Sunday, February 22, 2009

শীতের মূলধন

শীতের মূলধন

০২ রা ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৩৪

শেয়ার করুন: Facebook

মাংস ও মাছ সংরক্ষনের মধ্যযূগীয় পদ্ধতি

খামারবাড়ির বাইরে বাতাস প্রচন্ড বেগে গর্জন করে বয়ে যাচ্ছে কিন্তু বাড়ির ভেতর ফায়ারপ্লেসের অগ্নিকুণ্ড অবিরামভাবে জ্বলছে। বাড়ির গৃহিনী তাঁর রান্নাঘরের পরিচ্ছন্নতার ব্যপারে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। আজ মোটামুটি সবকিছু গুছিয়ে এনেছেন। মনে মনে এজন্য বেশ আনন্দ বোধ হচ্ছে তাঁর। আসন্ন শীতের জন্য তিনি এখন যথেষ্ট প্রস্তুত। দেয়ালের দিকে একটু চোখ বুলাতেই চোখে পড়ল কাঠিতে গেঁথে রাখা লবণ দিয়ে সংরক্ষন করা সামুদ্রিক মাছগুলো মোমবাতির আলোয় কেমন যেন এক সোনালি আভায় জ্বলছে। তার পাশেই রয়েছে ছাল ছাড়ানো ধোঁয়াটে ঈল আর স্যামন মাছ। এর উপরে ছাদ থেকে ঝুলানো একটা স্ফীত জালের মধ্যে রাখা আছে প্রয়োজনীয় পরিমান কুমড়ো ও পেঁয়াজ। আর তার সাথে আরো আছে আপেলের শুষ্ক শাঁষ। তিনি এখান থেকেই চিমনীতে রাখা শুকরের লবনাবৃত রান আর পিঠের মাংসের গন্ধ পাচ্ছেন, আর চোখে না পড়া আরো অনেক খাদ্যসম্ভারের হিসেব গৃহিনীর মনে পড়ছে। তার মধ্যে রয়েছে শুষ্ক করে রাখা বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ, কাঠের গুড়োর মধ্যে রাখা মোমাবৃত ডিম আর খড়ের গাদায় প‌্যাকেট করা শুষ্ক মাংস।

রোদে ও বাতাসে শুকানো খাবার

রান্নাঘরে খাবার টেবিলে বেশ আরাম করে সুস্বাদু কডফিস খাচ্ছেন গৃহকর্ত্রীর স্বামী। অথচ এই খাবারটুকু তৈরী করতে তাঁকে ঝক্কি কম পোহাতে হয়নি। খাবার তৈরীতে শারিরীক পরিশ্রমের চেয়ে মানসিক পরিশ্রমটাই বেশি। তাঁকে কম করে হলেও দুঘন্টা ধরে এই মাছটুকু পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়েছে, তারপর মাখন মেখে খাবার পরিবেশন করলেন।

খাবার সংরক্ষনে দক্ষিনান্চলের দেশগুলোর প্রাচীন পদ্ধতি মূলত দুটি। প্রথমটি রোদে খাবার শুকিয়ে এবং অপরটি হলো খাবারকে বালিতে পুঁতে রেখে। তবে এর খানিকটা উত্তরের লোকজন বাতাসকেও খাবার শুকানোর পন্থা হিসেবে ব্যবহার করতে পছন্দ করতেন। এ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত মাছ প্রায় অক্ষত অবস্থায় অনেকদিন থাকত। জাহাজের নাবিকগন লম্বা সফরে যাওয়ার সময় সব মাছ এবং মাংসকে জাহাজের ডেকে ঝুলিয়ে বাতাসের সাহায্যে শুকিয়ে তার সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতেন।

হেরিং এর ব্যারেল

মধ্যযূগে খ্রীস্টীয় ক্যালেন্ডারের প্রায় অর্ধেকটাতেই মাংস, ডিম এবং দুগ্ধজাত খাবার নিষিদ্ধ ছিল। আর তাই শুকনো মাছই ছিল ইউরোপীয় জনগনের খাদ্যতালিকার প্রধান অংশ। মধ্যযূগীয় ইউরোপীয়দের লবনাবৃত এবং শুষ্ক মাছের যোগান দিত উত্তর সাগরের মৎস ব্যবসায়ীগন। হেরিং এক ধরনের মোটাসোটা ধরনের মাছ যা চর্বি আর তেলে ভরা। এটি সমুদ্রে ধরা পড়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পঁচতে ও গলতে শুরু করে। এজন্যে জেলেরা বন্দরে পৌছানোর আগেই এ মাছের লবনীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে দিতেন। তাঁরা জাহাজে থাকতেই হেরিংয়ের পেট থেকে নাড়িভূড়ি অপসারণ করার পর ব্যারেলের মধ্যে স্তরীকৃত লবন দিয়ে প‌্যাক করে রাখতেন।

শুষ্কায়ন এবং লবনীকরনের পাশাপাশি ধূমায়ন খাবার সংরক্ষনের সাধারন গার্হস্থ প্রক্রিয়া। লাল হেরিং মাছ, ভেড়া ও শুকরের মাংস প্রভৃতিকে সাধারনত চিমনীতে ঝুলিয়ে রেখে ধূমায়িত করে সংরক্ষন করা হতো। এভাবে সংরক্ষিত মাংসকে খাওয়ার উপযোগী করতে অর্থাৎ এর লবনাক্ততা, মিষ্টতা, আর্দ্রতা ইত্যাদি দূর করতে অনেক সময় ধরে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হতো।

অথচ সময়ের পরিবর্তন এসেছে। এখন যে কোন খাবার টাটকা রাখার জন্য শুধু রিফ্রিজারেটরে রাখলেই হয়। তা বছরখানেক ধরে টাটকা থাকে।

No comments: