Monday, October 13, 2008

আর কত সম্পদ হলে অভাব মিটবে?

আকবর সাহেব বাংলাদেশের বড় একজন ব্যবসায়ী। কোটি কোটি টাকার সম্পদ তাঁর। তবে তিনি বড়ই অভাবী। আরব শেখের মহাকাশ যাত্রার খবর শুনে তাঁরও খুব শখ হয়েছে মহাকাশে যাবার। কিন্তু হিসেব কষে দেখলেন তাঁর সম্পত্তি আর ব্যবসা যা আছে তাতে হয়তো মহাকাষ যাত্রার ব্যয়ভার বহন করা যাবে কিন্তু তারপর ফিরে এসে যা থাকবে তা দিয়ে তার বর্তমান জৌলুস ধরে রাখা যাবেনা। ইতিমধ্যে তাঁর বউও বায়না ধরেছে আমেরিকাতে এক বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ব্যাবসায়ী বন্ধুর বিক্রিতব্য আলিশান বাড়িটি কেনার। কিন্তু তাও আকবর সাহেবের পক্ষে সম্ভব নয়। অভাবের তাড়নায় তিনি পরিবারে আর বন্ধু মহলে খুব নিচু হয়ে থাকতে হচ্ছে।

আনোয়ার সাহেব বিশিষ্ট শিক্ষিত ভদ্রলোক। বিরাট এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরী করেন। হিংসা করার মত বেতন তাঁর। তারপরও তিনি অভাবী। ভদ্রলোক একটা তিন বছরের পুরোনো একটা প্রাডো ওয়াগন গাড়ি চালান । তাঁর এক ব্যাবসায়ি বন্ধু গত মাসে একটা লিমুজিন আনিয়েছেন। তার পুরোনো প্রাডো নিয়ে তাকে এখন রীতিমত লজ্জায় পড়তে হচ্ছে। কিন্তু তার পক্ষে লিমুজিন কেন লিমুজিনের একটা দরজা কিনতেও খবর হয়ে যাবে। সত্যি ভদ্রলোক কত বড় অভাবী!

লিয়াকত মিয়া ঠেলাগাড়ি চালায়। কাজে বেরুলে তার ঘরে ভাত রান্না হয় আর নাহলে তিন ছেলেমেয়ে বৃদ্ধ মা বাবা সহ তার না খেয়ে থাকতে হয়। গত তিনদিন থেকে তার খুব জ্বর। প্রথম দিন কষ্ট করে কাজে গিয়েছিল কিন্তু মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে কাজে ইস্তফা দিতে হয়েছে। সহঠেলাওয়ালারা ধরে বাসায় দিয়ে গেছে। ঘরে চাল নেই। তার বউ বস্তির পাশের ঘর থেকে চাল এনে কোনরকম ব্যবস্থা করেছিল গতকাল। আজ তাও নেই। গতকাল থেকে ছেলেটা গোশত দিয়ে ভাত খাবে বলে বায়না ধরেছে। ওরও দোষ কি, গত এক বছরে ভাল রান্না বান্না ঘরে কখনোই হয়নি। পাশের এলাকার এক মুরুব্বির মৃত্যুর পর ওর পরিবারের লোকজন গরীবদের জন্য খানাপিনার আয়োজন করেছিল, তখন ভাল খাওয়াদাওয়া হয়েছিল। এরপর অনেকদিন প্লেটে ভাল খাবারের দৃশ্য চোখেও পড়েনি লিয়াকত মিয়ার পরিবারের লোকজনের। অভাব এধরনের পরিবারের নিত্য সঙ্গী।

তো যাই হোক। শবে বরাতের রাতে এ তিন অভাবী মসজিদে এসে আল্লাহর দরবারে উচিয়ে ধরল, যদি আল্লাহ কোন সহায় দেয়। একজনের অভাব মোটামুটি কয়েক কোটি টাকা , আরেকজনের কয়েক লক্ষ টাকা আর শেষ জনের কয়েকশ টাকা। ভাগ্যক্রমে তিনজন একই কাতারে পাশাপাশি দাড়িয়ে নামাজ পড়ল। তারপর মোনজাতের সময় সবাই আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে তাদের আবেদন জানাতে লাগল।

আনোয়ার সাহেব চোখে মুখে গালভরা অশ্রু নিয়ে বলতে লাগলেন, "আল্লাহ আমার আর কয়েক লাখ টাকা দরকার তারপর আর আগামী একবছর কিচ্ছু চাইবনা। আমাকে কয়েকলাখ টাকার ব্যবস্থা করে দাও। আমি একটা গাড়ি কিনব। সেই গাড়িতে চড়ে তোমার ঘরে এসে নামাজ পড়ে তোমার প্রতি আমি শুকরিয়া জানাব।"

পাশে লিয়াকত মিয়া জোরে জোরে কাদতে কাদতে আল্লাহর কাছে কয়েকশ টাকার জন্য দোয়া করতে লাগল। তার প্রয়োজন কয়েক কেজি চাল আর কিছু তরকারি।

এই দেখে আকবর সাহেব উঠে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন এদের মোনাজাত শুনে আল্লাহ তার মহাকাশ ভ্রমনের জন্য টাকা মন্জুর করার প্রশ্নই আসে না। তবে যাবার সময় মসজিদের খাদেমের কাছে লিয়াকত মিয়ার জন্য হাজার খানেক টাকা দিয়ে গেলেন।

আর এদিকে আনোয়ার লিয়াকতের মোনাজাতের স্টাইল দেখে ভাবল, এ ব্যাটা তো আল্লাহর সব মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে। এর কারনে আল্লাহ তার আবেদন নাও শুনতে পারেন। আর শুনলেও মন্জুর করেন কিনা তার নিশ্চয়তা নাই। তাই একে তাড়ানোর জন্য পকেট থেকে পাচশো টাকার একটা নোট বের করে লিয়াকতকে দিয়ে বলল বাসায় চলে যাও। লিয়াকত টাকাটা নিয়ে বাইরে আসতেই মসজিদের খাদেম ওর হাতে আকবর সাহেবের দেয়া টাকাটা দিল। সব পেয়ে লিয়াকত খুশি মনে বাসায় চলে এল।

No comments: