Sunday, February 22, 2009

২০০৮ এ বাংলাদেশের গুরুত্বপুর্ন ঘটনাগুলো (জানুয়ারী এডিশন)

২০০৮ এ বাংলাদেশের গুরুত্বপুর্ন ঘটনাগুলো (জানুয়ারী এডিশন)

০১ লা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:৪৭

শেয়ার করুন: Facebook

১ জানুয়ারী:
সিডরে বিদ্ধস্ত দেশে নববর্ষের আগমন।
৪৩ ভিভিআইপির বিরুদ্ধে ৫৩ মামলার আইনি কার্যক্রম শুরু।

২ জানুয়ারী:
দুই নেত্রীকে দেশছাড়া করার ব্যর্থ চেষ্টা।

৭ জানুয়ারী:
তাজ্জবভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের স্বর্ণালংকার চুরি।

৮ জানুয়ারী:
চার উপদেষ্টার পদত্যাগ।


৯ জানুয়ারী:
নতুন পাঁচ উপদেষ্টার শপথ গ্রহন।

১১ জানুয়ারী:
নিমতলী বস্তিতে দেড়হাজার ঘর পুড়ে ছাই।

১৩ জানুয়ারী:
নির্দোষ দাবী করে কাঠগড়ায় শেখ হাসিনার কান্না।

১৪ জানুয়ারী:
বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল দীন এর শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ।

১৭ জানুয়ারী:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা স্থগিত।

১৮ জানুয়ারী:
খালেদা জিয়ার মায়ের মৃত্যু।

১৯ জানুয়ারী:
খালেদা জিয়াকে তাঁর মায়ের লাশ দেখতে দেয়ার জন্য প্যারোলে মুক্তি।

২১ জানুয়ারী:
২০০৭ এর আগস্টের ছাত্র অসন্তোষ ঘটনায় বন্দী ৪ শিক্ষক ও ১১ ছাত্রের মুক্তি।

২৪ জানুয়ারী:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করার ব্যাপারে আজম জে চৌধুরীর অস্বীকার।

২৯ জানুয়ারী:
বাংলাদেশে সিডরে আক্রান্তদের জন্য সৌদী আরবের এক নাম জানাতে অনিচ্ছুক দাতার ৯শ কোটি টাকা দান।

সত্য বেফাঁস হয়েই বেরিয়ে গেল প্রধান পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যে

সত্য বেফাঁস হয়েই বেরিয়ে গেল প্রধান পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যে

০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:৫৪

শেয়ার করুন: Facebook

গত দুটি বছর জরুরী অবস্থার মধ্যে দেশের মানুষকে জিম্মি করে তত্তাবধায়ক সরকার দেশের মানুষকে নীতি শেখাতে চেয়েছিলেন। দেশের রাজনীতিবিদদের দুর্ণীতিগ্রস্ত আর স্বৈরাচার প্রমান করতে চেয়েছিলেন তারা। তারা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তাঁদের সময়কালে পরিচ্ছন্ন ভাবে পরিচালনা করে আগামীর দেশচালকদের কাছে নজীর সৃষ্টি করতে চান জানিয়ে টিভি রেডিও আর ইন্টারনেটে তা তুমুলভাবে প্রচার করেছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে তারা কি করেছিলেন?

তাঁরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে ঢেলে সাজিয়েছেন, কেননা এর আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা নাকি এই কাজে সক্ষম নন। তাই এলেন হাসান মশহুদ চৌধুরী। যিনি কিনা আগের তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে সামরিক বাহিনীকে মাঠে নামানোর বিরোধীতা স্বরুপ পদত্যাগ করেছিলেন। আর পরে সামরিক শাষিত সরকারের অন্ধ গোলামী করতে এলেন দুর্নীতি দমন কমিশনে। যা করলেন গত দুবছরে সবার চোখের সামনে থেকে এখনো মিলিয়ে যায়নি।

তত্তাবধায়ক সরকার পুলিশকে বারবার রাজনৈতিক সরকারের হয়ে কাজ করার অভিশাপ থেকে দুর করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে বড় বড় কথাও হয়েছে অনেক। আর তাদের এক্ষেত্রে অবদান কি ছিল তা বেফাঁস হয়ে বেরিয়ে গিয়ে সত্যকে উদ্ভাসিত করে দিয়েছে প্রধান পুলিশ কমিশনারের আবেগী বক্তব্যের মাধ্যমে। তিনি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে বেফাঁসভাবেই বলে দিলেন, " গত সাইত্রিশ বছরে কি আমরা একবারও পেরেছি স্বাধীনভাবে কাজ করতে?"

উল্লেখ্য এই সাইত্রিশ বছরের মধ্যে শেষ দুবছর হলো বর্তমান তত্তাবধায়ক সরকারের শাষনামল।

আমরা কি আদৌ কখনো পরিবর্তন দেখতে পাব এদেশে?

আমরা যে এ রাজ্যের রাজার মতই...

আমরা যে এ রাজ্যের রাজার মতই...

১০ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৪৯

শেয়ার করুন: Facebook

একটা রাজ্য ছিল কিন্তু তার কোন রাজা ছিল না। কেউ রাজ্যের রাজা হতে চায়না। জনগন মাথায় হাত দিয়ে দিনের পর দিন একজন রাজার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে। কিন্তু কোন পথচারীই জনগনের শর্ত মেনে রাজা হবার আগ্রহ প্রকাশ করতে চায়না, আর রাজ্যের লোকতো নয়ই।

এ রাজ্যের রাজা হতে গেলে শুধু একটা শর্ত মাথা পেতে নিতে হত। তা হল ঠিক পাঁচ বছর পর রাজাকে রাজ্যের সবচেয়ে দূর্গম এলাকায় নির্বাসনে যেতে হবে। সে দুর্গম স্থানটি এতই অবাসযোগ্য যে এখানে নেই কোন খাবার অথবা পানি। আর এই প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রাজ্যের সবচেয়ে কাছের ভাল কোন স্থানেও পৌছানো সহজ নয়। এ পর্যন্ত যত রাজাই নির্বাসনে গিয়েছেন, তাঁদের কাউকেই আর জনপদে দেখা যায়নি, বরং প্রতিবার ওখানে কোন রাজাকে নির্বাসনে পাঠানোর সময় ওখানে নতুন একখানা মনুষ্য কঙ্কালের দেখা মিলেছে।

সে যা হোক। দেশের জনমানুষের ভাগ্যের দ্বার খুলে দিয়ে একজন অজানা যুবক পথিক হঠাৎই রাজা হতে রাজী হয়ে গেল। সবাই রাজাকে সম্মান জানালেন। দেশের সকল সম্পদ এবং আনুগত্য সেই রাজার পায়ে ঢেলে দেয়া হলো। তবে এই রাজা এই সম্পদ ও আনুগত্যে আগের রাজাদের মত আনন্দ ও গৌরবে আত্নহারা হয়ে গেলেননা। বরং প্রথম বেশ কয়েক রাততো একবারের জন্য এক করতে পারলেননা। তিনি পাঁচ বছর পরের দুর্দশার কথা ভাবতে লাগলেন আর কাঁদতে লাগলেন। আর দিনরাত ভাবতে লাগলেন এ বিপদ থেকে বাঁচতে হলে কি করা যায়। পেয়েও গেলেন একটা কঠিন উপায়। আর সংগে সংগেই মাঠে নেমে গেলেন। তাঁর রাজ্যের বিভিন্ন দ্রব্যাদি উৎপাদনের মাত্রা বাড়ানোর তাগিদ দিতে লাগলেন জনগনকে। এর জন্য তাঁর পক্ষ থেকে যত সাহায্য করা সম্ভব ছিল তার সবই করলেন। রপ্তানী আয় চরমে উঠে গেল। আর এ আয় দিয়ে তিনি রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সেবাখাতের উন্নতি করতে লাগলেন। নতুন নতুন টেকনোলজীর উদ্ভব করালেন বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে। তাঁরা সহজ চাষ পদ্ধতি ও সেচ পদ্ধতির উন্নয়ন করলেন। আর তাদিয়ে রাজা প্রত্যন্ত এলাকায়ও চাষবাসের ব্যবস্থা করলেন। নতুন নতুন জনপদ তৈরী হলো। সারারাজ্যের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসালয় স্থাপন করলেন, আরো তৈরী করলেন পাণ্থশালা। জনগন রাজ্যের রাজধানীর প্রতি অনুরক্ততা কমিয়ে, সারারাজ্যে ভাগ্যের উন্নয়নে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। সবস্থানেই নগরায়ন তরান্বীত হল। আর এতসব করতে গিয়ে রাজা তাঁর যত যোগ্যতা তার সব ঢেলে দিলেন। এজন্যে তিনি কখনোই দুঘন্টার বেশি ঘুমুতে পারতেননা। নির্ঘুম রাত্রিযাপনের কারনে তাঁর চোখের নিচে কালি পড়েছে, শরীর হাড় জিরজিরে হয়ে গেছে। আর এর মধ্যে কখন যে পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে তা তিনি বুঝতেই পারেননি।

পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ। রাজ্যের জনগন সব রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। রাজ্যের নতুন জনপদগুলো থেকে সবাই রাজধানীতে এসে জমায়েত করল। তারপর রাজাকে সসম্মানে গদি থেকে নামানো হলো। বিশাল ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠান শেষে তাঁকে আগের রাজাদের মত নির্ধারিত স্থানে নির্বাসনের জন্য নিয়ে যাওয়া হলো। যাত্রাপথেই বেশ কয়েকটা নতুন জনপদে তাঁকে বিদায় জানানো হল।

গন্তব্যে পৌছানোর পর সবাই তাজ্জব হয়ে গেল। একি!! এ জায়গাতো আর আগের সেই বিরানভূমি নেই। রাজ্যের সবচেয়ে ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের পরিশ্রমের মাধ্যমে রাজ্যের সবচেয়ে দূর্গম এ স্থানটি এক বিশাল জনপদে পরিণত হয়ে গেছে। সুজলা আর সুফলা হয়ে গেছে। নেই খাবারের অভাব, কিংবা পানির অভাব। এখানকার মানুষজন আগে থেকেই সাবেক রাজার জন্য ভালবেসে একটা প্রাসাদ তৈরী করে রেখেছে। এখানে রাজা চাইলে সুখে সাচ্ছন্দেই বিয়ে শাদী করে জীবনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দিতে পারবেন।

রাজার এই দুরদৃষ্টি দেখে রাজ্যবাসী এরকম যোগ্য শাষকের শাষন থেকে মুক্ত হতে চাইলেননা। তাঁকে আজীবনের জন্য রাজা বানিয়ে রাজধানীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো।

আমাদের জীবনটাও এরকমই একরাজ্য, যা কিছুদিনের জন্য রাজত্ব করার জন্য অদৃশ্য থেকে আমরা আদিষ্ট হয়েছি। তারপর একদিন মৃত্যুর করাল গ্রাসে মিলিয়ে যাব অনন্তে। যেখানে থাকবে শুধু এ জীবনের কর্মফল।

(সংগৃহীত ও পরিমার্জিত)

অদৃশ্য অবলোকন

অদৃশ্য অবলোকন

১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৫৬

শেয়ার করুন: Facebook

অদৃশ্য কিছু একটা..

মানবদেহ একটা জটিল সৃষ্টি। এর জটিল ও ভারসাম্যপূর্ন গঠন জ্ঞানী ব্যাক্তিকেই অবাক করে দেয়। মানবদেহের গঠনাকৃতি সম্বন্ধে জানতে ডাক্তারীবিদ্যার শিক্ষার্থীরা তিন প্রফেশনাল পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে চার বছর একটানা পড়াশুনা করতে হয়। কিন্তু তা না করেও মানুষের গঠনের কিছু জিনিস আমরা সহজেই বুঝতে পারি। একটা কম্পিউটার আর একটা মানুষকে স্পেসিমেন হিসেবে সামনে নিয়ে ভাবলে মানুষকে একটা অসাধারন কনফিগারেশনের কম্পিউটার মনে হয়।

কম্পিউটার বা গননাযন্ত্র হলো এমন একটা ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা ইউজারের দেয়া বিভিন্ন তথ্য গ্রহন করে তা কাম্যভাবে প্রোগ্রাম অনুযায়ী প্রক্রিয়াজাত করে ফলাফল প্রদান করতে পারে।

আর মানুষ কি তাতো আমরা প্রতিনিয়তই অনুভব করি। মানুষ নামের রক্ত মাংসের যন্ত্রটিও জন্মের শুরু থেকেই তথ্যের সমাবেশ ঘটাতে থাকে এবং তা প্রতিনিয়ত প্রয়োগ করে করে পৃথিবীর বুকে আমৃত্যু ঘুরপাক খেতে থাকে। বেচে থাকার জন্য মানুষকে নিরন্তর তথ্য গ্রহন করতে হয়, গৃহিত তথ্যগুলোকে ব্যাক্তিজীবনের জন্য উপযোগী করে মস্তিষ্কে সাজিয়ে রাখতে হয় এবং তা ব্যক্তিজীবনে সফলভাবে ব্যবহার করতে হয়।

কম্পিউটারের তিনটা অংশ থাকে। সেগুলো হলো ইনপুট, আউটপুট এবং প্রসেসিং ইউনিট।

ইনপুট: কম্পিউটারের ইনপুট ডিভাইসগুলোর কয়েকটি হলো কিবোর্ড, মাউস, মাইক্রোফোন, ওয়েবক্যাম, সেন্সর ইত্যাদি। আর মানুষের ইনপুট ডিভাইস হলো পাঁচটি। নাক (ঘ্রাণ), চোখ (দৃষ্টি), জিহ্বা (স্বাদ), ত্বক (অনুভুতি), কান (শ্রুতি)। মানুষের আরো একটি ইন্দ্রিয় রয়েছে যাকে আমরা সাধারনত ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে ধারনা করে থাকি। কম্পিউটারে ওয়েবক্যাম দিয়ে চোখের কাজ, মাইক্রফোনকে দিয়ে কানের কাজ এবং বিভিন্ন ধরনের সেন্সর ব্যবহার করে রের মাধ্যমে গন্ধ, স্বাদ এবং অনুভুতি গ্রহনের কাজ করানো সম্ভব।

আউটপুট: কম্পিউটারের আউটপুট হলো মনিটর, স্পিকার ইত্যাদি। মানুষ তার আউটপুটের কাজটি মুখ দিয়ে শব্দ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নড়াচড়ার মাধ্যমে করে থাকে।

প্রসেসিং ইউনিট: রেজিস্টারের জটিল কম্বিনেশনে তৈয়ার প্রসেসরের কাজ হলো কম্পিউটারের ডাটাকে প্রসেস করা। আর অসংখ্য নিউরনের কম্বিনেশনে তৈয়ার মানুষ্য মস্তিষ্কের একটি অংশ দেহের বিভিন্ন ইন্দ্রীয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারোপযোগী করে।

কম্পিউটারের পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য ডিসি বা এসি ইনপুট অথবা ডিসি ব্যটারি ব্যবহার করা হয়। আর মানুষের দেহে পর্যাপ্ত কাঁচামাল দেয়া হলে সে নিজেই প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে শরীরের পাওয়ার সাপ্লাই নিশ্চিত করে। কাঁচামালগুলো হলো খাবার, পানি এবং অক্সিজেনযুক্ত বাতাস।


কম্পিউটার একটা বুদ্ধিমান যন্ত্র আর মানুষ তার চেয়ে এতই বেশি বুদ্ধিমান যে একে কম্পিউটারের সাথে যে আমি মেলানোর চেষ্টা করছি তাতেই পাবনার মানসিক রোগের কোন চিকিৎসকের কাছে আমাকে ডিজিটাল পাগলামীর ব্যপারে রিসার্চ করার জন্য উপযোগী স্পেসিমেন হিসেবে পছন্দ হয়ে যেতে পারে। তারপরও দেখিনা কি হয়।

কম্পিউটারের হার্ডওয়ার সম্পর্কিত কিছু ব্রিফ দেয়া শেষ, এবার সফটওয়ার নিয়ে ঘাটাঘাটি করা যাক। কম্পিউটারকে ব্যবহার করার জন্য প্রথমেই যে সফটওয়ারের প্রয়োজন হয় তা হলো অপারেটিং সিস্টেম। অপারেটিং সিস্টেম হলো এমন একটা সফটওয়ার যা এমন কিছু তথ্য সংরক্ষন করে যাতে কম্পিউটার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সমন্বয় ঘটে। অর্থাৎ অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশকে হিসেব করে রাখে এবং মেশিনের ভাষা ও ব্যবহারকারীর ভাষার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। অপারেটিং সিস্টেম হলো এক প্রকারের দোভাষী।

মানুষের দেহকে যদি একটা কম্পিউটার হিসেবে ভাবা হয় তবে এরও একটা অপারেটিং সিস্টেম প্রয়োজন হবে। একটা কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশকে জোড়া লাগিয়ে দেয়ার সাথে সাথেই এটি কোন কাজ করতে সক্ষম হয়না। তবে এটির মাদারবোর্ডের এমবেডেড সিস্টেম তথা বায়োস এর সকল যন্ত্রাংশগুলো ডিটেক্ট করতে পারে। তারপর এতে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করলেই কম্পিউটার কাজ করতে শুরু করে।

অপরদিকে মানুষের জন্মের পরপরই মানুষ কোন কিছুই করতে পারেনা। তবে নবজাতকের কান্না এবং অল্পদিনেই হাত পা নাড়ানাড়ি দেখে অনায়াসে বোঝা যায় এরও একটা এমবেডেড সিস্টেম দেয়া আছে যার ফলে সে তার শরীরের সকল অঙ্গগুলোকে অনুভব করতে পারে। আর এই সিস্টেমটা হলো তার নার্ভাস সিস্টেম যা জন্মের পর থেকেই কাজ করতে শুরু করে।

অপারেটিং সিস্টেমের যে সফটওয়ারটি আমরা ইন্সটল করি তাতে কি এমন জাদুকরী জিনিস আছে যার কারনে আমাদের কম্পিউটার আমাদের দাসে পরিণত হয় তা আগে মাথায় ঢুকত না। তবে এখন ব্যপারটা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে। আসলে সিস্টেম সফটওয়ার সিডিটি থেকে কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে অসংখ্য তথ্য জমা করা হয়। আর এতেই কম্পিউটার বুদ্ধিমান যন্ত্রে পরিণত হয়। আর যত নতুন সফটওয়ার ইন্সটল করা হয়, ততই কম্পিউটার বুদ্ধিমান হতে থাকে। তবে কম্পিউটারের শারিরীক যোগ্যতা তার বুদ্ধিকে কাজে লাগানোর ব্যপারে শক্তিশালি ভুমিকা পালন করে। কম ক্ষমতার প্রসেসর, RAM ও Motherboard কম্পিউটারের বেশি বুদ্ধিকে ধীরগতিতে ব্যবহার করতে বাধ্য করে। তবে ভাল এলগোরিদম একটা প্রোগ্রামকে সিস্টেমের দুর্বলতাকে উপেক্ষা করে অতি দ্রুত এক্সিকিউট করাতে পারে।

মানুষের ক্ষেত্রেও অনেকটা তাইই। মানুষের জন্মের সময়কার খালি মাথা দিনে দিনে জ্ঞান ও তথ্য দ্বারা সমৃদ্ধ হয়। একজন নবজাতক প্রথমে ক্ষিদেকে অনুভব করতে শেখে, তারপর ধীরে ধীরে মায়ের উপর ভরসা করতে শেখে। আর শেখে হাসতে। কান্না ও হাসিসহ সকল প্রকার অনুভূতি প্রকাশক ভঙ্গী ও আচরন মানুষ জন্মগতভাবে এমবেডেড হিসেবে পেয়ে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে আশপাশের সবকিছু থেকেই শিক্ষা গ্রহন করতে থাকে। বয়স যত বাড়ে তার শরীরের প্রতি ততই তার নিয়ন্ত্রন আসে আর তার ব্যবহার তার কাছে সহজ হতে থাকে। আস্তে আস্তে সে সকলকে অনুকরন করতে চেষ্টা করে আর অজানাকে জানতে চেষ্টা করে। আর সে কারনেই যে পরিবারে ও পরিবেশে একজন শিশু বেড়ে উঠে তার ছাপ পড়ে শিশুর স্বভাবে ও জ্ঞানে। আর মা বাবার কিছু স্বভাবতো শিশু তার সিস্টেমে এমবেডেড হিসেবে পায়ই। শিশু যে পরিবেশে বড় হয় সে সেই পরিবেশের জ্ঞান অর্জন করে। যেমন কারো বাবা মা যদি শিক্ষক হয় তবে তাদের সন্তানও মেধাবী হয়, আবার কারো বাবা যদি কামার হয় তবে সে লোহার আচরন সম্বন্ধে জ্ঞানী হয়ে ওঠে, ইত্যাদি। একজন মানুষের বুদ্ধি পরিমাপ করা যায় তার জ্ঞানের মাধ্যমে। যে লোক যত বেশি জ্ঞান বা তথ্য তার মাথায় জমিয়ে রাখে সে তত বেশি বুদ্ধিমান। তবে দৈহিক বিকলাঙ্গতা মানুষের বুদ্ধিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্র বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও স্টিফেন হকিংসের মতো লোকজন তাঁদের এই বাধাকে তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে গেছেন অনেকদুর।

এবার আসল কথায় আসা যাক। কম্পিউটার আর মানুষের মধ্যে অনেক মিল থাকলেও একটা মৌলিক ক্ষেত্রে ব্যবধান বিশাল। বুদ্ধিমান যন্ত্র কম্পিউটারকে বুদ্ধিমান করে তোলে কোন একজন বা একদল মানুষ। অতএব কম্পিউটার তার কাজের জন্য মানুষের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ একটা সম্পুর্ন সিস্টেমকে জোড়া লাগানোর পর তাকে অবশ্যই একটা অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করতে হয়। তাকে মানুষের মত সকল ক্ষমতা দেয়ার পরও সে নিজে নিজে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে না। ফরমেটেড হার্ডডিস্ক বিশিষ্ট একটা সুপার কম্পিউটারের মাইক্রোফোন কোন শব্দকে তার স্মৃতিতে সংরক্ষন করতে পারেনা। পারেনা ক্যমেরার মাধ্যমে কোন ছবিকে সংরক্ষন করতে। শোনা ও দেখার ক্ষমতা দেয়া একটা রোবট কখনোই নিজে নিজে কোন কাজে পারদর্শি হতে পারেনা।

অপরদিকে ফরমেটেড হার্ডডিস্ক বিশিষ্ট মানব শিশু নিজে নিজেই চোখ দিয়ে দেখা ছবিকে সংরক্ষন করে, কানে শোনা শব্দকে মনে রাখে এবং বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী হয়ে ভবিষ্যত জীবনে কাজে লাগায়।

এর কারন কি? এর কারন খুজতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম যে, কম্পিউটার বা যে কোন মেশিনই তার ব্যবহারকারীর মুখাপেক্ষী, এমনকি মানুষের শরীরও। মানুষের শরীরেরও একজন ব্যবহারকারী থাকে। মানবদেহ যতক্ষন সে ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রনে থাকে ততক্ষন সে স্বাভাবিকভাবে কাজ করে, অপরদিকে ব্যবহারকারীর অনুপস্থিতিতে মানুষ অচল হয়ে পড়ে। এখন মানবদেহের ব্যবহারকারীটি কে? তা হল "আত্না"। আত্না যে মানবদেহের মূল সন্জীবনী তার কিছু কিছু প্রমানের দেখা মেলে:

১. মানুষের ঘুমের সময় আত্না শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। অথচ শরীর বেচে থাকে। তাই এ অবস্থায় আশপাশে ঘটে যাওয়া কোন কিছুই তার কানে বা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে মস্তিষ্কে জমা হয়না। অনেকে ঘুমের ভেতর হাটে, কথা বলে অথচ ঘুম থেকে উঠে মনে করতে পারেনা। ঘুমের মাঝে দেখা অসংখ্য স্বপ্ন হারিয়ে যায় স্মৃতি থেকে অথচ ঘুম ভাঙার ঠিক আগের মুহুর্তের স্বপ্ন মানুষ মনে রাখতে পারে।

২. মানুষ তার মায়ের পেটে বেড়ে উঠার সময়কার কথা মনে করতে পারেনা। আত্না বলে কিছু যদি সত্যিই জন্মের সময় আমাদের দেহে প্রবেশ না করত তবে এমনটা হতনা। আর তাছাড়া ধর্মীয় গ্রন্থের ভাষ্যমতে মানুষের আত্নার সৃষ্টি করা হয়েছে একই সাথে, অথচ জন্মের আগেরকার কোন কথা সে মনে করতে পারেনা। এবং বলা আছে মৃত্যুর পর মানুষ তার কোন কিছুই মনে করতে পারবেনা। কবরের প্রশ্নকর্তাদের প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করলেও তখন কোন কাজে আসবেনা। এর কারন হলো আত্নার কোন মগজ নেই এবং এর স্মৃতি ধারন ক্ষমতা নেই। তবে মানবদেহের স্মৃতি ধারন ক্ষমতা আছে কিন্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু করার ক্ষমতা নেই। তবে আত্না মানবদেহকে ব্যবহার করতে সক্ষম। অর্থাৎ বলা যায় আত্না হলো মানুষের স্বয়ংক্রিয় প্রসেসর যা নিজে নিজেই ইনপুট ডিভাইস ইন্দ্রিয়কে ব্যবহার করে স্মৃতিতে তথ্য সংরক্ষন করে এবং প্রয়োজনে ব্যবহার করে শরীরকে পরিচালিত করে।

৩. আত্না নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন। আত্না মানুষের দেহকে যে কোন দিকেই পরিচালিত করতে পারে। একই বাবা মার দু সন্তানকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তাদের কিছু স্বভাবে তাদের বাবা মা ও পরস্পরের সাথে মিল থাকলেও বিরাট অমিলও পাওয়া যেতে পারে। একই পরিবেশে বড় হওয়ার পরও তাদের নিজেদের বিশেষ বিশেষ দিকে বেশি ধাবিত হবার ফলে আচরনে বিরাট ফারাক দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একই বাবা মার সন্তান হয়েও একজন হয় বাবা মার চেয়েও বেশি জ্ঞানপিপাসু এবং ভাইবোনের চেয়ে বেশি সৎ অপরদিকে অপর ভাইবোন আনন্দপিপাসু এবং অসৎ। এর পশ্চাতে তাদের বন্ধু বান্ধবদের সংগ বিশেষ ভুমিকা পালন করে। আনন্দ ও বিনোদন সবার কাছেই প্রিয় হলেও কেউ এতে গা ভাসিয়ে দেয় আবার কেউ তার পরিবর্তে পরিশ্রম করতে বেশি পছন্দ করে। এটা আত্নার উদারতার উপর নির্ভর করে।

আরো অনেক ধরনের যুক্তি থাকতে পারে, তবে এটা অবশ্যই ঠিক যে, একটা অদৃশ্য শক্তি আমাদের দেহে অবস্থান করছে যা আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে ধরা দেয়না। আর এর কার্যকলাপও বিস্ময়কর। আর শরীরটা হল এই অদৃশ্য জিনিসটার একটা খেলনা, আত্না যেভাবে বলে শরীর সেভাবে কাজ করে। একই রকম দেখতে অথচ দেখা যায় একজন আরেকজনকে পিটিয়ে দিনে দুপুরে হত্যা করছে, মৃতদেহের উপর লাফাচ্ছে।

স্পষ্টই অদৃশ্য এই শক্তিটার নিয়ন্ত্রন কোন দৃশ্যমান শক্তির হাতে নয়। বরং এর নিয়ন্ত্রন যদি কারো হাতে থাকে তবে তা অবশ্যই আরেক অদৃশ্য শক্তির হাতেই হবে। আর সে শক্তিই এর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি পৃথিবীর প্রথম দম্পতি আদম ও হাওয়া হতেই আমাদের বংশবৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রেখেছেন। সৃষ্টি করেছেন মহাজগত। আর প্রতিটা আত্নাকে ধারাবাহিকভাবে কোন একটা করে শরীরের ভেতরে বন্দী করে পরিক্ষা নিচ্ছেন আত্নাগুলোর প্রকৃতির। এর ফলাফল ঘোসিত হবে হাশরের ময়দানে এবং পুরস্কার হিসেবে দেবেন জান্নাত ও শাস্তি হিসেবে জাহান্নাম।

দুর্নীতি কি থামিবে?: ঈশপীয় দৃষ্টিতে

দুর্নীতি কি থামিবে?: ঈশপীয় দৃষ্টিতে

১৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:১৪

শেয়ার করুন: Facebook

ঈশপ একদিন কোন জনসমাবেশে বিশেষ একটা কারনে একটা গল্প বলেছিলেন। গল্পটা এক শিয়ালকে নিয়ে।

এক শিয়াল নদীর পাশ দিয়ে শুকনো স্থান দেখে দেখে চলছিল। হঠাৎ শিয়ালটা দুর্ঘটনাক্রমে নদীর পাশের এক কাদামাখা গর্তে পড়ে গেল। গর্তে তার অবস্থানটা এমন বেকায়দায় ছিল যে, কিছুতেই সে ছোট্ট এই গর্ত থেকে উঠতে পারছিলনা। এই বিপদের মধ্যেই আবার আরো কঠিন আপদের দেখা পেল শিয়ালটি। গর্তটা পুরোটাই ভরা ছিল একগাদা ক্ষুধার্ত জোঁকে। গর্তে পড়ার পর থেকেই শিয়ালের পুরো শরীরে যতগুলো পারল ততগুলো জোঁক ছেকে ধরল। আস্তে আস্তে রক্ত চুষে খেতে খেতে জোঁকগুলো ফুলে গেল। এমন সময় এক সজারু গর্তের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। শিয়ালকে বিপদে পড়তে দেখে তার খুব মায়া হল। আর তাই সে তার সাধ্যমত শিয়ালকে সাহায্য করার জন্য গর্তের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল। শিয়ালের গায়ে অসংখ্য জোঁক লেগে থাকতে দেখে সে শিয়ালকে বলল, "ওহে শিয়াল মামা, তোমার গায়ের জোঁকগুলোতো তোমায় অনেক কষ্ট দিচ্ছে, তাই আমি তোমার শরীরের ঐ জোঁকগুলোকে সরিয়ে তোমাকে এই কষ্টের হাত হতে রেহাই দেয়ার জন্য তোমার অনুমতি প্রার্থনা করছি।"
এই কথা শুনে বুদ্ধিমান শেয়াল আৎকে উঠল এবং বলল, "তুমি যদি আমায় সাহায্য করতে এসে থাক, তবে একাজটি অন্তত করোনা। যে জোঁকগুলোকে আমার শরীরে লেগে থাকতে দেখছ, এরা অনেকক্ষন আমার রক্ত খেয়ে তাদের ক্ষুধাকে নিবারন করেছে। এখন এদের পেটে আমার রক্ত খাবার মত আর কোন জায়গা নেই। কিন্তু তুমি যদি এদের সরিয়ে দাও তবে এদের জায়গায় নতুন করে অন্য জোঁক এসে জুটবে, যাদের পেটে ক্ষুধা রয়েছে। আর তখন ঐ ক্ষুধার্ত জোঁকগুলো আমার শরীরের বাকি রক্তও শেষ করে ফেলবে।"

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই গল্পকে আমার কাছে একটা অত্যন্ত ভাবনার বিষয় মনে হচ্ছে। গত নির্বাচনে আমরা সবাই মিলে দুর্নীতিকে ব্যলটের মাধ্যমে না বলেছি, আর তার ফলাফল হলো হাই প্রোফাইল দুর্নীতির নায়ক ও তাদের দলের ভরাডুবি। নতুন সরকার এল, প্রায় ধলা এক মন্ত্রীপরিষদ আমরা পেলাম। কিন্তু দুর্নীতি কি আদৌ থামবে? ঐসব পুরোনো মানুষের রক্তের টাকা খাওয়া সাবেক মন্ত্রীদের তুলনায়তো এরা অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। মন্ত্রনালয়ের হাজার কোটির কিছু অংশ সুযোগমত ফাঁক ফোকর গলে তাদের পকেটে আসার সুযোগ হলে কি তাদের মনে পুরোনো গাড়িটা বদলে নেয়ার এবং ভাঙা বাড়িটাকে প্রাসাদের রূপ দেয়ার ইচ্ছে করবে না? ধরি নাও করতে পারে। কিন্তু এই এজাম্পসনের পরিবর্তে আমরা নিশ্চিত হওয়াকেই বেশি পছন্দ করব।

দুর্নীতি থেকে বাচার ব্যপারে নিশ্চিত হতে দুটো পথ সম্বন্ধে ভাবা যেতে পারে। এক. আগের প্রমানিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা যাতে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্তরাও ভয়ে শিউরে উঠে। দুই. মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের তাদের উপযোগী পারিশ্রমিক দেয়ার মাধ্যমে দুর্নীতির প্রতি তাদের আকর্ষনকে ধ্বংশ করা।

(বি: দ্র:- এটা কোন বিশেষজ্ঞের বক্তব্য নয়, এটা একজন বিশেষ অজ্ঞের বক্তব্য। তাই এই বক্তব্যকে ভেবে চিন্তে গ্রহন করবেন।)