Saturday, October 4, 2008

"এপ্রিল ফুল" এর সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত

আগামীকাল ১লা এপ্রিল সারা পৃথিবীতে প্রতিবছরের মত একযোগে মানুষ ঠকানোর উৎসব এপ্রিল ফুল পালন করা হবে। আমরা অনেকেই এর সঠিক ইতিহাস জানি না। এ দিনের সাথে একই সাথে মুসলমান ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দুটি পৃথক মর্মান্তিক ঘটনা মিশে আছে। বিশেষ করে মুসলমানদের সাথে এর সম্পর্ক সবচেয়ে নিবিড়। এর ইতিহাস জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৪৯২ সালে।

১৪৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮০০ বছর স্পেন ছিল মুসলমানদের শাষনে। মুসলিমগন স্পেন নিজেদের ইচ্ছায় দখল করেননি। রাজা রডারিক স্পেনের পূর্বসূরি রাজা ইউটিজাকে হত্যা করে তার আধিপত্য ও তার পাশাপাশি অমানবিক অত্যাচার শুরু করলে স্পেনের সিউটা দ্বীপ প‌্রধান জুলিয়ান এই অবস্থায় জনগনের প্রবল ইচ্ছার কারনে মুসলিম শাষক মুসার কাছে আবেদন করলেন স্পেন জয় করার জন্য। মুসা তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদকে মাত্র বার হাজার সৈন্য সমেত স্পেনে পাঠালেন। তখন স্পেনের সৈন্য সংখ্যা ছিল এক লক্ষ বিশ হাজার। তারিকের সেই যুদ্ধে জয়ের ইতিহাস ইসলামের আরেকটি গৌরবাজ্জ্বল ইতিহাস। তারপর মুসলিমগনের সুশাষনে স্পেন হয়ে উঠে ইউরোপ সহ সারা বিশ্বের সকল মানুষের জন্য জ্ঞান বিজ্ঞানের একটি কেন্দ্র। এভাবেই মুসলমানগন প্রায় ৮০০ বছর অত্যন্ত সাফল্যের সাথে স্পেন শাষন করেছে। কিন্তু দিনের আবর্তে মুসলিম শাষক ও জনগন হারিয়ে ফেলল তাঁদের মূল শক্তি ঈমান। মুসলিমদের মধ্যে শুরু হল ক্ষমতার টানাটানি যেমনটি বাংলাদেশে চলছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তি রাজ্যগুলোর খ্রীস্টান রাজারা তখন বসে ছিলনা। মধ্যে১৪৯১ সালে স্পেনের শাষক ছিলেন বাদশাহ হাসান। তাঁর পুত্র ছিলেন আবু আবদুল্লাহ। খ্রীস্টানরা আবু আবদুল্লাহের নৈতিক দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করলো। তারা তাঁকে আশ্বাস দিল যে, যদি সে তার বাবাকে গদিচ্যুত করতে পারে তবে খ্রীস্টানরা তাকে স্পেনের ক্ষমতা নিতে সাহায্য করবে। আবু আবদুল্লাহ তাদের কথায় রাজি হয়ে বাপের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে এক সময় তার পিতা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এরই মাধ্যমে শুরু হয় স্পেনে মুসলমানদের পতন। আবু আবদুল্লাহর দুর্বল নের্তৃত্ব, নৈতিক অবস্থান চিন্তা করে রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলার যৌথ বাহিনী স্পেন আক্রমন করে বসে।

আবু আবদুল্লাহর নৈতিক দুর্বলতার কারনে সে যুদ্ধ করতে ভয় পেল এবং সন্ধির আবেদন জানালো। রাজা ফার্ডিনান্ড তাকে বিনাযুদ্ধে আত্নসমর্পনের বিনিময়ে জনগনের জীবন রক্ষার আশ্বাস দেয়। আবু আবদুল্লাহ তাতে রাজি হয়। কিন্তু সেদিন সে খ্রীস্টানদের চুক্তিভঙ্গের অতীত ইতিহাসগুলোকে ভুলে গিয়েছিল।
তখন স্পেনের সবাই যে ঈমানীদুর্বলতায় ভুগছিল তা বলা যাবে না কেননা সেদিন অসংখ্য সাহসী মুসলিম আত্নসমর্পনের বদল শাহাদাতের আগ পর্যন্ত খ্রীস্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু তখনকার বেশিরভাগ মুসলিমই গ্লানীকর আত্নসমর্পন মেনে নেয়। ফলে সহজেই ফার্ডিনান্ড স্পেন দখল করে নেয় ২৪শে নভেম্বর ১৪৯১ সালে। তারা শুরু করে নৃশংস ও বর্বর হত্যাযজ্ঞ, লুন্ঠন ও ধর্ষণ। এসব অতাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেক মুসলিম স্থানে স্থানে বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহী এসব লোকজনকে হত্যা করার পাশাপাশি এক পর্যায়ে ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা ঘোষনা দেয় যে, যারা শান্তি চায় তারা যেনো সব মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সরল বিশ্বাসে, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সেদিন হাজার হাজার মুসলিম নর-নারী, বৃদ্ধ-শিশু মসজিদে আশ্রয় গ্রহন করলো। তারা তখনও জানতনা যে তারা মুসলিম ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর ইতিহাসে পরিনত হতে যাচ্ছে। তারা যখন মসজিদে আল্লাহর দরবারে নামাজ আর কান্নাকাটি করছে তখন রাতের আঁধারে জ্বালিয়ে দেয়া হলো সমস্ত মসজিদ। দাউদাউ আগুন, নারী-পুরুষের আর্ত চিৎকার আর ফার্ডিনান্ড-ইসাবেলার ক্রুর হাসি একাকার হয়ে গেলো।
এই ঘটনাটি গ্রনাডা ট্রজেডী নামে পরিচিত।
এই ঘটনাটি ঘটেছিল ১লা এপ্রিল ১৪৯২। এমনিভাবে এরকম আরেকটি ঘটনা ইহুদীরা খ্রীস্টানদের প্রতি ঘটিয়েছিল কয়েক শতাব্দি পূর্বে এবং তাও ঘটেছিল ১লা এপ্রিল।

তাই আমার অনুরোধ বাংলাদেশে বসবাসরত মুসলমান ও খ্রীস্টানগনের প্রতি। ১লা এপ্রিল আমাদের উভয়ের জন্যই গ্লানিকর ইতিহাসের সাক্ষি। আসুন আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মরনে এই দিনে ইহুদী প্রবর্তিত এই উৎসব পরিত্যাগ করি

তথ্যসূত্র:
১. ক্রুসেডের প্রতিচ্ছায়া, মুহাম্মদ আসাদ
২. ক্রুসেড ও মুসলিম বিশ্ব, ডা: মুহাম্মদ মোয়াজ্জেম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা-১৯৮৪
৩. কর্ডোভা মসজিদ, আল্লামা ইকবাল
৪. প্রবন্ধ: গ্রানাডা ট্রাজেডী, আবু জাফর মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ

No comments: