Thursday, October 9, 2008

পাশ্চাত্যে ইসলাম বিদ্বেষী প্রবণতা

পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে অব্যাহতভাবে ইসলাম অবমাননার বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বসহ বিশ্ব সমাজ ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছে। তো, পাশ্চাত্যে ইসলাম অবমাননার নেপথ্য কারণ নিয়ে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সাথে। এখানে তাঁর সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হলো :

** পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকা চালিয়ে যাচ্ছে। ডেনমার্কে নবীজীর অবমাননা করে কার্টুন ছাপানোর পর বিশ্বের সভ্য সমাজ তার বিরুদ্ধে ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছে। তারপরও ধর্মনিরপেক্ষতার দাবীদারদের আচরণে কোনো পরিবর্তন আসে নি। তো পশ্চিমারা যে এরকম আচরণ করে যাচ্ছে তার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন।

ড. আনিসুজ্জামান : এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তবে আমার মতে প্রধান কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ঈর্ষা। তৃতীয় কারণ হচ্ছে, কিছু লোক আছে যারা সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট, তারা ইসলামের উত্থানকে পছন্দ করে না। কিন্তু আগামী দিনে ইসলামের অভ্যূদয় সূর্যালোকের মতই নিশ্চিত ও উজ্জ্বল।

** ইউরোপীয়রা নিজেদেরকে বাক স্বাধীনতার প্রবক্তা বলে দাবী করছে। অথচ তারাই আবার হলোকাস্টের বিরুদ্ধে কথা বলা বা এ নিয়ে গবেষণা করাকে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ইসলাম বিরোধী বই লেখার কারণে সালমান রুশদিকে পুরস্কৃত করেছে এবং বহু দেশে হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। তো এরকম দ্বৈত আচরণ করা থেকে কি মনে হয় না , বাক-স্বাধীনতার কথাটা আসলে পশ্চিমাদের একটা মুখরোচক বুলি ছাড়া আর কিছু নয়।

ড. আনিসুজ্জামান : পাশ্চাত্যে দুই ধরণের মানদন্ড ব্যবহার করে যেটিকে আমরা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বলি। বেশ কিছু লোক আছে যারা তাদের আচরণ এবং বক্তব্যের ভিতরে বিপরীতধর্মী অবস্থানের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। তারা যা বলে তা মিন করে না। কিন্তু পুরা পাশ্চাত্যকে আমি এরকম মনে করবো না। কিছু বিবেকবান লোকও সেখানে রয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, পাশ্চাত্যে কিছু লোক প্রতিনিয়ত ইসলামকে অবমাননা করে যাচ্ছে। কেবল পাশ্চাত্যেই নয় আমাদের দেশেও এধরণের লোক আছে। মুসলমানদের ঘরে জন্মগ্রহণ করার পরও অনেকেই ইসলাম অবমাননাকর কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে।

** আমরা লক্ষ্য করেছি যে,ইসলামের এতো বিরোধিতা সত্ত্বেও পশ্চিমা বিশ্বে কিন্তু ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হবার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তাহলে কি বলা যায় যে মুসলমান হবার প্রবণতা রোধ করার জন্যে ইসলামের বিরুদ্ধে এই আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া?

ড. আনিসুজ্জামান : এটা আংশিক সত্য ।এর সাথে অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, বিদ্বেষ এগুলোও যুক্ত।

** বিশ্বের সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে ইসলাম ১৪ শ' বছর আগে একটা উন্নত সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। যেই সভ্যতা যুগের সকল অন্ধকার দূর করে দিয়ে মানুষকে দিয়েছে উন্নত এক জীবনের আলো। তো পশ্চিমাদের এই ইসলাম অবমাননার মাধ্যমে কি ইসলামের সেই আলোকে নিভিয়ে দেওয়া সম্ভব?

ড. আনিসুজ্জামান : কেউ কেউ এই ডেলুশনে ভুগছেন সবাই না। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে বলেছেন, তারা মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তার আলোকে প্রজ্জ্বলিত করবেন। সুতরাং আমাদের আশাবাদী হতে হবে , আল্লাহ যে রাব্বুল আলামীন এবং রাসূল (সাঃ) যে রহমাতুল্লিল আলামীন এই শিক্ষার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সকল অজ্ঞ ও ইসলাম বিদ্বেষীদের মোকাবেলা করতে হবে


পাশ্চাত্যে ইসলাম বিদ্বেষী প্রবণতা : এ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা

** পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকা চালিয়ে যাচ্ছে। ডেনমার্কে নবীজীর অবমাননা করে কার্টুন ছাপানোর পর বিশ্বের সভ্য সমাজ তার বিরুদ্ধে ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছে। তারপরও ধর্মনিরপেতার দাবীদারদের আচরণে কোনো পরিবর্তন আসে নি। তো পশ্চিমারা যে এরকম আচরণ করে যাচ্ছে তার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন।

এ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা : পশ্চিমা সভ্যতায় সমাজতন্ত্রের পতনের পর নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ কিংবা মুক্তি সংগ্রামে লিপ্ত মানুষের জন্যে ইসলামই হচ্ছে মূল চালিকা শক্তি , তাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার উৎস । ফলে পশ্চিমারা একটা লক্ষ্য ঠিক করে রেখেছে যে মানুষের জন্যে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ধর্ম সেই ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচার প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে হেয় করা এবং মুসলমানদের মৌলবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদেরকে বিশ্বসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা । তারা তাদের এই লক্ষ্যের এক পর্যায়ে এসে সরাসরি রাসুলে করিম (সা:)এর উপর কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র একে বা নানা ধরণের বিদ্রুপাত্মক কথা বলে তাকে অবমানানার চেষ্টা করছে ।আর তাদের এ পরিকল্পনার বিষয়টি আজকের নয় । বেশ আগ থেকে তারা এ অপচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র করে আসছে এবং বর্তমানে এ কাজে তারা আরো কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

** ইউরোপীয়রা নিজেদেরকে বাক স্বাধীনতার প্রবক্তা বলে দাবী করছে। অথচ তারাই আবার হলোকাস্টের বিরুদ্ধে কথা বলা বা এ নিয়ে গবেষণা করাকে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ইসলাম বিরোধী বই লেখার কারণে সালমান রুশদিকে পুরস্কৃত করেছে এবং বহু দেশে হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। তো এরকম দ্বৈত আচরণ করা থেকে কি মনে হয় না , বাক-স্বাধীনতার কথাটা আসলে পশ্চিমাদের একটা মুখরোচক বুলি ছাড়া আর কিছু নয়।

এ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা : এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই । কারণ মৌলিক অধিকার হচ্ছে আমি আমার বিশ্বাস , আমার অধিকার ও আমার আদর্শ নিয়ে চলব। আমার শালীনতার মাত্রা আমি নির্ধারণ করব ' কিন্তু সেগুলো তারা মানছে না । মুসলিম নারীদের হিজাবের বিষয়টি শালীনতার বিষয়টি ইউরোপে প্রবেশ করুক এটা তারা চাচ্ছে না । আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে ফ্রান্স বা ইউরোপের অন্যান্য দেশে তাদের দাবীকৃত কোন মৌলাবাদী গিয়ে তো আর মেয়েদের হিজাব পরানোর জন্যে উৎসাহিত করছে না । নারীরা নিজেদের শালীনতার জন্যে ইসলামী আইন মেনে হিজাব পরছে । পশ্চিমারা অনুভব করছে ইসলাম বিরোধী এত সব প্রচার প্রচারণা বা পরিকল্পনার পরও স্বপ্রণোদিতভাবে মানুষের ইসলাম গ্রহণ করার যে হিড়িক পড়ে গেছে তাতে তারা আতঙ্কিত বোধ করছে। আর তাই তারা আজ ইসলামের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে ।

** আমরা লক্ষ্য করেছি যে,ইসলামের এতো বিরোধিতা সত্ত্বেও পশ্চিমা বিশ্বে কিন্তু ইসলামে ধর্মে দীক্ষিত হবার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তাহলে কি বলা যায় যে মুসলমান হবার প্রবণতা রোধ করার জন্যে ইসলামের বিরুদ্ধে এই আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া?

এ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা : আপনার এ বক্তব্যের সাথে আমি পুরোপুরি একমত । গ্রেট ব্রিটেন বা যুক্তরাষ্ট্রে শান্তির ধর্ম ইসলাম গ্রহণকারীর সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ আমরা সকলেই জানি আধুনিক সমাজ ও সভ্যতার মূল ভিত্তি হচ্ছে পরিবার ব্যবস্থা , পরিবারের ঐক্য ইত্যাদি ।কিন্তু বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে সেই পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাচ্ছে , পরিবারের ঐক্য নষ্ট হচ্ছে, পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন ভাবে জীবন যাপন করছেন। ঐ সব সমাজের এক এক ব্যক্তি অগণিত বিয়ে করছে তারপরও শান্তি পাচ্ছে না ।তাদের জীবনে প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে শৃঙ্খলার অভাব , দেখা যাচ্ছে পারিবারিক অশান্তি । এখানে উল্লেখ্য যে ইসলামের যে আদর্শ পরিবার প্রথা, সাম্য ,ভ্রাতৃত্ববোধের কথা বলা হয়েছে তা ঐ সব সমাজে অনুপস্থিত ফলে তারা শান্তির জন্যে জীবনের শৃঙ্খলার জন্যে সুন্দর জীবনের জন্যে ইসলামের পথে আসার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর ঠিক একইভাবে মরিয়া উঠেছে পশ্চিমা সভ্যতারধারকরা যে কিভাবে মানুষের এই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার প্রবণতা রোধ করা যায় ।

** বিশ্বের সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে ইসলাম ১৪ শ' বছর আগে একটা উন্নত সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। যেই সভ্যতা যুগের সকল অন্ধকার দূর করে দিয়ে মানুষকে দিয়েছে উন্নত এক জীবনের আলো। তো পশ্চিমাদের এই ইসলাম অবমাননার মাধ্যমে কি ইসলামের সেই আলোকে নিভিয়ে দেওয়া সম্ভব?

এ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা : না , ইসলাম অবমাননা করে পশ্চিমারা ইসলামের যে আলোকিত ধারা তাকে তারা কোনোভাবেই নিভিয়ে দিতে পারবে না । পশ্চিমারা আফগানিস্তানে , ইরাকে বা ফিলিস্তিনীদের উপর যে অত্যাচার চালাচ্ছে তাছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের সৃষ্ট কারাগারগুলোতে মানুষের উপরে যে নির্যাতন চালিয়েছে বা এখনও চালাচ্ছে তাতে আমার তো মনে হয় তাদের ভেতরেই ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। আপনারা লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে একটা ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কাজেই আমি মনে করি যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে পাশ্চাত্য সভ্যতা গড়ে উঠেছে তা একটা ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতা । তারা ক্রমান্বয়ে নিশ্চিহ্ন হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে নানা কারণে যে ক্ষোভ তৈরী হচ্ছে তার ফলে তারা নিজ নিজ দেশেই এখন প্রশ্নের সম্মুখীন ।

** ইসলাম ঠেকাও প্রবণতাকে অনেকেই সাংস্কৃতিক সন্ত্রাস বলের অভিহিত করছেন। এই সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের কালো ছায়া মুসলিম দেশগুলোতেও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটাকে রোধ করার জন্যে মুসলিম চিন্তাবিদদের কী করণীয় থাকতে পারে।

এ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা : আমি মনে করি যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মোকাবেলার জন্যে মুসলিম বিশ্বের নানা ধরণের সংগঠনগুলোর মধ্যে, সরকারগুলোর মধ্যে ইসলামী বা মুসলিম সংস্কৃতির বিনিময় করা দরকার । এছাড়া ইলেকট্রনিক মিডিয়া , প্রিন্ট মিডিয়া বা অন্যান্য মিডিয়াকে অনেক বেশী শক্তিশালী করা দরকার পশ্চিমাদের এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বা সন্ত্রাস রোখার জন্যে । আমরা মুসলমানরা এসব মিডিয়ার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি। পশ্চিমাদের অনেক অবান্তর প্রশ্নের জবাব আমাদের কাছে থাকা সত্ত্বেও আমরা তা মিডিয়ার দূর্বলতার কারণে বিশ্বের প্রান্ত থেকে প্রান্তরে ছড়িয়ে দিতে পারছি না । আমাদের বক্তব্য মাত্র গুটি কয়েক এলাকায় বা মানুষের মধ্যে প্রচারিত হচ্ছে। ফলে তাদের ষড়যন্ত্রের জবাব আমাদেরকে শক্তিশালী মিডিয়ার মাধ্যমে দিতে হবে । মুসলিম সমাজের মধ্যে যারা শিক্ষিত শ্রেনী আছেন,গবেষক শ্রেণী আছেন যারা বিত্তশালী আছেন তাদের প্রত্যেকেকে এগিয়ে আসতে হবে এ কাজে । মুলসমানদের বিরুদ্ধে যে অপবাদ, অপমান ছুড়ে দেয়া হচ্ছে অথচ মুসলমানরা তা নয় , মুসলমানরা প্রকৃতপক্ষে যা তা কিন্তু পশ্চিমারা কেউ বলছে না । আমাদের উপর মিথ্যে , অযৌক্তিক ও বানোয়াট দোষ চাপানো হচ্ছে । ফলে এসবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্যে মিডিয়াগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে ।

সৌজন্যে: রেডিও তেহরাণ।

No comments: