Monday, October 13, 2008

আমাদের কোরআন শেখার পদ্ধতি কি সঠিক?

প্রথম কবে কার মুখে কোরআনের আবৃত্তি শুনেছি তা ঠিক মনে পড়ছেনা। তবে সেই ছোটবেলা থেকেই ভোর সকালে মায়ের কোরআন তেলাওয়াত শুনছি। ছোটবেলায় নানা বাড়িতে প্রায়ই খুব ভোরে নানার সুমধুর কুরআন তেলাওয়াতের শব্দে ঘুম ভাঙত। আর কুরআনের সুর এত সুন্দর লাগত যে, আমি প্রায়ই অনেকক্ষন নানার পাশে বসে থাকতাম। আরবী পঠনরীতি আর কোরআনের অপ্রতিদ্বন্ধি সাহিত্য এতই মধুর যে তা সবারই মন কাড়ে।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ বাবা মা ই তাঁদের সন্তানকে কোরআন শিক্ষায় শিক্ষিত করতে খুবই আগ্রহী। বিশেষ করে রমজান এলে অনেক পরিবারই প্রাইভেট মৌলভী রেখে বাচ্চাদের কোরআন শেখানোর চেষ্টা করেন। আর অনেকে নিজেদের জ্ঞানকেও বাড়ানোর চেষ্টা করেন। আর এভাবেই আমিও এক মক্তবে কোরআন শিখেছি। কিন্তু আসলে এ শেখার পদ্ধতি এবং উপসংহারটা কি সত্যিই আরাধ্য সাফল্যে প‌ৌছায়?

মক্তবে বা প্রাইভেটভাবে আমারা সত্যিকার অর্থে কোরআন শিখি না বরং কোরআনের ভাষা শিখি। অর্থাৎ আরবী ভাষা শিখি। একটা কায়দা বই দিয়ে এ শিক্ষা শুরু হয় আর সঠিক উচ্চারণে কোরআন তেলাওয়াত দিয়ে শেষ হয়। কিন্তু এতে লাভ এতটুকুই যে এর ফলে আমরা কুরআন তেলাওয়াত করতে পারি এবং যেকোন আরবী সাহিত্য আবৃত্তি করতে পারি। কিন্তু বুঝতে পারি না। আর আমাদের বেশিরভাগ লোকজনই বোঝার চেষ্টা করি না। রমজান এলে অথবা প্রতিদিন সকালে অথবা বাড়িতে কেউ মারা গেলে সুন্দর ভাবে জড়ানো আর ধুলো জরজরিত প‌্যাকেট করা কোরআন বের করে তেলাওয়াত করি।

এটিই কি হওয়া উচিত ছিল? যে এভাবে কোরআন শিখল আর যে শিখলই না তার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু? প্রথমজন কোরআনের অক্ষরগুলো চোখ দিয়ে দেখে শব্দ তৈরি করতে পারে আর অপরজনও চোখ দিয়ে অক্ষরগুলো দেখতে পারে তবে উচ্চারণ করতে পারে না। যে উচ্চারণ করতে পারছে সেও কি উচ্চারণ করল তা বুঝতে পারল না। ব্যাপারটা এমন যে, একজন পিয়ানো বাদক বাজায় কিন্তু সে কানেই শোনে না। আরেকজন বাদকের পিয়ানো থেকে শব্দই আসে না। এ দুজনের মধ্যে আসলে কোন পার্থক্যই নেই কেননা কেউই আসলে সুর শুনতে পাচ্ছে না।

কোরআনের এ দুনিয়ায় অবতরণের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের সার্বিক জীবনের উপর আল্লাহর নিয়ন্ত্রন আনা। আল্লাহ এ দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন, পৃথিবী নামক এ গ্রহে আমাদেরকে তাঁর প্রতিনিধি রুপে পাঠিয়েছেন। আর তাঁর দেয়া দায়িত্ব কর্তব্য শেষবারের মত কোরআনের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। আর এ কর্তব্য কিভাবে আমরা সম্পাদন করব তা ও জানিয়ে দিয়েছেন এ কিতাবের মাধ্যমে। আর নবীজী (স) এর ২৩ বছরের জীবন হলো কোরআনের প্র্যাকটিকাল উদাহরণ। আর এসবের মাধ্যমে আল্লাহর উদ্দেশ্য একটাই তা হলো এ জীবনের ছোট্ট সময় যেন আমরা সঠিক ভাবে পরিচালিত করতে পারি। আর এ জ্ঞান অর্জনকে তিনি করে দিয়েছেন বাধ্যতামূলক। তাই কোরআন ও রাসূলের জীবন ও কর্ম জেনে তা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব।

সর্বশেষ কথা এই যে, আরবী পড়তে শেখা ই কোরআন শেখা নয় বরং আরবী বুঝতে শেখাই হলো মূলত: কোরআন শিক্ষা। আর আমার মত যারা আরবী বোঝেননা তাঁদের উচিত কোরআনের অর্থসহ অধ্যয়ন করা। তবে আরবী ভীনদেশী ভাষা হওয়ায় তার অনেক শব্দ আছে যার সঠিক শব্দার্থ বাংলায় এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়। তাই কোরআনের সঠিক জ্ঞান আহরণের জন্য আমাদের উচিত কোরআন তাফসীর সহ পড়া। সম্ভব হলে বিভিন্ন মুফস্সিরের তাফসীর অধ্যয়ন করা।

No comments: