Friday, August 20, 2010

গাধারাই দেশ চালায়...

বহু বছর আগে এক রাজ্যের এক বুদ্ধিমান(!) রাজা ছিল। তাঁর রাজ্যে জ্যোতিষীরা বেশ সমাদর পেত। সত্যি বলতে রাজ্যের সব সিদ্ধান্তই নেয়া হত জ্যোতিষীদের সমর্থন পেলে তবেই। কিন্তু জ্যোতিষীরাও কিন্তু সেই সমর্থন নিজ থেকে দিত না। তারা এ সিদ্ধান্তকে যাচাই করে নিত একটা বিশেষ প্রানীর মাধ্যমে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য (!!) এই যে, সেই প্রানীটাকে আমরা একনামে গাধা বলে চিনি। রাজ্যের যে কোন নতুন সমস্যার সমাধান নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার আগে জ্যোতিষীরা তা গাধা দিয়ে যাচাই করে নিত। একটা প্রাঙ্গনে চার দিকে চারটা পাত্রকে চারটে সিদ্ধান্ত হিসেবে চিহ্নিত করে মাঝ খান বরাবর ছেড়ে দেয়া হত একটা গাধাকে। সেই গাধা যে পাত্র থেকে খাবার খেত তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত বাছাই করা হত। ভাগ্যিস সে রাজ্যে সংবাদপত্র ছিলনা, যার ফলে এসব সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের ফলাফলের সমালোচনা শুনতে কিংবা পড়তে পাওয়া যেত না।

সেই দেশের এক বড় ব্যবসায়ী ছিল। সেই ব্যবসায়ী তার মালপত্র গাধার ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেও একটা গাধার ঘাড়ে চেপে ঘুমিয়ে পড়ত। আর গাধা তাকে যেদিকে চালিয়ে নিয়ে যেত সেখানেই সে তার বানিজ্যকর্ম সম্পাদন করে নিত। লাভ কম হত কি বেশি হত তা নিয়ে ঐ ব্যাটা একটুও ভাবত না বরং রাজ্যের গুরুত্বপূর্ন প্রানীকে গুরুত্ব দিতে পেরে সে আনন্দিত হত।

উপরোক্ত কাল্পনিক রাজ্যের গাধার নিয়ম আমাদের দেশেও প্রচলিত আছে। সেদিন কে যেন বলছিল, "যারা দেশ চালায় তাদের মধ্যে কয়েকটা গাধা আছে, তাই দেশের এই দুরবস্থা।" তার উত্তরে আরেকজন বলেছিল, "কয়েকটা মানে, সবগুলোইতো গাধা।" আজ আমার দ্বিতীয় জনের কথাটা সমর্থন করতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রনের জন্য যে জরিমানা অভিযান চলছে তার পদ্ধতি দেখে বোঝাই যায়, গাধাদের দিয়েই অভিযান চালানো হচ্ছে, কিংবা এদেরকে কোন গাধারাই চালায়।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের খুচরা বিক্রেতাদেরকে জরিমানা করলে কেমন করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রিত হবে তা কারো বোধগম্য হবার কথা নয়। একজন খুচরা বিক্রেতা বিশেষ করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের খুচরা বিক্রেতা তাঁর জিনিসপত্র পাইকারী মূল্য থেকে মাত্র দুয়েক টাকা লাভ রেখে বিক্রয় করে থাকে। আজ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব যখন এক দোকানীকে চিনির দাম জিজ্ঞেস করলেন তখন দোকানী ভয়ে পড়ে পাইকারী মূল্যটাই খুচরা মূল্য বলে জানিয়ে দিলেন। আর এই মূল্য শুনেও ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব সন্তুষ্ট হতে পারলেননা, দিলেন পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে। এই দোকানী কি তবে পাইকারী মূল্যের চেয়েও দাম কমিয়ে চিনি বিক্রি করবে? জরিমানার ভয়ে এই দোকানীরা কি দাম কমিয়ে চিনি বেচতে পারবে? যদি না পারে, তবে একে কেন জরিমানা করা হল?

এ প্রশ্নের একটা উত্তর আছে। ক্ষুধার্ত গাধাকে যদি কোন ফাঁকা মাঠে ছেড়ে দেয়া হয়, তবে সে ঘাসের দিকেই ছুটবে। যেহেতু খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারী ব্যবসায়ীদের মত চেক দিয়ে টাকা আদান প্রদান না করে নগদে আদান প্রদান করে বলে তাদের কাছ থেকে সহজেই জরিমানা আদায় করা যায়। আর সেই কারনেই ম্যাজিস্ট্রেটরাও হয়ত গাধার ভূমিকায় অবতীর্ন হয়। যাই হোক না কেন, এদের ক্যাশ থেকে নগদ টাকা পেতে কোন সমস্যা হবে না, খালি হাতে ফেরার সম্ভাবনা নেই। আর যে যত বড় ব্যবসায়ী তার হাতও তত বড়, খুচরা ব্যবসায়ীরা ছোট ব্যবসায়ী বলে এদের হাতও কম চওড়া, এদের কষে কয়েকটা দিলেও কারো এদের পক্ষে কিছু বলার সম্ভাবনা নেই।

গাধারা জুলুম করছে, গাধাগিরির মাধ্যমে জুলুম করছে। জুলুমে জুলুমে ভরে গেছে সারা দেশ। সুবিচার এদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কিংবা হয়ে্ই গেছে। আর যে দেশে জুলুমে ভরে যায়, সেই দেশ আল্লাহর কোপে পড়ে থাকে। আল্লাহ ছাড়া আর কেউই আমাদের উপর নির্ধারিত গযব থেকে রক্ষা করতে পারবেনা। সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।

Tuesday, August 3, 2010

৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া? নাকি, ঠান্ডা গৃহযুদ্ধের সূচনা?

৭২ এর সংবিধান কার্যকর হতে যাচ্ছে। ব্যপারটা কি বেশ চিন্তার বিষয় মনে হচ্ছে না? আমি তো রীতিমত ঠান্ডা যুদ্ধের গন্ধ শুঁকতে পারছি। পুরনো-পঁচা বাতিল ঐ সংবিধান দেশের নীতিতে একই সাথে গনতন্ত্র আর সমাজতন্ত্রকে একসাথে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এ দুই পরস্পর বিরোধী নীতিকে একসাথে রেখে, তার ওপর আল্লাহর উপর থেকে আস্থা ছেড়ে দিয়ে দেশকে কোথায় যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা নিয়ে অবশ্যই চিন্তার অবকাশ রয়েছে।

সমাজতন্ত্র, শুনলেই মনে পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা যা ভেঙে-চুরে আজ সুপ্ত পরাশক্তি রাশিয়াতে পরিণত হয়েছে। সমাজতন্ত্রে সকল সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানাকে নিষিদ্ধ। রাষ্ট্র সেখানে সকল সম্পদের মালিক এবং সম্পদের বণ্টন সমানভাবে সবার মাঝে বণ্টন করার নিয়ম এখানে।

অপরদিকে গনতন্ত্র চর্চায় সবার সামনের অবস্থানে রয়েছে আমেরিকা নামক পরাশক্তি। গনতন্ত্র স্বীকৃতি দেয় পুঁজিবাদকে। আর পুঁজিবাদ হল এমন নীতি যেখানে রাষ্ট্র কোন সম্পদের মালিক নয়, জনগন প্রত্যেকে আলাদা আলাদা ভাবে তাদের নিজেদের দখলে থাকা সম্পদের মালিক।

সমাজতন্ত্র এবং পূঁজিবাদী গনতন্ত্র হল দুটি পরস্পর বিরোধী নীতি। এ দুই নীতি কেমন করে একই সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত হতে পারে তা কৌতুহল উদ্দীপক। দেখা যাক, কেমন করে এ দুটি নীতি একসাথে বসবাস করে, কিছুদিন গেলেই নিশ্চয়ই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই ঠান্ডা যুদ্ধ না আবার লেগে যায় এই ভয় হচ্ছে। একই ঘাটে বাঘ আর ছাগে পানি খেতে গেলে, ছাগের কপালে বাঘের পানিগ্রহনপূর্ব হালকা নাস্তায় পরিণত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যেমন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন আজ রাশিয়াতে পরিণত হয়েছে, তেমনি পূঁজিবাদ কিংবা সমাজতন্ত্রের যে কোন একটা অপরটার হাতে নিহত হবে এটা পুরোপুরি নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। তবে কোনটা টিকে থাকবে তা বলা কঠিন। ৭২ এর পর রক্ষীবাহিনীর হাতে যেমন করে নিহত হয়েছে অজস্র সমাজতান্ত্রকামী তেমনি আরেকটা হলোকাস্টের পূর্বাভাস অনেকের হৃদয়কেই হয়তো শংকিত করে তুলছে।