Monday, May 30, 2011

অন্যের ব্যাক্তিগত ভুলগুলো ধরিয়ে দিন

একজন মুমিন আরেকজন মুমিনের আয়নাস্বরুপ। আমাদের উচিত একজন অপরজনের ব্যাক্তিগত ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেয়া। তবে এই ভুল ধরিয়ে দিতে গেলে দুটি ভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

প্রথমত, ভুল ধরিয়ে দেয়ার পর আপনি যার ভুল ধরিয়ে দিলেন তিনি খুশি হতে পারেন, এবং নিজেকে সংশোধন করে নিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, ভুল ধরিয়ে দেয়ায় তিনি রাগ করতে পারেন। রাগটুকু সাময়িকও হতে পারে আবার দীর্ঘ সম্পর্কের ইতি টানার পরিস্থিতিতেও পৌছে দিতে পারে।

দ্বিতীয় ঘটনা ঘটার ভয়ে আপনি যদি আপনার পরিচিত মানুষটির ভুল ধরিয়ে না দেন তবে আপনি তার উপর জুলুম করলেন। কারন মুমিন হিসেবে এটি আপনার দায়িত্ব। আপনি যদি তা না করেন তবে আপনার পরিচিত মানুষটির ভুলটুকু সংশোধনের সম্ভাবনাটি নষ্ট হল কিংবা দীর্ঘায়িত হল। এটা আপনার জন্য অনুচিত। আবার তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখাটাও আপনার জন্য জরুরী। সেক্ষেত্রে কিছু সাবধানত অবলম্বন করলেই আপনি আপনার পরিচিত মানুষটার একটা ব্যাক্তিগত ত্রুটি তার সাথে সম্পর্কের তরংগের কোন ছন্দপতন না ঘটিয়েই দুর করে দিতে পারেন। নিচে এব্যাপারে কয়েকটা সাবধানতা উল্লেখ করলাম, হয়তা কাজে আসতে পারে।

১. সবার সামনে অথবা তৃতীয় কোন ব্যক্তির সামনে তার ত্রুটিটুকু উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা এতে তিনি অপমান বোধ করতে পারেন। সবার কিংবা অন্য কোন ব্যক্তির সামনে সামান্য কোন ত্রুটিও যদি প্রকাশ করা হয়, তা মূলত তাকে অপমান করার সামিল বা এটাই কোন মানুষকে অপমান করার সবচে পুরোনো পদ্ধতি। তাই, কারো ত্রুটিটুকু সম্বন্ধে অবগত করতে গেলে সেটি যত ছোটই হোক না কেন নিভৃতে জানানোর চেষ্টা করুন।

২. ত্রুটিটুকু যদি তার কথার মাঝখানে ধরা পড়ে তবে সেই কথার মাঝখানেই দ্রুত ত্রুটিটুকু ধরিয়ে দেয়াটা ভুল পদ্ধতি। বরং তার কথা শেষ হওয়ার পর তাকে বুঝিয়ে বলুন।

৩. আর সরাসরি ত্রুটির ব্যাপারে আলাপ শুরু না করে, বরং প্রসংগ টেনে আস্তে আস্তে বুঝিয়ে বলুন।

৪. কাউকে তার ত্রুটি সম্বন্ধে জানানোর সময যতটা সম্ভব উক্ত ত্রুটি নিয়ে তার সামনে সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকুন। শুধু ছোট্ট কোন উদাহরন বা ত্রুটিটুকুর ফলাফলটুকু অবশ্যই যথেষ্ট বিনয় বজায় রেখে জানানোর চেষ্টা করুন। বিনয় মুসলিমের একটি বৈশিষ্ট্য আর তার বিপরীতটুকু কাফের কিংবা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।

পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই সম্মানিত, সে আপনার শিক্ষক হোক বা আপনার বাসার কাজের ছেলেই হোক না কেন। আর সবাইই একে অপরের উপর কোন না কোনভাবে নির্ভরশীল। মনে রাখবেন আপনি ততই বড় সম্মানিত ব্যাক্তি যতখানি আপনি অন্যকে সম্মান করেন। অনেকটা বলা চলে মানুষ বিনয়ী হয় তার আত্নসম্মানবোধ থেকে। দায়িত্ববোধ আর আত্নসম্মানবোধের মিলিত বৈশিষ্ট্যপূর্ন মানুষই কেবল পারে আমাদের সমাজকে আরো সুন্দর করে গড়ে তুলতে। আসুন একে অপরের ভুল-ত্রুটিগুলো দুর করে ত্রুটিমুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি।

Saturday, May 28, 2011

অচীন দেশের চেনা মানুষ

সাধারন মানুষ তার ভাল লাগা, মন্দ লাগা, ত্রুটি-বিচ্যুতি গুলো ঢেকে রাখতে পারেনা। সহজেই তাদের বোঝা যায়। আর কুটিল মানুষগুলো ঠিকই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে। সে অন্যদের বুঝতে পারে, তাই তাদের ভাল লাগাকে কাজে লাগায় আর মন্দ লাগা গুলো থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখে সুবিধা আদায় করে নেয়। এটা অনেকটাই অভিনয়। বাড়তি বিনয় এই কুটিলতার লক্ষন। বিনয়ী লোকদের কাছ থেকে সাবধানে থাকা উচিত।

সাধারন মানুষের মনে অভিযোগ অনেক, তারা তাদের সব অপছন্দগুলোই অভিযোগ কিংবা রাগ ঝেড়ে প্রকাশ করে। কিন্তু কিছু লোকজনকে খেয়াল করলে দেখা যাবে, কিছুতেই এরা রাগে না। বরং যে যেমন ঠিক তার সাথে তেমন করে আচরন করার চেষ্টা করে। অভিযোগ প্রকাশ করেনা। এরা সত্যিই অনেক জটিল প্রকৃতির মানুষ। শত্রুকে যখন চেনা যায় তখন তার কাছ থেকে দুরে থাকা সহজ হয়, আবার বন্ধুকে যখন চেনা যায় তার কাছ থেকে বন্ধুত্বের দাবীগুলো আদায় করে নেয়া যায়। কিন্তু আলোচিত কুটিল লোক বন্ধু না শত্রু কিছুই বোঝা যায় না। অনেকটা ক্যামোফ্ল্যাজ নিয়ে এগোয়। তারা সহজেই অন্যকে ঘায়েল করতে পারে।

এদেরকে নিজেদের প্রয়োজনেই কুটিল হতে হয়। এদের বেশিরভাগই নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজের বাসিন্দা, সামাজিক স্তর বিন্যাসে এমন একটা অবস্থানে তাদের বাস যেখানে সম্মান হারানোর ভয় আছে আবার সত্যিকার অর্থে তাদের কোন সম্মানও নেই। একটা ভয়ংকর রুদ্ধ সামাজিক অবস্থানে থেকে টিকে থাকার চেষ্টাতে তারা ধীরে ধীরে এমনটি হয়ে যায়। তারা টিকে থাকতে চায়।

নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেনীটি এমন যে, তা নিম্নবিত্তের মত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত নয়, আবার মধ্যবিত্তের মত সামাজিক স্বিকৃতীও তাদের নেই। তাদের কোন বন্ধু থাকেনা, থাকলেও সবচেয়ে পরিশ্রমী এই সামাজিক শ্রেনীটি তাদের বন্ধুত্ব সমাজের অন্য শ্রেনীর মত বন্ধুত্বের রূপ দিতে পারেনা।

আমি জানি আমি এ ধরনেরই একজন কুটিল মানুষ। আমার কাছ থেকে সবাইকে সাবধান থাকার জন্য অনুরোধ করছি। আমি জানি আমি কারো বন্ধু হবার যোগ্যতা রাখিনা। তাই আমার জানামতে আমার কোন বন্ধু নেই। আমি সত্যিই একজন কুটিল মানুষ, যারা আমাকে বন্ধু হিসেবে ভালবাসে, আমি জানি তারা বোকার স্বর্গে আছে। আমি যেটা জানি তা হচ্ছে আমাকে টিকে থাকতে হবে এই পৃথিবীতে। তাই নিজের ভাল লাগা আর মন্দ লাগা গুলোকে লুকিয়ে রাখি। বরং অন্যের ভাললাগাকে নিজের ভাললাগা বলে উপস্থাপন করি, মন্দ যেন কিছুতেই লাগেনা। শুনে মনে হবে যেন এ অবারিত উদারতা, কিন্তু না, সত্যি হচ্ছে আমার ভাল লাগাগুলো সাধারন রূচির এত নিচে তা উর্দ্ধতন শ্রেনীর মানুষের কাছে বিরক্তিকর আর কুরূচীপূর্ন। তাই সবগুলো সুযোগকে হাতে রেখে লড়াই করছি।

Wednesday, May 18, 2011

রাগী মানুষ রাগী কেন?

“মালীটা ভীষন পাজী। বাগানে ঢুকতে তো দেয়ই না, যখন পাশ দিয়ে হেঁটে যাই তখনো কেমন খাঁকিয়ে ওঠে।“ এমনই ভাবতে ভাবতে ভোলা মিয়ার বাগানটার দিকে তাকাচ্ছিল আর বাগানের আধপাকা আমগুলোর দিকে তাকিয়ে জীভের জলটুকু গিলে নিল আশিক। স্কুল থেকে ফেরার পথে সে প্রতিদিনই রাস্তায় না এসে ক্ষেতের আল দিয়ে বাড়ি ফিরে সময় বাচানোর চেষ্টা করে। এ পথে এসে সময় বাচুক আর না বাচুক, এ পথে এলে বাগানের মালীটাকে চোখে না পড়লেই আশিক আর তার বন্ধুরা টুপ করে ঢুকে পড়তে পারে বাগানে। মাঝে মাঝে মালীটার চোখ এড়িয়ে দুএকটা পড়ে থাকা আম ব্যাগেও ভরে নেয় সে।

রহমত, ভোলা মিয়ার বাগানের মালী, প্রচন্ড রাগী আর সজাগ। বাগানের আশপাশ দিয়ে কাউকে যেতে দেয়না। সারাদিন আর রাত বাগানেই থাকে সে। এমনকি ভোলা মিয়ার ছেলেমেয়ে আর বউও বাগানে ঢুকতে ভয় পায়, চোর বলে তাড়িয়ে না আবার কোন বিতিকিচ্ছিরি কাহিনী ঘটায়, পাছে ইজ্জত ঐ আম গাছের উপর উঠে যায়। তার চেয়ে ভাল আম কিংবা ফল খাওয়ার সময়-অসময়ের ইচ্ছেগুলো দমিয়ে রাখাটা শ্রেয় মনে করে তারা। তবে ভোলা মিয়া তার পরিবারের জন্য ফল-ফলাদি রহমতকে দিয়ে পাড়িয়ে বাড়িতে এনে রাখে। আর মাঝে মধ্যে পাড়ার মুরুব্বী আর বন্ধু-বান্ধবকেও বিশাল বাগানে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে আয়েশ করিয়ে বিভিন্ন ফল খাইয়ে দেয়। আর বিদায়ের সময় আবার আসার এবং ভোলা মিয়ার অবর্তমানে প্রয়োজন হলে যাতে রহমতের কাছ থেকে বাগানের ফল পাড়িয়ে নিয়ে যায় সে কথা মনে করিয়ে দেয়। সত্যিই ভোলা খুবই ভাল মানুষ। কিন্তু ভোলা যতই ভাল হোক রহমত মালীকে বলে ফল পাড়িয়ে নেবে এটা ভোলার বন্ধু-বান্ধব কিংবা পাড়ার মুরুব্বী স্বপ্নের মধ্যে ভেবেও আঁতকে উঠে। এটা প্রচন্ড অসম্ভব কাজ, রহমতের কাছে তারা ফল চাইবে কি, বাগানের আশপাশ দিয়ে কেউ গেলেই তাকে চোরের মত তাঁড়িয়ে দেয় রহমত।

উপরের ছোট্ট গল্পে রহমত নামের একজন মালীকে পাওয়া গেল যিনি প্রচন্ড রাগী। তিনি কেন রাগী? তিনি রাগী কেননা তিনি সময়ে অসময়ে ভোলা মিয়ার বন্ধু-বান্ধব, পাড়ার মুরুব্বী কিংবা বউ-ছেলেমেয়ের জন্য ফাই-ফরমাশ খাটতে আগ্রহী নন। আর এ থেকে বেচে থাকতেই তার রাগী হওয়া, বাগান দেখাশোনার খাতিরেই তার সজাগ থাকতে হয়, আর তার সাথে কিছুদিন রাগ দেখালেই বেশ কিছু দায়িত্ব থেকে বেচে যাওয়া যায় দেখে সে সেই পন্থা অবলম্বন করলেন। এ থেকে বোঝা যায়, আসলে রাগী মানুষ তার দায়িত্ব থেকে বেচে যাওয়ার জন্যে রাগী স্বভাবটা জিইয়ে রাখে। যেমন রাগী পিতা তার সন্তানের অবারিত স্নেহ পাবার অধিকারকে হরণ করার জন্যে তার সামনে রাগী হিসেবে আবির্ভূত হয়, যাতে সন্তানের সব দাবী পূরন করতে না হয়, কিংবা সন্তানকে বেশি সময় দিতে না হয়। যেসব শিক্ষক বা শিক্ষিকা তার ছাত্র-ছাত্রীকে পড়া বুঝিয়ে দিতে পারেনা, কিংবা তাদের প্রশ্নের জবাব সঠিকভাবে দিতে পারেনা, তাদেরকেই আমরা প্রচন্ড রাগী শিক্ষক বলে চিনি। মানুষের সম্পদ কেড়ে নেবার জন্যেই সরকারী আমলা আর ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসীরা প্রচন্ড রাগী হয়। রাগী মনিব তার কর্মচারীকে ঠকানোর জন্যে রাগী স্বভাব ধরে রাখে আর নিজের সকল অপারগতা কে লুকিয়ে রাখার জন্যেই কর্মচারীকে প্রচন্ড রাগ দেখিয়ে সব কাজ আদায় করার চেষ্টা করে।

আরেকটা ছোট্ট উদাহরন দিয়ে শেষ করি। মি. রফিক তার অফিসের কেয়ারটেকারকে সামান্য একটু কাগজের টুকরা মেঝেতে পড়ে থাকার অপরাধেও প্রচন্ড বকাবকি করেন। এর কারন হচ্ছে, তিনি আসলে প্রচন্ড অগোছালো আর ময়লা একজন মানুষ। তিনি তাঁর ঘরের বিছানাও ঝাড়ার মানসিকতা রাখেননা, সামান্য ধুলাও তিনি ঝাড়তে পারেনা, এমনকি অফিসের মেঝেতে তাঁর হাত থেকে পড়া ছোট্ট কাগজের টুকরাও একটু সরিয়ে রাখতে তার পছন্দ নয়। সেই না পারাকে ঢাকতে, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করার ব্যাপারে সামান্য অবদানও যাতে তাঁর রাখতে না হয় সেজন্যে তিনি একজন রাগী মানুষ।