই সুযোগে কেউ কেউ আবার সাগরে গা ভিজিয়ে নেয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করলোনা। এখানকার সীবিচ কক্সবাজারের মত উত্তাল না, অনেকটা নোনতা পানির নদীর মতই এর আচরন। আশপাশে অনেকগুলো দ্বীপ নিয়ে লাংকাবি দ্বীপপূঞ্জ, এজন্যে মূল দ্বীপটা পর্যন্ত ঢেউ এসে পৌছাতে পারেনা, ছোট দ্বীপগুলোতে ধাক্কা খেয়ে ঢেউগুলো মরে যায়।
লাংকাবি'র সমুদ্র সৈকত
হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হলাম, তারপর কিছুক্ষন জিরিয়ে নিলাম, কম্পিউটারে টুকটাক কাজকর্মও সেরে নিলাম। রাতে সী-ফুড দিয়ে ডিনার হবে, ভালো একটা টার্কি রেস্টুরেন্ট দেখেছিলাম, সেখানেই হয়তো যাওয়া হবে।


লাংকাবি'র পর্যটন পাড়া "পান্তাই চেনাং" এর রাস্তাঘাট
প্রথমেই বেরিয়ে একটা ট্রাভেল কোম্পানির সাথে পরের দিনে "আইল্যান্ড হপিং" অ্যাডভেঞ্চারের জন্যে প্যাকেজ কেনা হলো। প্রত্যেকের জন্যে দশ রিংগিত করে খরচ পড়লো, ওরা সকালে এসে গাড়িতে করে নিয়ে যাবে, দুতিন ঘন্টায় আশপাশের অনেকগুলো দ্বীপে ঘুরিয়ে নিয়ে আবার হোটেলে পৌছে দেবে। চমতকার জিনিস কিন্তু খুবই সস্তায় পাওয়া গেলো।

রাস্তার পাশে সীফুড রেস্টুরেন্টের বাইরে সাজিয়ে রাখা জীবন্ত লবস্টার
 ডিনারের জন্যে হাটতে শুরু করলাম। রাস্তার পাশে অনেক ধরনের রেস্টুরেন্ট আর ক্যাফে রয়েছে। সারাদিন পুরো এলাকা প্রায় নিস্তব্ধ থাকলেও রাতে কেন জানি সবকিছু জেগে উঠেছে। আমাদের লক্ষ্য সীফুড রেস্টুরেন্ট, অনেকগুলো আছে এখানে এবং সব রেস্টুরেন্টের বাইরেই তাদের সার্ভিং মাছের একটা করে শোকেস রাখা আছে।


সী-ফিস শোকেস

লবস্টারের একটা খাবার আইটেম

এইটা কি মাছ মনে নাই
একটা চমতকার রেস্টুরেন্টে চমতকার সব খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি, তারপর হোটেলে গিয়ে ঘুম।

Monday, October 5, 2015

মালেশিয়া ভ্রমন-৫: তৃতীয় দিন, লাংকাবির পথে

আগের দিনের ক্লান্তির রেশে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে অনেক দেরী হয়ে গেলো। আজকের দিনে তেমন কোন পরিকল্পনা নেই। আশ পাশে খানিকক্ষন ঘুরাঘুরি আর টুকটাক কেনাকাটা শেষে এয়ারপোর্টে চলে যাব, সেখান থেকে দুপুরের পর লাংকাবির ফ্লাইট। এয়ার এশিয়ার প্লেনের টিকেট কাটা হয়েছে।

কুয়ালালামপুরের সাধারন এপার্টমেন্ট ও ট্রান্সপোর্ট


যথারীতি সকালের নাস্তা খাওয়া হলো। ব্যাগগুলো সব আগের দিনের ভাড়া করা সেই গাড়িতে উঠানো হলো। গাড়ির মালিক এয়ারপোর্ট থেকে তার গাড়িটা রিসিভ করে নেবে। শাহিদ ভাই আর ইমরান ভাই ব্যাগসহ গাড়িতে করে এয়ারপোর্টে যাবে, আর আমরা তিনজন হাই-স্পীড ট্রেনে করে যাবো।

লইয়াত নামে একটা মার্কেট থেকে একটা আইপড শাফল কিনলাম, ছোট্ট একটা ডিভাইস, কিন্তু অডিও শোনার জন্যে চমতকার একটা জিনিস। মাত্র আশি ডলার দাম, কিনে ফেললাম। মুনতাসীর ভাই তাঁর ক্যামেরার জন্যে একটা প্রাইম লেন্স কিনলেন।

KLIA Ekspress ট্রেনের প্লাটফরম


আমরা তিনজন কেএল সেন্ট্রালে চলে এলাম। আধঘন্টা বা বিশ মিনিট পর পর এখান থেকে KLIA Ekspress ছেড়ে যায়। টিকেট কেটে প্লাটফরমে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেই ট্রেন চলে এলো। ট্রেনে চেপে বসলাম, জীবনের প্রথম হাইস্পীড ট্রেনে চড়া, প্রায় আশি কিলোমিটার রাস্তা মাত্র বিশ-পঁচিশ মিনিটের মধ্যে পাড়ি দিয়ে আমাদেরকে KLIA2 তে নামি দিলো। ট্রেনটা KLIA2 তে থামার আগে KLIA তেও কিছুক্ষনের জন্যে থামে, যারা ঐ এয়ারপোর্টে যেতে চান তারাও এতে করে আসতে পারেন।

KLIA2 Terminal


এদিকে শাহিদ ভাইরাও চলে এসেছেন। এখানে আমরা সবাই মিলে লাঞ্চ করে প্লেনের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম। প্রায় দুঘন্টা পরে ফ্লাইট। KLIA2 এর বারান্দা থেকে প্লেন স্পটিং এর খুব ভাল ব্যবস্থা রয়েছে। সময় কাটানোর জন্যে তিনশ মি.মি. লেন্সটা নিয়ে বারান্দায় কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে এলাম।

KLIA2
অজু করে যোহর আর আসরের নামাজ একসাথে পড়ে নিলাম। কিছুক্ষন পর সিকিউরিটি এয়ার এশিয়ার চেকইন আর সিকিউরিটি চেকআপ শেষ করে ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। আর বিশ পঁচিশ মিনিটের মধ্যেই ফ্লাইট।

এ প্লেনটায় করে লাংকাবি গিয়েছি
কুয়ালালামপুর থেকে লাংকাবী খুব বেশি সময়ের ফ্লাইট নয়। আকাশ খারাপ থাকাতে আজকে একটু বেশি সময় লেগে গেছে। তাও বড়জোর চল্লিশ-পঞ্চাশ মিনিট। খানিক পশ্চিম থেকে পুবে উড়ে যাওয়াতে বিকেলটা কেমন জানি তাড়াতাড়ি উড়ে চলে গেলো। প্লেন থেকে নেমে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
লাংকাবি এয়ারপোর্ট
এয়ারপোর্ট থেকে বের হবার আগে মাগরিবের নামাজ টা পড়ে নিলাম। এখানকার কর্মকর্তারাও খুব ভালো ও বন্ধুবত্সল। নামাজের জায়গার কথা জিজ্ঞেস করতেই একজন মহিলা কর্মী সাথে করে নিয়ে গিয়ে জায়গাটা দেখিয়ে দিলেন। লাংকাবিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কোন ব্যবস্থা নাই। অতএব, এখান থেকে বেরিয়ে হোটেল কিংবা অন্য কোথাও যেতে হলে আপনাকে ট্যাক্সি ক্যাব অথবা রেন্ট এ কারের শরনাপন্ন হতে হবে। ট্যাক্সি ক্যাব অনেক বেশি এক্সপেনসিভ, রেন্ট এ কার তুলনামূলক সস্তা। এয়ারপোর্টে বিভিন্ন রেন্ট এ কারের এজেন্সি আছে, এছাড়াও বাইরে অনেকেই নিজের গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করে ভাড়া দেবার জন্যে। আমরা ওরকম একজনের কাছ থেকে চব্বিশ ঘন্টার জন্যে একটা গাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম।
লাংকাবি এয়ারপোর্টের বাইরের দৃশ্য
লাংকাবিতে আমরা আগে থেকে কোন হোটেল বুক করিনি। গাড়ি নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে তেমন ভাল কোন হোটেল পাচ্ছিলাম না। শেষে একটা পেলাম কিন্তু তারা আমাদেরকে দুদিনের জন্যে ভাড়া দিতে রাজী হচ্ছিলোনা। সেখান থেকে বেরিয়ে মুনতাসীর আর সিয়াম ভাই একটা বুদ্ধি করলেন। ইন্টারনেটে হোটেলটার লিস্টিং খুজে বের করলেন একটা হোটেল বুকিং সার্ভিসের। তারপর সেখান থেকে অনলাইনে দুদিনের জন্যে বুকিং দিয়ে দিলেন। রিসিপ্ট ডাউনলোড হলো, এবার প্রিন্ট করে হোটেলে দেখালেই কেল্লা ফতে। আশপাশে একটা মার্কেট খুজে নিয়ে প্রিন্ট করে নিয়ে আবার ফিরে এলাম। বুকিং কাউন্টারের রিসিপশনিস্ট মেয়েটা আমাদের চালাকি দেখে রাগে গড়গড় করতে থাকলেন, উচ্চস্বরে কথা বলতে লাগলেন। সিয়াম ভাই আর মুনতাসীর ভাই হোটেলের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে কম্প্লেইন করার হুমকি দিতেই আরেকজন কর্মকর্তা এসে আমাদেরকে খুবই বিনয়ের সাথে রুম দেখিয়ে দিলেন। পরের দুদিনে আর কোন ঝামেলা হয়নি।

Thursday, June 4, 2015

মালেশিয়া ভ্রমন - ৪ : কুয়ালালামপুর (দ্বিতীয় দিন) (Cyberjaya, Putrajaya, Genting Highlands, Batu Caves)

কার রেন্টাল:
রেন্টেড কার

আপনি যদি ড্রাইভিং জানেন আর ধৈর্য ধরে জিপিএস ট্রাকিং মোবাইল এপ এর ইন্সট্রাকশন গুলো ভালভাবে রেসপন্স করতে পারেন তবে কার রেন্টাল থেকে একটা গাড়ি ভাড়া নিয়ে কুয়ালালামপুর ঘুরে বেড়ানোর খরচ এক ধাক্কায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ বানিয়ে নিতে পারেন। কুয়ালালামপুরের ট্যাক্সি ভাড়া পুরোপুরি আকাশছোয়া, আর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সহজলভ্য মনে হয়নি। সেই হিসেবে মাত্র ১০০ রিঙ্গিতের মধ্যেই আপনি চাইলে একটা গাড়ি ৬/১২ বা ২৪ ঘন্টার জন্যে ভাড়া নিয়ে নিতে পারেন।

কার রেন্টালের জন্যে অনেকগুলো কোম্পানি আছে কুয়ালালামপুরে। তার মধ্যে এয়ার এশিয়া ও মে ফ্লাওয়ার অন্যতম। কুয়ালালামপুরের বিমান বন্দর থেকে এয়ার এশিয়ার গাড়ি ভাড়া করা যায়। আর শহরের মধ্যে গাড়ি ভাড়ার জন্যে মে ফ্লাওয়ার সবচে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। এদের অনেকগুলো অফিস আছে, যেকোন টি থেকে আপনি গাড়ি ভাড়া নিতে পারেন। গাড়ি ভাড়া সিদ্ধান্ত নেবার আগে যে ব্যপারটি আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো গাড়ি যেখান থেকে নিচ্ছেন, তা ঠিক সেখানেই ফেরত দিতে হবে। গন্তব্য থেকে ফিরে আসার সুযোগ না থাকে তবে ট্যাক্সি বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টই সবচে ভাল পরিবহন হবে আপনার জন্যে। আর গাড়ি ভাড়া নেবার সময় আপনার যেসব জিনিস জমা দিতে হবে সেগুলো হচ্ছে:
১. পাসপোর্ট,
২. ড্রাইভিং লাইসেন্স
৩. ক্রেডিট কার্ড

এ লিস্টের কোন একটিও যদি আপনার কাছে না থাকে তবে গাড়ি ভাড়া পাওয়া যাবে না। বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়া বা কোন ভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করে আরো অল্প ভাড়ায় ও কম শর্তে গাড়ি ভাড়া নেয়া যেতে পারে।

সাইবারজায়া
একটা ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া নিতে আমরা ট্যাক্সিতে করে সাইবার জায়ায় এসেছিলাম। এ জায়গাটি মূলত কুয়ালালামপুরের প্রধান স্টুডেন্ট জোন। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই এখানে অবস্থিত। ছাত্রছাত্রীদের জন্যে থাকার জন্যে আবাসিক এলাকাও রয়েছে এখানে। এছাড়াও বড় কিছু কম্পিউটার প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে।

পুত্রাজায়া
হলিউডি কায়দায় পুত্রাজায়া শহরের সাইনবোর্ড

কুয়ালালামপুরের জনবহুলতার কারনে গত দুই দশক ধরে মালেশিয়ান সরকার তাদের রাজধানী পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী করেছে পুত্রাজায়া নামক আনকোরা একটি শহর। সাইবারজায়ার খুব কাছাকাছি এই শহরটি অনেকটা বদ্বীপের মত। একদিক থেকে একটি সেতু পার হয়ে শহরে প্রবেশ করতে হয়, শহরটিতে কোন আবাসিক অঞ্চল আছে বলে মনে হয়নি, চারদিকে অনেক উঁচু উঁচু ইমারত থাকলে আশপাশে মানুষের দেখা পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও সরকারী গুরুত্বপূর্ন অফিসের জন্যে ইমারত গুলো তৈরী করা হয়ে থাকলেও বোধহয় এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।



চমতকার একটা লেক দেখতে পেলাম, লেকের চারপাশে কিছু চমতকার স্থাপনাও দেখলাম। লেকের যেপাশে গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা রয়েছে তার ঠিক উল্টো পাশে আকাশ ছোয়া কিছু ইমারতও রয়েছে।





রিসোর্টের মত একটা স্থাপনাও চোখে পড়লো তবে এটা আসলেই কোন রিসোর্ট কিনা তা জানতে পারিনি। পুত্রাজায়ায় অত্যাধুনিক একটি কনভেনশন সেন্টার রয়েছে যেটিতে একবার একটি ন্যাম সম্মেলন হয়েছিলো যেটি আসলে বাংলাদেশে হবার কথা ছিলো।




পুরো শহরটি ফাঁকা মনে হলেও শেষ পর্যন্ত কিছু মানুষের দেখা পাওয়া গেলো পুত্রা মসজিদের কাছে এসে। স্থানীয় ও বিদেশী অনেক টুরিস্টই এখানে এসেছেন মালেশিয়ান প্রধানমন্ত্রির কার্যালয় ও পুত্রা মসজিদের অনবদ্য স্থাপনাশৈলী উপভোগ করার জন্যে। এখানে পৌছুতে পৌছুতে জোহরের নামাজের জামাতের সময় পার হয়ে গিয়েছিলো, নয়তো দারুন এ মসজিদে জামায়াতে নামাজ পড়ার সৌভাগ্য হয়ে যেত। তারপরও যোহর আর আসরের নামাজ কসর আদায় করে নেয়া গেলো। এ মসজিদে একজন টুরিস্ট মুসল্লির জন্যে অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

পুত্রা মসজিদের ভেতরের অংশ


প্রথমে ঢোকার সময়ই আপনাকে অভিবাদন জানানোর জন্যে আসবেন মসজিদের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি যার কাছ থেকে মসজিদ সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। ওযু করার জায়গাটিতে গোসল করার ব্যবস্থাও রয়েছে। তাছাড়া টুরিস্ট যদি সতর ঢাকার উপযোগী পোষাক না পরে আসে তার জন্যে একটি স্টল থেকে সাময়িক ব্যবহারের জন্যে পরিচ্ছন্ন লম্বা এক ধরনের কুর্তা ও লুঙ্গির ব্যবস্থা রয়েছে। লুঙ্গির ব্যবস্থা অবশ্য্ মালেশিয়ার সব মসজিদ আর ছোট নামাজের স্থানগুলোতেও রয়েছে।



মালেশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
পুত্রা মসজিদের ডানপাশেই অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

গেন্টিং হাইল্যান্ডস
গেন্টিং হাইল্যান্ডের রিসোর্ট এলাকার একটি মডেল

কুয়ালালামপুর থেকে কাছে সেলাঙর প্রদেশের পাহাড়ি এলাকা গেন্টিং হাইল্যান্ডস। এখানে পাহাড়ের উপর বিশাল আকারের একটি রিসোর্ট শহর তৈরী করা হয়েছে। মূলত জুয়াড়িদের জন্যে তৈরী এ জায়গাটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে আসেন। কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় একশ মাইল দুরে অবস্থিত এ জায়গাটি আসার জন্যে বিশেষ বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া গাড়ি থাকলে তো কথাই নেই।

গেন্টিংএর কেবল কার

গেন্টিং এর পাহাড়টি অনেক ঢালু। সাধারন গাড়িতে করে এখানে ওঠাটা একটু কষ্ট সাধ্য। এই অংশের জন্যে বিশেষ বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। অপেক্ষাকৃত নিচু পাহাড়ের ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে সেই বাসে কিংবা কেবল কারে করে গেন্টিং হাইল্যান্ডে রিসোর্টটি আসা যায়।

ফারস্ট ওয়ারলড হোটেল

নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচে বেশি ধারনক্ষমতার হোটেল হিসেবে বিখ্যাত ছবিতে দেখানো রঙ্গীন ফার্সট ওয়ার্লড হোটেলটি। এখানে জুয়াড়িদের জন্যে রয়েছে ক্যাসিনো, এছাড়াও সাধারন দর্শনার্থীদের জন্যে চমতকার সব আয়োজন রয়েছে বিল্ডিংটিতে।

ফার্সট ওয়ার্লড হোটেলের কনভেনশন হলে প্রতিদিনই কোন না কোন আয়োজন থাকে দর্শনার্থীদের জন্যে। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত এন্টারটেইনারদের এসব আয়োজন উপভোগ করার জন্যে কোন ফি দিতে হয়না।

বাটু কেইভস


গেন্টিং থেকে ফিরতে ফিরতে যথেষ্ট রাত হয়ে গেল। ফেরার পথে বাটু কেইভস এ যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো। কুয়ালালামপুরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলো এই বাটু কেইভস। গেন্টিং থেকে কুয়ালালামপুরে ফেরার পথেই বাটু কেইভস পরে। তাই এখানটা ঘুরে যেতে খুব বেশি সময় নষ্ট হলো না।





এটি মূলত তামিল দের একটি তীর্থ স্থান। প্রতিদিনই তামিলগন এখানে প্রার্থনা ও নিজেদের সম্পদের শুভকামনার গুরুদের কাছে আসেন।

বাটু কেইভস থেকে হোটেলে ফিরে সেদিনের মত ঘুরাঘুরি শেষ হলো। কুয়ালালামপুরের চারপাশের সবগুলো দর্শনীয় জায়গা ও শখানেক হোটেল ও রেস্তোঁরায় ঘুরাঘুরির জন্যে আরেকটি চমতকার সার্ভিস চালু রয়েছে এখানে। একে বলা হয় "হপ ইন হপ অফ" বাস সার্ভিস। দোতলা ছাদখোলা এক ধরনের বাস যেগুলোর অনেকগুলো স্টপেজ রয়েছে। যেকোন একটি স্টপেজ থেকে বাসে উঠে টিকেট সেই টিকেট দিয়ে একদিন বা দুইদিন ধরে কুয়ালালামপুর ঘুরাঘুরি করা যায়। নির্ধারিত একদিন বা দুইদিনে যেকোন সময় যেকোন স্টপেজ থেকে বাসে চড়ে পরের গন্তব্যে যাওয়া জন্যে আর কোন টিকেট লাগবে না। এই লিংক থেকে এ সার্ভিস সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন: http://www.myhoponhopoff.com