Monday, October 13, 2008

বিবর্তনবাদ/ মানুষের আবির্ভাব

পৃথিবীতে কি করে মানুষ ও অন্যান্য প্রানীর উদ্ভব হলো এ ব্যাপারে আস্তিক ও নাস্তিকদের মধ্যে এক বিরাট বিরোধ চলছে। আমার ধারণা এ ব্যাপারে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়েছে বিবর্তনবাদ আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই। এ বাকযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গন্য করা হয় বিজ্ঞানকে। তবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে বিজ্ঞানকে এ ব্যাপারে আসামী সাব্যস্ত করতে অনিচ্ছুক। কেননা এ মহাবিশ্ব তৈরী করেছেন সৃষ্টিকর্তা এক বিষ্ফোনের মাধ্যমে। আর তারপর মহাবিশ্ব এক জটিল আকার ধারণ করেছে। আর বেচারা বিজ্ঞান এ জটিলতার অভ্যন্তরস্ত জ্ঞান আহরণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ হিসেবে পবিত্র কোরআন এক মহা বিজ্ঞান গ্রন্থ। প্রসংগত বেচারা বিজ্ঞান যা ই আবিষ্কার করে তা ই দেখা যায় আল কোরআনে প্রায় ১৫ শ বছর আগে উল্লেখিত হয়ে গেছে। তো আমার ইচ্ছা আজ বিবর্তনবাদ নিয়ে কিছু লেখালেখির অপচেষ্টা করব। নিজের কিছুই লিখতে পারবনা কারন আমার মত মুর্খের নিজে কিছু করার ক্ষমত আগেও ছিল না, সামনেও হয়তো থাকবে কিনা সন্দেহ। দেখি বিজ্ঞান আর কোরআন দুটোর সমন্বয়ে কিছু লিখব।

প্রথত আল কোরআন ও বিজ্ঞান উভয়ই এ মত প্রকাশ করেছে যে, পুরো মহাবিশ্বের সৃষ্টির সূচনা একটি সিংগুলারিটি থেকে বিগ ব্যাং নামে পরিচিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে হয়েছে। তারপর সময়ের আবর্তনে বিভিন্ন ধাপে ধাপে পৃথিবী নামক বাসোপযোগী একটা গ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। তারপর জীবের সূচনা হয়েছে একটা আণুবীক্ষনিক এককোষী প্রাণী থেকে আনুমানিক প্রায় ৩০০কোটি বছর আগে। বিজ্ঞান বলে এ জীবটির উদ্ভব একটা অ্যাকসিডেন্ট এবং পৃথীবির সবচেয়ে বড় বিষ্ময়কর ঘটনা। কিন্তু আস্তিকতাবাদ বিশ্বাস করে এটা দুর্ঘটনা নয় বরং সৃষ্টিকর্তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ। এরপর ১৮ শতকে ডারউইনের আবিষ্কৃত বিবর্তনবাদ অনুসারে এ এককোষী জীবটি থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে উদ্ভব হয়েছে বাদবাকি প্রাণীরা। কোরআনেও তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কেননা আল্লাহ কোরআনে উল্লেখ করেছেন তিনি শুধু মাত্র আদমকেই বেহেশত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, মাছ- সাপ এদেরকে নয়।

এ ব্যাপারে প্রায় ১৫শ বছর আগে নাযিলকৃত আল কোরআনের ২৪ নম্বর সূরার ৪৫ নম্বর আয়াতে সৃষ্টিকর্তা উল্লেখ করেছেন
"এবং আল্লাহ সব জীবকে পানি হতে পয়দা করেছেন, তাদের মধ্যে কিছু আছে যারা পেটের উপর ভর করে চলে, কিছু আছে দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে চলে, আবার কিছু আছে যারা চার পায়ে ভর করে চলে। আল্লাহ যা খুশী পয়দা করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব শক্তিমান।"

এ আয়াত থেকে আমরা যে বিবর্তনবাদের ধারণা পাই তা আজকের আবিষ্কৃত আধুনিক বিবর্তবাদের ঠিক অনুরূপ।
আয়াতের প্রথম অংশ: "এবং আল্লাহ সব জীবকে পানি হতে পয়দা করেছেন"

বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা: বিজ্ঞান এ পর্যন্ত যতটুকু আবিষ্কার করেছে তা থেকে জানা যায় পৃথিবীর প্রথম প্রানীর উদ্ভব পানিতে হয়েছিল। বিবর্তন ধারার প্রথম পাঁচটি প্রজাতির প্রাণী যেমন নিউররোসপরা, ক্যান্ডিডা, স্ক্রুওয়ার্ম, মথ, এবং টুনা মাছ পানিতে উৎপন্ন হয়েছে।

আয়াতের দ্বিতীয় অংশ: "তাদের মধ্যে কিছু আছে যারা পেটের উপর ভর করে চলে,"

বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা: বিজ্ঞানের বিশ্লেষন অনুযায়ী বিবর্তন ধারায় ৬ষ্ঠ এবং ৭ম প্রজাতি হলো বিভিন্ন রকমের সরিসৃপ। এক্ষেত্রে প্রথম বিবর্তিত প্রজাতি হলো সাপ অত:পর কচ্ছপ।

আয়াতের তৃতীয় অংশ: "কিছু আছে দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে চলে,"

বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা: সরিসৃপের পরের বিবর্তিত ৯,১০,১১,১২ নং প্রজাতিগুলোর উদাহরন হলো পেঙ্গুইন, মুরগী, হাস, কবুতর এবং ক্যাংগারু যারা দুপায়ে ভর করে চলে।

আয়াতের চতুর্থ অংশ: "আবার কিছু আছে যারা চার পায়ে ভর করে চলে। আল্লাহ যা খুশী পয়দা করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব শক্তিমান।"

বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা: বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন প্রমান করে বিবর্তন ধারার ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ এবং ১৮ নং প্রজাতি চার পায়ে ভর করে চলে। এদের উদাহরণ ক্রমানুসারে খরগোস, শুকর, গাধা, ঘোড়া, কুকুর এবং বানর।

অতএব আয়াতের দেয়া বিবর্তবাদকেই আধুনিক বিজ্ঞান প্রমান করেছে। এ থেকে আমার আবারও মনে হচ্ছে বিজ্ঞান আস্তিকতার বিরোধী নয়। বরং বিজ্ঞান শুধু সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে চিনতে ও বুঝতে সহায়তা করে। যেমনটা করেন তাফসীরকারগন। বরং নাস্তিকগন তাদের মৌলবাদকে প্রমান করার জন্য বিজ্ঞানকে ব্যবহার করার অপপ্রয়াস চালান। আমাদের অজ্ঞানতা আমাদেরকে তা বিশ্বাস করতে বাধ্য করে।

১৮৫৭ সালে "In the Origin of Species by Means of Natural Selection", এবং ১৮৭১ সালে "The Descent of Man and Selection in Relation to Sex" নামক ডারউইনের দুটি বই প্রকাশিত হবার পর থেকে অনেকে ভাবতে থাকেন বানর থেকে মানুষের আবির্ভাব হয়েছে। বিবর্তনবাদীরা মনে করতেন যে বানরের সংবেদনশীল হাতের কারনে এবং গাছে বাস করার পদ্ধতি রপ্ত করতে গিয়ে তাদের মস্তিস্ক বড় হয়ে গেছে। তারপর তারা সমতলে নেমে আসে এবং সমতলে হাটার অভ্যাস করতে গিয়ে তাদের পা সুগঠিত ও লম্বা হয়েছে এবং কোমরের হাড়ে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে এভাবেই মানুষের বিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এমন ফসিল আবিষ্কার করতে পারেননি যাতে বানরের মস্তিস্ক বৃদ্ধির চিহ্ন পাওয়া যায়। প্রসংগত, মানুষের খুলির মস্তিষ্ক ধারণক্ষমতা ১৪৫০ ঘন সেন্টিমিটার। আর বানর জাতীয় প্রানীর মস্তিষ্ক ধারণ ক্ষমতা ৩২৫ থেকে ৪৫০ ঘনসেন্টিমিটার। তাছাড়া মানুষ এবং বানরের পেলভিস (কোমরের হাড়) , মাথা এবং পায়ের হাড়ের পার্থক্য অনেক বিশাল।

বর্তমান বিবর্তনবাদীরা ধারণা করেন একই পূর্ব পুরুষ থেকে উদ্ভব হওয়া দুটি শাখার একটি শাখায় কয়েক প্রজাতির পর উদ্ভব হয়েছে মানুষের। আর অন্য শাখায় কয়েক প্রজাতীর পর উদ্ভব হয়েছে শিম্পান্জির।

বৈজ্ঞানিকগন যেসকল ফসিলের সন্ধান পেয়েছেন সেগুলোকে পা, মস্তিস্ক, কোমড়ের হাড়, মাথার খুলির ইত্যাদির ক্রমোন্নতি পর্যবেক্ষন করে পাঁচটি জেনাসে ভাগ করেছেন। সেগুলি হলো:
১. অস্ট্রালোপিকেথাস
২. হোমো হাবিলিস
৩. হোমো ইরেকটাস
৪. হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস
৫. হোমো সেপিয়েন্স (পূর্ণাঙ্গ মানুষ)


অস্ট্রালোপিথেকাস: প্রায় ২০ থেকে ৩০ লক্ষ বৎসর আগে এরা দক্ষিন আফ্রিকায় বিচরণ করত। এরা সম্পুর্ন বানর ছিল। এদের খুলির ধারন ক্ষমতা ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ ঘনসে.মি.। এদের একটি প্রজাতি অস্ট্রালোপিথেকাস আফরেনসিস (লুসি বলে খ্যাত) এর ফসিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারন এদের হাটুর সংযোগ ছিল এমন যে তারা সম্পুর্ণ সোজা হয়ে দাড়াতে পারত। তাছাড়া এদের সম্পুর্ণ শরীরই ছিল বানরের মত। উল্লেখ্য বানরের হাটুর সংযোগ সোজা না হওয়ার কারনে তারা হাটতে পারে না এবং গভীর জঙ্গলে ঝুলে ঝুলে বাস করে। বিবর্তনবাদীরা ধারণা করেন দুপায়ে হাটার ফলেই বানরের দেহ ধীরে ধীরে মানুষের মত হতে থাকে। ডোনাল্ড জোহানসন এবং তার দল ইথিওপিয়া থেকে অনেক ফসিল হাড় সংগ্রহ করে তারপর উপযুক্ত হাড় বিবেচনা করে তা জোড়া দিয়ে লুসির গঠন তৈরী করেছিলেন। তারপর ছোটছোট অনেক হাড় জোড়া লাগিয়ে তা দিয়ে লুসির করোটি নির্মান করেছিলেন যা দেখতে একদম অস্ট্রালোপিথেকাসের মত হয়েছিল। উল্লেখ্য লুসির ৬০% হাড়ই এখনো পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, ঐ সময় হাড়ের বয়স নির্ধারনের পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি। ফলে তাদের নির্মিত ফসিলটি সমসাময়িক হাড় দিয়ে তৈরী হয়েছিল কিনা তা বলা অসম্ভব।

অস্ট্রালোপিকেথাস আফরেনসিস থেকে পরে অস্ট্রালোপিথেকাস আফরিকানাস প্রজাতির উদ্ভব। হাটুর বৈশিষ্ট্য জানা যায় এমন কোন ফসিল আর অস্ট্রালোপিথেকাস প্রজাতির পাওয়া ফসিলে মধ্যে পাওয়া যায়নি।

হোমো হাবিলিস: বানর থেকে মানুষের বিবর্তন প্রমানের জন্য অবশ্য্ই বিজ্ঞানীদের প্রমান করতে হবে বানরের মস্তিষ্ক সময়ের আবর্তনে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এবং তাদের পায়ের হাড়ও আরো হটনযোগ্য হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় একসময় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে ফেললেন হোমো হাবিলিস প্রজাতির ফসিল (ও এইচ ১৬, ও এইচ ২৪, কে এন এইচ আর ১৪৭০ কে এন এইচ আর ১৮১৩, কে এন এইচ আর ১৮০৫) । বিবর্তনবাদীরা মনে করেন এরা হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস আফরিকানাসের উত্তরসূরী। এদের মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা ছিল প্রায় ৬০০ ঘনসে. মি. যেখানে শিম্পান্জির ৩০০ এবং মানুষের গড়ে ১৪৫০ ঘনেসে.মি.। এদের আবির্ভাব আফ্রিকায় হয়েছিল প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ বছর আগে। এরা লম্বায় গড়ে ১.৫২ মিটার ওজন ৪৫ কেজি। এরা প্রায় ৫ লক্ষ বছর পৃথিবীতে টিকে ছিল।

১৯৮৬ সালে ওলদুভাই জর্জে হোমো হাবিলিসের একটি মূল্যবান ফসিল পাওয়া যায় যেটিই একমাত্র ফসিল যার সাথে হাতপায়ের হাড় পাওয়া গিয়েছিল। এগুলি একধরনের ছোট জাতের বানর ছিল। এদের হাত ও পা খুবই ছোট ছিল যা বিবর্তবাদের তত্ত্বের বিপরীত। বিবর্তনবাদীরা তাই ভয়ে এই ফসিলটির কোন গুরুত্বই দেননি। বরং তাদের মতবাদকে রূপ দেবার জন্য এই জাতের অন্য হাড়গুলোর (শুধু মাথার হাড়) সাথে লম্বা লম্বা হাড়কে জোড়া দিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন। এবং এর ব্যাখ্যা হিসেবে বলেন যে, একদিন লম্বা হাড়বিশিষ্ট হোমো হাবিলিস পাওয়া যাবেই, তাই তারা আপাতত এই হাড়গুলো লাগিয়েছেন।

১৯৮৬ সালে পাওয়া ও এইচ -৬২ কে গুরুত্ব দিলে হোমো হাবিলিসকে বিবর্তন ধারা থেকে বাদ দিতে হয়। কারন তাহলে মগজ বৃদ্ধি পেয়েছে এমন কোন বানর জাতীয় প্রানীই থাকেনা।

তারপরও বিজ্ঞানীরা ধরে নিয়েছেন হোমো হাবিলিস সত্যিই দেড় মিটার লম্বা ছিল এবং তারা বিবর্তিত হয়ে হোমো ইরেকটাসে পরিণত হয়েছে।

হোমো ইরেকটাস: হোমো হাবিলিসের পরের পর্যায় হলো হোমো ইরেকটাস। ৫ থেকে ১০ লক্ষ বছর পূর্বে এদের আবির্ভাব হয়েছিল। এরা প্রায় পুরো পৃথিবী জুড়েই বাস করত। জাভা, চায়না এবং আফ্রিকায় এদের মাথার খুলি, চোয়াল ও দাঁতের ফসিল পাওয়া গেছে। এদের কিছু উরুর হাড়ও পাওয়া গেছে যা দেখতে মানুষের হাড়ের মত হলেও অনেক ভারী।

এদের মাথার হাড় বর্তমানের শিম্পান্জি, গরিলা এবং ওরাংওটাং এর মতই। খুলির হাড় খুব মোটা, খুলির উপরের অংশ নিচু, কপাল ঢালু এচোখের ভ্রুর হাড় উঁচু। এদের খুলির পেছনে ওকিপিটাল টোরাস (ফুলে থাকা একটি অংশ) আছে। এদের নাক খুব চওড়া এবং বানর জাতীয় প্রাণীদের মতই সামনের দাঁত বড়।

হোমো ইরেকটাসের শুধুমাত্র মাথার খুলির সাথে মানুষের পার্থক্য অনেক আর তাছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশতো এখনো পাওয়াই যায়নি। তবে এদের পায়ের দুএকটা যে হাড় পাওয়া গেছে তা এত ভারী আর শক্ত যে সব মিলিয়ে পর্যবেক্সন করে অনেক বিবর্তনবাদীও মনে করেন হোমো ইরেকটাস থেকে হোমো সেপিয়েন্সের বিবর্তন সম্ভব নয়। তবে আশার কথা হলো হোমো ইরেকটাসের মাথার ধারণক্ষমতা ছিল গড়ে ১০০০ ঘনসে.মি।

শুধুমাত্র মাথার খুলি এবং পায়ের হাড় দেখে বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরাও বিশ্বাস করতে চাননা যে হোমো ইরেকটাস হাটতে পারত। তবে যেসব প্রাণী হাটতে পারে তাদের খুলি এবং ঘাড়ের সংযোগ খুব কাছাকাছি হয় তবে গাছে বসবাসকারীদেরও এরুপ হতে পারে। তবে বিবর্তনবাদীগন এইটুকু নিয়েই বিশ্বাস করতে চান যে, হোমো ইরেকটাসগন হাটতে পারত এবং তাদের পরে বিবর্তিত হয়ে হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস এর আবির্ভাব হয়।

হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস: জার্মানীর নিয়ান্ডার্থাল নামক স্থানে এই প্রজাতির ফসিল প্রথম পাওয়া যায়। প্রায় ২ থেকে ১ লক্ষ বছর পূর্বে এদের আবির্ভাব হয়। এরা মূলত ইউরোপের বাসিন্দা ছিল। তবে এদের ভৌগলিক রুপান্তর (যেমন মানুষ সবাই একই হলেও বিভিন্ন দেশে এদের রূপ ভিন্ন) পৃথিবীর অন্যান্য অংশেও বাস করত। ফসিল রেকর্ড থেকে বোঝা যায় এরা আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর পূর্বে হঠাৎ করেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

ফসিল রেকর্ড থেকে বোঝা যায়, হোমো ইরেকটাস থেকে ধীরে ধীরে হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস এর আবির্ভাব হয়েছে। এদের মাথার খুলিও নিচু এবং লম্বাটে ছিল। মুখমন্ডল বড় ও লম্বা ছিল। ভ্রুর হাড় উচু ছিল, দাত এবং নাক বিচ্ছুরিত ছিল। মুখের পেশী কিছুটা হালকা হয়েছিল কিন্তু ছেদন দাঁত এবং কর্তন দন্ত হোমো ইরেকটাসদের মতই খুব বড় বড় ছিল। এতে বোঝা যায় এরা দাঁত কিছু ধরার জন্য বা মারামারির জন্য ব্যবহার করত। এশিয়ার এবং আফ্রিকাতে মুখমন্ডল আরও কিছুটা হালকা হয়ে পড়েছিল। তাদের চওড়া কাধ, বলিষ্ঠ বুক এবং পেশীবহুল হাত ছিল। এদের কোমরের ও পায়ের হাড় প্রমান করে তাদেরকে চলার সময় অধিকতর ডানে বাঁয়ে দুলতে হত।

তাদের হাত শক্তভাবে কিছু ধরার জন্য উপযোগী ছিল। যাকে বলে পাওয়ার গ্রিপ। তবে সূক্ষ কোন কিছু ধরার উপযোগী হাত(প্রিসিশন গ্রিপ) তাদের ছিল না।

নিয়ান্ডার্থালেনসিসরা ছোট ছোট দলে বাস করত। তারা পাথরের ও কাঠের হাতিয়ার ব্যবহার করতে পারত। তাদের বসবাস এলাকায় লালমাটি ও কয়লা দেখে বোঝা যায় ওরা আগুনের ব্যবহার জানত। তারা পুরোপুরি পশুর মাংস খেয়ে জীবনযাপন করত। উদ্ভিদজাত খাবার খাওয়ার কোন আলামতই পাওয়া যায়নি। তাদের বসবাসরীতি দেখে বোঝা যায় এরা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করত।

তাদের দেহে অনেক আঘাত ও যখমের নিদর্শন পাওয়া গেছে। ফসিলে অনেক ভাঙা আর মচকানোর আলামত পাওয়া যায় যা দেখে বোঝা যায় এরা প্রচন্ড ঝগড়াটে প্রকৃতির ছিল। তারা দলে দলে ব্যপক মারামারি করত। বয়োবৃদ্ধিকালে ব্যাপক পুষ্টিহীনতা তাদের মাঝে দূর্বল পারিবারিক সন্ধন এবং মমতাহীনতার ইংগিত দেয়।

খুজে পাওয়া ফসিলের মাথার তুলনা:

বিষয় .হোমো ইরেকটাস নিয়ান্ডার্থাল মানুষ
......................................................................................................
১.ভ্রু . উঁচু . উঁচু .সমতল

২.কপাল . ঢালু . ঢালু . খাড়া

৩.খুলি . লম্বাটে ও নিচু . লম্বাটে ও নিচু . গোল ও উচু

৪.ওকিপিটাল . আছে . আছে . নেই
টোরাস

৫.খুলির হাড় . খুব মোটা . খুব মোটা . পাতলা

৬.গলার হাড় . ঘাড়ের দিকে . ঘাড়ের দিকে . থুতনীর দিকে

৭.চোয়াল . ভারী . ভারী . হালকা

৮.থুতনী . নেই . নেই . আছে

৯.দাঁত . খুব বড় . খুব বড় . ছোটা ছোট

১০.নাক . নিচু . নিচু . উচু

১১.পেশী . হাড়ে ভারী পেশীর সংযোগ বিন্দু দেখা যায় . হাড়ে ভারী সংযোগ বিন্দু দেখা যায় হালকা পেশী

১২,খুলির ধারণ . ১০০০ সিসি . ১২০০ সিসি .১৪৫০সিসি
ক্ষমতা(গড়ে)

হোমো ইরেকটাস ও নিয়ান্ডার্থালদের আকৃতি এক হলেও নিয়ান্ডার্থালরা প্রতি বিষয়েই কিছুটা উন্নত ছিল যা হোমো ইরেকটাস থেকে নিয়ান্ডার্থালে বিবর্তনের স্বপক্ষে ইঙ্গিত দেয়।

হোমো সেপিয়েন্স: আগে যাদের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে তাদের মধ্যে হোমো ইরেকটাস এবং হোমো নিয়ান্ডার্থালদের পাওয়া ফসিলের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে। তবে এদের আকৃতি এক হলেও নিয়ান্ডার্থালরা অনেকক্ষেত্রে ইরেকটাসদের তুলনায় উন্নত ছিল বিধায় এটা প্রমানিত হয় যে, হোমো নিয়ান্ডার্থালরা ইরেকটাস থেকে বিবর্তিত হয়েছিল। হোমো সেপিয়েন্স অর্থাৎ আধুনিক মানবজাতির সাথে নিয়ান্ডার্থালদের এবং এদের সমসাময়িকদের পার্থক্য বিস্তর। মানুষের মাথার খুলি উচু ও চওড়া। কপাল খাড়া, চোয়াল হালকা ও দাত ছোট। এজন্য এদের মুখের পেশী হালকা এবং মুখাবয়ব কোমল। আর এ কারনেই এদের খুলির ভারসাম্যবিন্দুর পশ্চাতের পেশীও হালকা, ফলে খুলি ও ঘাড়ের সংযোগস্থল আরও নিচে অর্থাৎ মুখের কাছে। এদের সুস্পস্ট থুতনী ও নাক আছে

মানুষ দুপায়ে চলাচলকারী প্রাণী। এদের মেরুদ্ন্ড পাশ থেকে দেখলে উপর ও নিচের দিকে দুটি বক্রতা দেখা যায়, যা ভারসাম্য রেখা বরাবর দেহের ওজনকে বিন্যস্ত করে। এই ভারসাম্য রেখা, দুই হীপ জয়েন্টের ঘুর্নন কেন্দ্রের পিছন দিকে অবস্থিত মেরুদন্ডের দ্বিতীয় হাড় বরাবর, লম্বালম্বিভাবে অবস্থিত। এই ব্যবস্থা কোমড়ের হাড়কে ভাসাম্য রেখার পিছনে হেলে বাধুনীর মত লিগামেন্টের সাহায্যে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে। এটা দুপায়ে দাড়িয়ে থাকার একটা অতি উন্নত ব্যবস্থা যা সংস্লিস্ট পেশীকে বিশ্রাম দিয়ে দীর্ঘক্ষন দাড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে। হাটুর সংযোগ লক্ষ করলে দেখা যায় একে পিচনে নিয়ে লক করে ফেলা যায় ফলে তার আশেপাশের পেশীকে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ করে দেয়। বসা থেকে দাড়ানোর অতিরিক্ত শক্তি বড় হীড় মাসল থেকে সরবরাহ করা হয়। কোমড়ের কাত হবার ব্যবস্থা, চলার সময় পাকে মাটিতে ঘষা খাওয়া থেকে রক্ষা করে। আর উরুর হাড় ভিতরের দিকে বাঁকা হওয়ার ফলে দুই পা কাছাকাছি থাকে এবং এর ফলে হাটার সময় ডানে বাঁয়ে দুলতে হয়না অথচ প্রয়োজনে সহজেই কাত হওয়া যায়।

শরীরের এজন এ শক্তি ছোচ লিভারের অনুরূপ গোড়ালী এ আংগুলের সমন্বয়ে গঠিত চলন ব্যবস্থার মাধ্যমে মাটিতে প্রবাহিত হয়। চলার সময় হাত গতিশীল ভারসাম্য প্রদান করে। হাতের দোলন, দেহকে অগ্রসরমান পায়ের বিপরীত দিকে কাত হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।

আধুনিক মানুষের সূক্ষ্ণ কাজ করার জন্য কোন কিছু ধারা ক্ষমতা আছে (প্রিসিসন গ্রিপ)।

ফসিল রেকর্ড ইঙ্গিত দেয় হোমো ইরেকটাস থেকে বিবর্তিত হয়ে হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস থেকে আধুনিক মানুষের এত বেশি যে, অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস থেকে মানুষর উদ্ভব হতে পারে না। এ পরিবর্তনের কোন ফসিল রেকর্ডও নেই। ফসিল রেকর্ড প্রমান করে প্রায় ৩৫ হাজার বছর পূর্বে হঠাৎ করেই সমস্ত নিয়ান্ডার্থাল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাছাড় সাম্প্রতিক জেনেটিক এনালিসিস সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রমান করেছে যে, মানুষ নিয়ান্ডার্থালেনসিস থেকে উদ্ভুত হয়নি

"British paleontologist Christopher Sringer is convinced that Neanderthals evolved in Europe from Homo Erectus abd suddenly became extinct between 35000 and 30000 years ago, unable to compete effectively with Homo Sapiens originating in Africa. In my view, he says, "they are dead end highly evolved in their own direction but not the direction of modern humans." _ The 'TIME' March 14, 1994.

তাহলে আধুনিক মানুষ এলো কোত্থেকে? ফসিল রেকর্ড থেকে বোঝা যায় প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে আফ্রিকায় আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছিল। তারা হোমো ইরেকটাস থেকে সরাসরি উদ্ভব হয়েছে বলে ধারণা করা যায় কিন্তু তার সপক্ষে কোন ফসিল রেকর্ড নেই। অথচ হোমো ইরেকটাস থেকে হোমো সেপিয়েন্সের পার্থক্য এত বেশি যে এর বিবর্তনের কয়েক পর্বের এবং সুদীর্ঘ সময়ের ফসিল রেকর্ড থাকার কথা ছিল।

"The total pattern of the bodily structures of H. erectus as preserved in the bones, is rather different from that of Homo Sapiens. Parts of the Post-cranial skeleton are robust but otherewise generally comparable to those of modern humans. The brain is relatively small, though not so small as that as Australopithecus and H. habilis. In addition in this hominids thick skull bones and extra-ordinarily developed eyebrow ridge and occipital torus, some inbestigators say that they see unique, specialized features, not characteristic either of its presumed ancestors or of apes and not pointing to H. Sapiens as the direction of subsequent evolution. Some scientists even infer that these last traits show H. erectus to have specialized so far off the modern human line that it could not have been ancestral to H. Sapiens" __The New Encyclopedia Britannica

বিবর্তনবাদ একটা ভাল তত্ত্ব। সম্ভবত মানুষ (তথাকথিত আধুনিক মানুষ বাদে অন্যান্য সব প্রাণী বিবর্তনের মাধ্যমেই আবির্ভুত হয়েছিল। অন্তত: যতদিন পর্যন্ত বিবর্তনবাদ সত্যিকারভাবে(!) প্রমানিত হচ্ছে না ততদিন পর্যন্ত ...

রেফারেন্স:

1. 'Planet Earth' written by Peter Owen in "The Encyclopedia of Space Travel and Astronomy" edited by Jonm Man
2. Encyclopedia Britannica
3. The Time' March 14, 1994
4. মানুষ ও মহাবিশ্ব__ মেজর মো: জাকারিয়া কামাল, জি

No comments: