Sunday, February 22, 2009

অদৃশ্য কিছু একটা...

অদৃশ্য কিছু একটা...

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৩৩

শেয়ার করুন: Facebook

কিছুক্ষন আগে এক বিচিত্র লোকের সাথে দেখা হল। বয়স তাঁর তিরিশের কোঠায়। তাঁর চেহারায় আভিজাত্যের একটা ছোঁয়া রয়েছে। আমি শুধু তাঁর চেহারাটুকু দেখতে পেয়েছি তাতেই কল্পনা করতে পেরেছি তাঁর অভিজাত জীবন যাপনের চিত্র। এশার নামাজ আদায়ের পর মসজিদ থেকে বেরিয়েই তাঁর সাথে দেখা। একই এলাকায় বাস করি অথচ তাঁকে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হয়নি। তিনি মসজিদের ফটকের ঠিক সামনেই ছিলেন। নামাজ শেষে আমরা মুসল্লিরা সবাই তাঁর সাথে দেখা করতে গেলাম, অথচ তিনি কোন কথাই বললেন না। সবার সামনেই চোখ বন্ধ করে ঝিম ধরে রইলেন। তাঁর মুখটুকু খোলা ছিল, আর বাকি শরীর তাঁর অজান্তেই হয়ত সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। আর তিনি একটা খাটের উপর শুয়ে ছিলেন। খাটটা খুব ছোট। কোন নড়াচড়া না করলে একজন মোটাতাজা মানুষের এতে কিছুক্ষন শুয়ে থাকতে কোন কষ্ট হবার কথা নয়। বলাই বাহুল্য, দেখা করার কিছুক্ষন আগেই উনার জানাজায় শরীক হয়েছি।

লোকের ভীড়ে বেশীক্ষন তাঁর চেহারা দেখতে পাইনি। তবু তাঁর চেহারাটুকু ৭.২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় তোলা ছবির মত আমার মস্তিস্কের কোন একটা নিউরনে জমা হয়ে আছে। তাঁর পুরো শরীরটাকে দেখতে না পেলেও তাঁর যে আমার মতই অথবা তারচেও বেশি পেশীবহুল হাত-পা এবং শরীর রয়েছে তা কল্পনা করতে কষ্ট হয়না। নিজের হাত-পা গুলোকে একটু নাড়িয়ে চাড়িয়ে নিজের অস্তিত্বকে পরখ করতে চেষ্টা করলাম। শরীরটা কেমন যেন দুর্বল মনে হল নিজেকে। সিড়িতে উঠতে গিয়ে অনেক কষ্টে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে পুরো শরীরটা তাল গাছের মত করে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছি। নিজেকে এই ছোটো বিপদ থেকে বাচানোর জন্য ভেতরের অদৃশ্য কিছু একটা থেকে যে তাগিদ অনুভব করছিলাম তা কি? তা জানতে খুব ইচ্ছা করছে। সম্ভবত, দুনিয়ার সকল মোহ ত্যাগ করে চলে যাওয়া ঐ ব্যাক্তির সেই অদৃশ্য কিছু'টা নেই বলেই সে মৃত। তার দুটা হাত আছে, দুটা পা আছে আরো আছে সকল অচল অঙ্গাণু সমৃদ্ধ শরীরটা। বর্তমান যূগে, নকল অথবা সংগৃহিত আসল অঙ্গাণু দ্বারা মানুষের অসুস্থ অঙ্গাণুকে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা হয়। মৃত ব্যাক্তির সকল অঙ্গানু প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে কি তাকে জীবিত করা সম্ভব?

আমার মনে হয় তা সম্ভব নয়। একটা শরীরের ইন্জিনকে হয়ত চালু করা সম্ভব হতে পারে, কিন্তু ভেতরের অদৃশ্য কিছু একটাকে কি করে সৃষ্টি অথবা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে?

ভেতরের যে অদৃশ্য কিছু একটার কথা বারবার বলছি, তাকে সবাই আত্না নামে চিনি। এই আত্নাকে আমরা দেখি না। কিন্তু অনুভব করি। আত্না মহাবিশ্বের এক অসাধারণ সৃষ্টি। দুটো আত্নায় মিল পাওয়া যায় কিন্তু সম্পুর্ণ একরকম কখনো হয়না। আত্নার ব্যাক্তিত্বকে আমরা দেখিনা, কিন্তু অনুভব করতে পারি। একই বয়সের দুজন মানুষ। অথচ একজন আরেকজনের উপর নের্তত্ব দেয় আর আরেকজন নের্তত্ব মেনে নেয়। সপ্তম শতাব্দির এক ব্যাক্তির কথাতো না বললেই নয় যাঁর আত্নাকে এখনো শ' কোটি মানুষ পরম আনুগত্যের সাথে অনুভব করে। তিনি হলেন হযরত মুহম্মদ (সা)। শেখ মুজিবের আত্না অনেক মানুষকে তাঁর সম্পুর্ণ আয়ত্বে রাখতে সক্ষম হয়েছিল আর তাঁর আত্নার শক্তির প্রভাব সাত কোটি মানুষকে এমনভাবে একীভূত করেছিল যার ফলে পাকিস্তানের গর্ভ থেকে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে।

ভেবে দেখুন এঁরা সাধারন মানুষের মতই একেকজন মানুষ। অথচ তাঁদের সাথে অন্য সাধারন মানুষের মধ্যে অদৃশ্য এক পার্থক্য রয়েছে। তা হল আত্নার পার্থক্য। আত্নাকে বিশ্বাস করতে গিয়েই অদৃশ্যকে বিশ্বাস করতে বাধ্য হতে হয় মানুষকে। কোন এক অদৃশ্য কিন্তু বাস্তব শক্তি অবশ্যই এই জটিল ও অসীম মহাবিশ্বের জ্ঞাত রহস্য। যদি হাজার বছরের ব্যবধানে অদৃশ্য থেকে আবির্ভুত অসংখ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে ১০৪ খানা বিশেষ করে সপ্তম শতাব্দিতে মুহম্মদ (সা) এর কাছে নাযিলকৃত আল্লাহর বানী সমৃদ্ধ বিস্ময়কর গ্রন্থ আমাদের কাছে না আসত তবে এ রহস্য অজ্ঞাতই থেকে যেত সবার কাছে।

No comments: