Saturday, October 4, 2008

শত সহস্র মুক্তিযোদ্ধার প্রতি পরবর্তী প্রজন্মের আহ্বান.....

আমার নাম নিশ্চই অনেকেই জানে আবার অনেকেই জানেননা। আজ আমার পরিচয় দেই। আমি মইন বলছি। জন্ম ১৯৮৯। আমার বাবা মা দুজনেই মুক্তিযুদ্ধের সময় খুব ছোট ছিলেন। তাঁরা দুজনেই তখন গ্রামে থাকতেন। আমার গ্রাম ফেনী। আমার দাদী মারা গিয়েছিলেন ১৯৭১ এ। এলাকায় কোন মাসে পাক সেনা এসেছিল আমার ঠিক জানা নেই। মা আর বাবা প্রায়ই চায়ের আড্ডায় বসলে টেনেটুনে যুদ্ধের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেন। সেখান থেকেই একটা ট্রাজেডী উল্লেখ করছি। সেটা হল আমার দাদীর মৃত্যু।

আমার বাবা পরিবারের ছোট ছেলে বিধায় তাকে নিয়ে দাদীর চিন্তার অন্ত ছিল না। তার ওপর যুদ্ধ চলছে আর সেনা ক্যম্প তৈরী হয়েছে গ্রামে। একদিন হঠাৎ খুব ধরপাকড় হল। পাশের গ্রামে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে সেনারা। বাবা যদিও খুব ছোট কিন্তু তারপরও আগুন নেভানোর জন্য চলে গেলেন সকল ভয়কে উপেক্ষা করেই। এই দিকে সকাল থেকেই বাবাকে পাওয়া যাচ্ছিলনা। দিন চলে গেল কিন্তু দাদীর আদরের ছেলের খোঁজ নেই। সন্ধা হতেনা হতেই দাদী একরকম পাগলের মত এদিক ওদিক ছুটতে লাগলেন। অনধকারে চরম টেনশন তার ওপর ছোটাছুটি তাঁকে পাগল করে দিল। শেষ পর্যন্ত তিনি স্ট্রোক করলেন। বাবা ফিরে এলেন অনেক রাতে। কিন্তু দাদী চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগোতে লাগলেন। কিছুদিন পর মারা গেলেন আমার দাদী। এভাবেই ৭১ আমার দাদীকে নিয়ে গেল আমাদের কাছ থেকে।

আমার নানাবাড়ির কথা বলি এবার। এলাকার মোটামুটি সব তরুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ফিরে এসেছে। আমার নানা বাড়িতে মোটামুটি যুদ্ধের ঘাঁটি তৈরী করা হয়েছিল। নানা বাড়িতে প্রচুর গাছপালা ছিল আর জায়গাটা মোটামুটি সুবিধাজনক জায়গায় ছিল। তাই লুকিয়ে থাকতে কোন সমস্যা ছিলনা। একটা গর্ত ছিল যাতে সব অস্ত্র লুকিয়ে রাখা হত। আর প্রয়োজনের সময় আমার মামারা(এলাকার মোটামুটি সব মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে আমার দুর সম্পর্কের মামা) যারা যুদ্ধ করছিলেন তাঁরাও এখানে লুকিয়ে থাকতেন। সব থাকা-খাওয়া আমার নানা বাড়িতেই হত। আমার মার বয়স তখন ৬। তিনি তাঁর পক্ষে যতখানি সম্ভব সাহায্য করতেন। আর এ গ্রামের পাশের গ্রাম মজুপুরে শহীদুল্লাহ কায়সার ও জহির রায়হান শহীদ হয়েছেন।

কাল রাতে সুযোগ পেয়ে বাবা আবারও স্মৃতীগুলো বলছিলেন। আর তখন বলছিলেন যে তখন যদি আমি থাকতাম তবে বাবা আমাকে নিয়ে যুদ্ধে যেতেন। আমার বাবার দেশপ্রেম আমাকেও উৎসাহ দেয়। দেশের ভবিষ্যত নিয়ে বাবা আর আমি দুজনে মিলে মাঝেমধ্যে চিন্তা করি। কিন্তু তখন মনে হয় আমরা দেশের কে। দেশ গুটিকয় মুক্তিযোদ্ধা কখনোই স্বাধীন করতে পারতো না যদি আমার বাবা-মা, নানা-নানী,দাদা-দাদী না সহযোগীতা করতো। আমার দাদীর মতো অসংখ্য জীবন ঝরেছে এই মুক্তিযুদ্ধে। আরও ৩০ লক্ষ ত্যাগতো আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে দেশের আপামর জনতা কেন মুক্তিযোদ্ধার খেতাব পাবেনা?

দেশ স্বাধীন হয়েছে আমাদের সকলের চেষ্টায়। আর স্বাধীনের পর দেশ হয়ে গেল শুধু কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা আর দেশপালানো রাজনীতিবিদের। রাজনীতিবিদরা স্বাধীন বাংলাদেশকে নিয়ে ফাঁকা ফুটবল মাঠের মত খেলতে লাগলেন আর দেশকে নিজেদের সম্পত্তি ভাবতে লাগলেন যার ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। আর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটার অভাব নেই। আর আমরা দেশের কীটের মত যত্রতত্র পড়ে আছি। আমাদের নেই কোন কথা বলার অধিকার। নেই পড়াশুনার অধিকার। নেই খেয়েদেয়ে বেচে থাকার অধিকার। আর যতটুকু পেয়েছি ওইসব দেশের মালিকদের দয়ায়। আমাদের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই, নেই সঠিক তথ্য পাওয়া ও তথ্য দেয়ার অধিকার। সঠিক তথ্য দেওয়ার কারনেই আমার ব্লগ ফ্রন্টপেজে থাকার অধিকার হারায়। আমাকে পেতে হয় রাজাকারের খেতাব।

দেশকে একরকম শুঁষে ফেলায় গত ৩৭ বছর নিয়োজিত রাজনীতিবিদদের পা চেটে আংগুল ফুলে কলাগাছ হওয়া কিছু অসৎ ও চরিত্র হারিয়ে ফেলা মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর কমান্ডার আবারও তৎপর হয়ে পড়েছে দেশ ধ্বংশ করে ফেলার মতলবে। আর আমরা এখানে শুধুই নিরব দর্শক। আমরা কোথাকার কে দেশকে নিয়ে বোঝার, ভাবার? আমরা সবাইতো দেশবিরোধী আর রাজাকার। আমাদের প্রত্যেককেই উচিত ছিল ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলা। তারা যা বলবে তাই ঠিক আর তাদের বিরোধী মানে দেশবিরোধী।

কিন্তু খুশির সংগে জানাচ্ছি যে, সব মুক্তিযোদ্ধাই খারাপ কিংবা স্বার্থপর নয়। সব সেক্টর কমান্ডারও বিক্রি হয়ে যায়নি। জেনারেল এম এ জি ওসমানী আমাদের পক্ষেই ছিলেন। বিক্রি হননি আরও সব সেক্টর কমান্ডাররাও । শুধু কয়েকজনই দেশের মন্দ চায়। আর আমরা সবাই একসাথে আছি। আমরা পাকশাষনের পর শোষিত হচ্ছি বেশি। আর নয়। আজ ২৬ শে মার্চ। ৭১ এর এই দিনে শুরু হয়েছিল আমাদের দেশমাতৃকা হতে পরদেশী কীট তাড়ানোর যুদ্ধ। আর ২০০৮ এর আজ থেকে শুরু নতুন আরেক যুদ্ধ। তা হল দেশপ্রেমিকের বেশ ধরে থাকা দেশদ্রোহীদের
তাড়ানোর যুদ্ধ। বিদেশীদের শোষনকে আমরা পরাভূত করেছি। স্বদেশীদের শোষনও একদিন শেষ হবে, সেই সাথে শেষ হবে দুর্নীতি ও অপরাজনীতির। ইনশা আল্লাহ...। আল্লাহ আমাদের সাথেই আছেন।

No comments: