Friday, October 31, 2008

আরেকটা ২৮শে অক্টোবর অবতারনার চেষ্টা

ঘটনার শুরু বেশ খানিকটা আগে থেকে। আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকটা মামলার আসামী আওয়ামী লীগের এক পোষা সন্ত্রাসীকে (আলাউদ্দিন) ইদানিং বেশ দেখা যাচ্ছে। সে জরুরী অবস্থা আসার পর থেকে গা ঢাকা দিয়ে ছিল। তারপর বেশ কয়েকদিন আগে থেকে তাকে তাবলিগ জামাতের লোকজনে সাথে মিশতে দেখা যাচ্ছিল। তারউপর সে তার চেহারায় নতুনত্ব এনেছে দাড়ি দিয়ে। আগে গার্মেন্টসে চাকরি করত আর মাস্তানী করে বেড়াত। এখন অনেকটা ভদ্র দেখা যাচ্ছিল, নিয়মিত মসজিদে আসত।

২৮শে অক্টোবরের ঘৃণ্য নরহত্যার প্রতিবাদে পোস্টারিং করেছে আমার ওয়ার্ডের শিবিরের সভাপতি এবং আরো তিনজন। পোস্টারিং করতে করতে একসময় ফজরের আযান দিল তার কিছুক্ষন পর দেখা হল সেই ভদ্রতার আবরনের সন্ত্রাসীর সাথে। একলা ছিল বলে সে তেমন কিছু বলল না তবে ওদের নাম জিজ্ঞেস করল এবং জাহিদ ভাই(ওয়ার্ড সভাপতি) তার উত্তর দিয়েছেন সুন্দরভাবেই যেমনটি একজন ইংরেজীতে অনার্স পড়ুয়া ছেলে জবাব দেয়ার কথা। এটা আমি তার কাছেই শুনেছি।

আজ সন্ধায় মসজিদ থেকে মাগরিব নামাজ পড়ে বেরুলাম। জাহিদ ভাইও আমাদের মসজিদে নামাজ পড়তে এসেছেন। হঠাৎ ঐ কুত্তাটা মসজিদ থেকে বেরিয়ে জাহিদ ভাইকে ধরে একটা গলীতে নিয়ে গেল। আমাদের কয়েকজন ফ্রেন্ডও তা দেখে তার সাহয্যে এগিয়ে গেলাম। কুত্তাটা উল্টা পাল্টা ঘেউ ঘেউ করল তাকে ঠেলে ভদ্রভাবেই সরিয়ে দিলাম সেও ক্ষানিক্ষন ঘেউ ঘেউ করে চলে গেল।

তারপরও কুকুরেরতো কোন বিশ্বাস নাই তাই জাহিদ ভাইকে এগিয়ে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেলাম। হঠাৎই দেখি ঐ কুত্তাগুলা তার সাগরেদদের দল নিয়ে দৌড়ে আসল। এসেই জাহিদ ভাইয়ের উপর চড়াও হল। কুত্তাগুলার হাত থেকে তাঁকে সরিয়ে নিলাম এবং আমি জাহিদ ভাইকে দ্রুত বাসায় পৌছে দিলাম।

আজকের ঘটনাটা ঠিক সেই ২৮শে অক্টোবরের মতোই। কুত্তাগুলা সেদিনের মতোই কোন কারন ছাড়াই অস্ত্র নিয়ে আসল এবং তান্ডব চালানোর চেষ্টা করল। তবে একটা জিনিস বুঝলাম না কুত্তাগুলার গায়ে নাই কোন শক্তি অথচ গলার জোরের কমতি নাই। আর আমি এদের এত ধাক্কালাম আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে এই আটদশজনকে আটকালাম অথচ তারপরও এরা কিছুই করতে পারল না। জানি এরা আবারও আসবে দলবল ভারী করে কেননা এটাই যে এদের স্বভাব।

একটা প্রশ্ন এই মূর্খদের কি যোগ্যতা আছে একজন ইউনিভার্সিটিতে অনার্স পড়ুয়া ছাত্রের গায়ে হাত তোলার?

আর কতদিন এভাবে আওয়ামী সন্ত্রাস সহ্য করতে হবে?

আমার কথাটা কি বিশ্বাস করা যায়?

খবর পেলাম ইতালির ভেনিস বন্দরে ১৯ শতাব্দির শুরুতে একটা দারুন জাহাজ যাত্রা শুরু করেছিল। জাহাজটা মূলত: কমার্শিয়াল ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি গত দুশ বছর ধরে সম্পুর্ন মানুষের হস্তক্ষেপ ব্যতিত সুন্দরভাবে জলে চড়ে বেড়াচ্ছে। এটির কোন নাবিক নেই। নেই ফার্স্ট মেট অথবা কোন ক্রু। এটি সম্পুর্ণ স্বয়ংক্রিয় ভাবেই বিভিন্ন বন্দরে বন্দরে ঘুরে বেড়ায়। শত ঝড়ও তার যাত্রাপথে কোন সমস্যা করতে পারেনি। আরও মজার ব্যপার হচ্ছে এই জাহাজ তৈরীতেও কোন মানুষের হাতের প্রয়োজন হয়নি এমনকি কোন যন্ত্র তথা বহির্শক্তি ব্যবহৃত হয়নি। যে কেউ তার মালামাল জাহাজের কাছে রেখে দিলে সে নিজে নিজেই তা লোড করে নেয়। আর তা গন্তব্যে পৌছে দেয়।
এটা এখন পর্যন্ত দুশটা সফল যাত্রাসম্পন্ন করে এখনো সুন্দরভাবে জলে ভেসে বেড়াচ্ছে।

আমার কথা কে কে বিশ্বাস করলেন, হাত তুলেন। কেন করলেন বলে যান দয়া করে। আর যারা বিশ্বাস করেননি তারাও হাত তুলেন। কেন করেননি তাও বলে যান।

যদি এ ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য হয় তবে এই বিরাটকায় মহাবিশ্বও নিজে নিজেই তৈরী হয়ে কোটি কোটি বছর ধরে সুন্দরভাবে চড়ে বেড়াচ্ছে। আর যদি বিশ্বাসযোগ্য না হয় তবে এই দুনিয়ার নিশ্চয়ই কোন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে যিনি একে তৈরি করেছেন এবং তা পরিচালনা করছেন।

Monday, October 13, 2008

বিবর্তনবাদ/ মানুষের আবির্ভাব

পৃথিবীতে কি করে মানুষ ও অন্যান্য প্রানীর উদ্ভব হলো এ ব্যাপারে আস্তিক ও নাস্তিকদের মধ্যে এক বিরাট বিরোধ চলছে। আমার ধারণা এ ব্যাপারে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়েছে বিবর্তনবাদ আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই। এ বাকযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গন্য করা হয় বিজ্ঞানকে। তবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে বিজ্ঞানকে এ ব্যাপারে আসামী সাব্যস্ত করতে অনিচ্ছুক। কেননা এ মহাবিশ্ব তৈরী করেছেন সৃষ্টিকর্তা এক বিষ্ফোনের মাধ্যমে। আর তারপর মহাবিশ্ব এক জটিল আকার ধারণ করেছে। আর বেচারা বিজ্ঞান এ জটিলতার অভ্যন্তরস্ত জ্ঞান আহরণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ হিসেবে পবিত্র কোরআন এক মহা বিজ্ঞান গ্রন্থ। প্রসংগত বেচারা বিজ্ঞান যা ই আবিষ্কার করে তা ই দেখা যায় আল কোরআনে প্রায় ১৫ শ বছর আগে উল্লেখিত হয়ে গেছে। তো আমার ইচ্ছা আজ বিবর্তনবাদ নিয়ে কিছু লেখালেখির অপচেষ্টা করব। নিজের কিছুই লিখতে পারবনা কারন আমার মত মুর্খের নিজে কিছু করার ক্ষমত আগেও ছিল না, সামনেও হয়তো থাকবে কিনা সন্দেহ। দেখি বিজ্ঞান আর কোরআন দুটোর সমন্বয়ে কিছু লিখব।

প্রথত আল কোরআন ও বিজ্ঞান উভয়ই এ মত প্রকাশ করেছে যে, পুরো মহাবিশ্বের সৃষ্টির সূচনা একটি সিংগুলারিটি থেকে বিগ ব্যাং নামে পরিচিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে হয়েছে। তারপর সময়ের আবর্তনে বিভিন্ন ধাপে ধাপে পৃথিবী নামক বাসোপযোগী একটা গ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। তারপর জীবের সূচনা হয়েছে একটা আণুবীক্ষনিক এককোষী প্রাণী থেকে আনুমানিক প্রায় ৩০০কোটি বছর আগে। বিজ্ঞান বলে এ জীবটির উদ্ভব একটা অ্যাকসিডেন্ট এবং পৃথীবির সবচেয়ে বড় বিষ্ময়কর ঘটনা। কিন্তু আস্তিকতাবাদ বিশ্বাস করে এটা দুর্ঘটনা নয় বরং সৃষ্টিকর্তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ। এরপর ১৮ শতকে ডারউইনের আবিষ্কৃত বিবর্তনবাদ অনুসারে এ এককোষী জীবটি থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে উদ্ভব হয়েছে বাদবাকি প্রাণীরা। কোরআনেও তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কেননা আল্লাহ কোরআনে উল্লেখ করেছেন তিনি শুধু মাত্র আদমকেই বেহেশত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, মাছ- সাপ এদেরকে নয়।

এ ব্যাপারে প্রায় ১৫শ বছর আগে নাযিলকৃত আল কোরআনের ২৪ নম্বর সূরার ৪৫ নম্বর আয়াতে সৃষ্টিকর্তা উল্লেখ করেছেন
"এবং আল্লাহ সব জীবকে পানি হতে পয়দা করেছেন, তাদের মধ্যে কিছু আছে যারা পেটের উপর ভর করে চলে, কিছু আছে দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে চলে, আবার কিছু আছে যারা চার পায়ে ভর করে চলে। আল্লাহ যা খুশী পয়দা করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব শক্তিমান।"

এ আয়াত থেকে আমরা যে বিবর্তনবাদের ধারণা পাই তা আজকের আবিষ্কৃত আধুনিক বিবর্তবাদের ঠিক অনুরূপ।
আয়াতের প্রথম অংশ: "এবং আল্লাহ সব জীবকে পানি হতে পয়দা করেছেন"

বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা: বিজ্ঞান এ পর্যন্ত যতটুকু আবিষ্কার করেছে তা থেকে জানা যায় পৃথিবীর প্রথম প্রানীর উদ্ভব পানিতে হয়েছিল। বিবর্তন ধারার প্রথম পাঁচটি প্রজাতির প্রাণী যেমন নিউররোসপরা, ক্যান্ডিডা, স্ক্রুওয়ার্ম, মথ, এবং টুনা মাছ পানিতে উৎপন্ন হয়েছে।

আয়াতের দ্বিতীয় অংশ: "তাদের মধ্যে কিছু আছে যারা পেটের উপর ভর করে চলে,"

বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা: বিজ্ঞানের বিশ্লেষন অনুযায়ী বিবর্তন ধারায় ৬ষ্ঠ এবং ৭ম প্রজাতি হলো বিভিন্ন রকমের সরিসৃপ। এক্ষেত্রে প্রথম বিবর্তিত প্রজাতি হলো সাপ অত:পর কচ্ছপ।

আয়াতের তৃতীয় অংশ: "কিছু আছে দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে চলে,"

বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা: সরিসৃপের পরের বিবর্তিত ৯,১০,১১,১২ নং প্রজাতিগুলোর উদাহরন হলো পেঙ্গুইন, মুরগী, হাস, কবুতর এবং ক্যাংগারু যারা দুপায়ে ভর করে চলে।

আয়াতের চতুর্থ অংশ: "আবার কিছু আছে যারা চার পায়ে ভর করে চলে। আল্লাহ যা খুশী পয়দা করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব শক্তিমান।"

বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা: বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন প্রমান করে বিবর্তন ধারার ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ এবং ১৮ নং প্রজাতি চার পায়ে ভর করে চলে। এদের উদাহরণ ক্রমানুসারে খরগোস, শুকর, গাধা, ঘোড়া, কুকুর এবং বানর।

অতএব আয়াতের দেয়া বিবর্তবাদকেই আধুনিক বিজ্ঞান প্রমান করেছে। এ থেকে আমার আবারও মনে হচ্ছে বিজ্ঞান আস্তিকতার বিরোধী নয়। বরং বিজ্ঞান শুধু সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে চিনতে ও বুঝতে সহায়তা করে। যেমনটা করেন তাফসীরকারগন। বরং নাস্তিকগন তাদের মৌলবাদকে প্রমান করার জন্য বিজ্ঞানকে ব্যবহার করার অপপ্রয়াস চালান। আমাদের অজ্ঞানতা আমাদেরকে তা বিশ্বাস করতে বাধ্য করে।

১৮৫৭ সালে "In the Origin of Species by Means of Natural Selection", এবং ১৮৭১ সালে "The Descent of Man and Selection in Relation to Sex" নামক ডারউইনের দুটি বই প্রকাশিত হবার পর থেকে অনেকে ভাবতে থাকেন বানর থেকে মানুষের আবির্ভাব হয়েছে। বিবর্তনবাদীরা মনে করতেন যে বানরের সংবেদনশীল হাতের কারনে এবং গাছে বাস করার পদ্ধতি রপ্ত করতে গিয়ে তাদের মস্তিস্ক বড় হয়ে গেছে। তারপর তারা সমতলে নেমে আসে এবং সমতলে হাটার অভ্যাস করতে গিয়ে তাদের পা সুগঠিত ও লম্বা হয়েছে এবং কোমরের হাড়ে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে এভাবেই মানুষের বিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এমন ফসিল আবিষ্কার করতে পারেননি যাতে বানরের মস্তিস্ক বৃদ্ধির চিহ্ন পাওয়া যায়। প্রসংগত, মানুষের খুলির মস্তিষ্ক ধারণক্ষমতা ১৪৫০ ঘন সেন্টিমিটার। আর বানর জাতীয় প্রানীর মস্তিষ্ক ধারণ ক্ষমতা ৩২৫ থেকে ৪৫০ ঘনসেন্টিমিটার। তাছাড়া মানুষ এবং বানরের পেলভিস (কোমরের হাড়) , মাথা এবং পায়ের হাড়ের পার্থক্য অনেক বিশাল।

বর্তমান বিবর্তনবাদীরা ধারণা করেন একই পূর্ব পুরুষ থেকে উদ্ভব হওয়া দুটি শাখার একটি শাখায় কয়েক প্রজাতির পর উদ্ভব হয়েছে মানুষের। আর অন্য শাখায় কয়েক প্রজাতীর পর উদ্ভব হয়েছে শিম্পান্জির।

বৈজ্ঞানিকগন যেসকল ফসিলের সন্ধান পেয়েছেন সেগুলোকে পা, মস্তিস্ক, কোমড়ের হাড়, মাথার খুলির ইত্যাদির ক্রমোন্নতি পর্যবেক্ষন করে পাঁচটি জেনাসে ভাগ করেছেন। সেগুলি হলো:
১. অস্ট্রালোপিকেথাস
২. হোমো হাবিলিস
৩. হোমো ইরেকটাস
৪. হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস
৫. হোমো সেপিয়েন্স (পূর্ণাঙ্গ মানুষ)


অস্ট্রালোপিথেকাস: প্রায় ২০ থেকে ৩০ লক্ষ বৎসর আগে এরা দক্ষিন আফ্রিকায় বিচরণ করত। এরা সম্পুর্ন বানর ছিল। এদের খুলির ধারন ক্ষমতা ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ ঘনসে.মি.। এদের একটি প্রজাতি অস্ট্রালোপিথেকাস আফরেনসিস (লুসি বলে খ্যাত) এর ফসিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারন এদের হাটুর সংযোগ ছিল এমন যে তারা সম্পুর্ণ সোজা হয়ে দাড়াতে পারত। তাছাড়া এদের সম্পুর্ণ শরীরই ছিল বানরের মত। উল্লেখ্য বানরের হাটুর সংযোগ সোজা না হওয়ার কারনে তারা হাটতে পারে না এবং গভীর জঙ্গলে ঝুলে ঝুলে বাস করে। বিবর্তনবাদীরা ধারণা করেন দুপায়ে হাটার ফলেই বানরের দেহ ধীরে ধীরে মানুষের মত হতে থাকে। ডোনাল্ড জোহানসন এবং তার দল ইথিওপিয়া থেকে অনেক ফসিল হাড় সংগ্রহ করে তারপর উপযুক্ত হাড় বিবেচনা করে তা জোড়া দিয়ে লুসির গঠন তৈরী করেছিলেন। তারপর ছোটছোট অনেক হাড় জোড়া লাগিয়ে তা দিয়ে লুসির করোটি নির্মান করেছিলেন যা দেখতে একদম অস্ট্রালোপিথেকাসের মত হয়েছিল। উল্লেখ্য লুসির ৬০% হাড়ই এখনো পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, ঐ সময় হাড়ের বয়স নির্ধারনের পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি। ফলে তাদের নির্মিত ফসিলটি সমসাময়িক হাড় দিয়ে তৈরী হয়েছিল কিনা তা বলা অসম্ভব।

অস্ট্রালোপিকেথাস আফরেনসিস থেকে পরে অস্ট্রালোপিথেকাস আফরিকানাস প্রজাতির উদ্ভব। হাটুর বৈশিষ্ট্য জানা যায় এমন কোন ফসিল আর অস্ট্রালোপিথেকাস প্রজাতির পাওয়া ফসিলে মধ্যে পাওয়া যায়নি।

হোমো হাবিলিস: বানর থেকে মানুষের বিবর্তন প্রমানের জন্য অবশ্য্ই বিজ্ঞানীদের প্রমান করতে হবে বানরের মস্তিষ্ক সময়ের আবর্তনে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এবং তাদের পায়ের হাড়ও আরো হটনযোগ্য হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় একসময় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে ফেললেন হোমো হাবিলিস প্রজাতির ফসিল (ও এইচ ১৬, ও এইচ ২৪, কে এন এইচ আর ১৪৭০ কে এন এইচ আর ১৮১৩, কে এন এইচ আর ১৮০৫) । বিবর্তনবাদীরা মনে করেন এরা হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস আফরিকানাসের উত্তরসূরী। এদের মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা ছিল প্রায় ৬০০ ঘনসে. মি. যেখানে শিম্পান্জির ৩০০ এবং মানুষের গড়ে ১৪৫০ ঘনেসে.মি.। এদের আবির্ভাব আফ্রিকায় হয়েছিল প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ বছর আগে। এরা লম্বায় গড়ে ১.৫২ মিটার ওজন ৪৫ কেজি। এরা প্রায় ৫ লক্ষ বছর পৃথিবীতে টিকে ছিল।

১৯৮৬ সালে ওলদুভাই জর্জে হোমো হাবিলিসের একটি মূল্যবান ফসিল পাওয়া যায় যেটিই একমাত্র ফসিল যার সাথে হাতপায়ের হাড় পাওয়া গিয়েছিল। এগুলি একধরনের ছোট জাতের বানর ছিল। এদের হাত ও পা খুবই ছোট ছিল যা বিবর্তবাদের তত্ত্বের বিপরীত। বিবর্তনবাদীরা তাই ভয়ে এই ফসিলটির কোন গুরুত্বই দেননি। বরং তাদের মতবাদকে রূপ দেবার জন্য এই জাতের অন্য হাড়গুলোর (শুধু মাথার হাড়) সাথে লম্বা লম্বা হাড়কে জোড়া দিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন। এবং এর ব্যাখ্যা হিসেবে বলেন যে, একদিন লম্বা হাড়বিশিষ্ট হোমো হাবিলিস পাওয়া যাবেই, তাই তারা আপাতত এই হাড়গুলো লাগিয়েছেন।

১৯৮৬ সালে পাওয়া ও এইচ -৬২ কে গুরুত্ব দিলে হোমো হাবিলিসকে বিবর্তন ধারা থেকে বাদ দিতে হয়। কারন তাহলে মগজ বৃদ্ধি পেয়েছে এমন কোন বানর জাতীয় প্রানীই থাকেনা।

তারপরও বিজ্ঞানীরা ধরে নিয়েছেন হোমো হাবিলিস সত্যিই দেড় মিটার লম্বা ছিল এবং তারা বিবর্তিত হয়ে হোমো ইরেকটাসে পরিণত হয়েছে।

হোমো ইরেকটাস: হোমো হাবিলিসের পরের পর্যায় হলো হোমো ইরেকটাস। ৫ থেকে ১০ লক্ষ বছর পূর্বে এদের আবির্ভাব হয়েছিল। এরা প্রায় পুরো পৃথিবী জুড়েই বাস করত। জাভা, চায়না এবং আফ্রিকায় এদের মাথার খুলি, চোয়াল ও দাঁতের ফসিল পাওয়া গেছে। এদের কিছু উরুর হাড়ও পাওয়া গেছে যা দেখতে মানুষের হাড়ের মত হলেও অনেক ভারী।

এদের মাথার হাড় বর্তমানের শিম্পান্জি, গরিলা এবং ওরাংওটাং এর মতই। খুলির হাড় খুব মোটা, খুলির উপরের অংশ নিচু, কপাল ঢালু এচোখের ভ্রুর হাড় উঁচু। এদের খুলির পেছনে ওকিপিটাল টোরাস (ফুলে থাকা একটি অংশ) আছে। এদের নাক খুব চওড়া এবং বানর জাতীয় প্রাণীদের মতই সামনের দাঁত বড়।

হোমো ইরেকটাসের শুধুমাত্র মাথার খুলির সাথে মানুষের পার্থক্য অনেক আর তাছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশতো এখনো পাওয়াই যায়নি। তবে এদের পায়ের দুএকটা যে হাড় পাওয়া গেছে তা এত ভারী আর শক্ত যে সব মিলিয়ে পর্যবেক্সন করে অনেক বিবর্তনবাদীও মনে করেন হোমো ইরেকটাস থেকে হোমো সেপিয়েন্সের বিবর্তন সম্ভব নয়। তবে আশার কথা হলো হোমো ইরেকটাসের মাথার ধারণক্ষমতা ছিল গড়ে ১০০০ ঘনসে.মি।

শুধুমাত্র মাথার খুলি এবং পায়ের হাড় দেখে বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরাও বিশ্বাস করতে চাননা যে হোমো ইরেকটাস হাটতে পারত। তবে যেসব প্রাণী হাটতে পারে তাদের খুলি এবং ঘাড়ের সংযোগ খুব কাছাকাছি হয় তবে গাছে বসবাসকারীদেরও এরুপ হতে পারে। তবে বিবর্তনবাদীগন এইটুকু নিয়েই বিশ্বাস করতে চান যে, হোমো ইরেকটাসগন হাটতে পারত এবং তাদের পরে বিবর্তিত হয়ে হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস এর আবির্ভাব হয়।

হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস: জার্মানীর নিয়ান্ডার্থাল নামক স্থানে এই প্রজাতির ফসিল প্রথম পাওয়া যায়। প্রায় ২ থেকে ১ লক্ষ বছর পূর্বে এদের আবির্ভাব হয়। এরা মূলত ইউরোপের বাসিন্দা ছিল। তবে এদের ভৌগলিক রুপান্তর (যেমন মানুষ সবাই একই হলেও বিভিন্ন দেশে এদের রূপ ভিন্ন) পৃথিবীর অন্যান্য অংশেও বাস করত। ফসিল রেকর্ড থেকে বোঝা যায় এরা আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর পূর্বে হঠাৎ করেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

ফসিল রেকর্ড থেকে বোঝা যায়, হোমো ইরেকটাস থেকে ধীরে ধীরে হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস এর আবির্ভাব হয়েছে। এদের মাথার খুলিও নিচু এবং লম্বাটে ছিল। মুখমন্ডল বড় ও লম্বা ছিল। ভ্রুর হাড় উচু ছিল, দাত এবং নাক বিচ্ছুরিত ছিল। মুখের পেশী কিছুটা হালকা হয়েছিল কিন্তু ছেদন দাঁত এবং কর্তন দন্ত হোমো ইরেকটাসদের মতই খুব বড় বড় ছিল। এতে বোঝা যায় এরা দাঁত কিছু ধরার জন্য বা মারামারির জন্য ব্যবহার করত। এশিয়ার এবং আফ্রিকাতে মুখমন্ডল আরও কিছুটা হালকা হয়ে পড়েছিল। তাদের চওড়া কাধ, বলিষ্ঠ বুক এবং পেশীবহুল হাত ছিল। এদের কোমরের ও পায়ের হাড় প্রমান করে তাদেরকে চলার সময় অধিকতর ডানে বাঁয়ে দুলতে হত।

তাদের হাত শক্তভাবে কিছু ধরার জন্য উপযোগী ছিল। যাকে বলে পাওয়ার গ্রিপ। তবে সূক্ষ কোন কিছু ধরার উপযোগী হাত(প্রিসিশন গ্রিপ) তাদের ছিল না।

নিয়ান্ডার্থালেনসিসরা ছোট ছোট দলে বাস করত। তারা পাথরের ও কাঠের হাতিয়ার ব্যবহার করতে পারত। তাদের বসবাস এলাকায় লালমাটি ও কয়লা দেখে বোঝা যায় ওরা আগুনের ব্যবহার জানত। তারা পুরোপুরি পশুর মাংস খেয়ে জীবনযাপন করত। উদ্ভিদজাত খাবার খাওয়ার কোন আলামতই পাওয়া যায়নি। তাদের বসবাসরীতি দেখে বোঝা যায় এরা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করত।

তাদের দেহে অনেক আঘাত ও যখমের নিদর্শন পাওয়া গেছে। ফসিলে অনেক ভাঙা আর মচকানোর আলামত পাওয়া যায় যা দেখে বোঝা যায় এরা প্রচন্ড ঝগড়াটে প্রকৃতির ছিল। তারা দলে দলে ব্যপক মারামারি করত। বয়োবৃদ্ধিকালে ব্যাপক পুষ্টিহীনতা তাদের মাঝে দূর্বল পারিবারিক সন্ধন এবং মমতাহীনতার ইংগিত দেয়।

খুজে পাওয়া ফসিলের মাথার তুলনা:

বিষয় .হোমো ইরেকটাস নিয়ান্ডার্থাল মানুষ
......................................................................................................
১.ভ্রু . উঁচু . উঁচু .সমতল

২.কপাল . ঢালু . ঢালু . খাড়া

৩.খুলি . লম্বাটে ও নিচু . লম্বাটে ও নিচু . গোল ও উচু

৪.ওকিপিটাল . আছে . আছে . নেই
টোরাস

৫.খুলির হাড় . খুব মোটা . খুব মোটা . পাতলা

৬.গলার হাড় . ঘাড়ের দিকে . ঘাড়ের দিকে . থুতনীর দিকে

৭.চোয়াল . ভারী . ভারী . হালকা

৮.থুতনী . নেই . নেই . আছে

৯.দাঁত . খুব বড় . খুব বড় . ছোটা ছোট

১০.নাক . নিচু . নিচু . উচু

১১.পেশী . হাড়ে ভারী পেশীর সংযোগ বিন্দু দেখা যায় . হাড়ে ভারী সংযোগ বিন্দু দেখা যায় হালকা পেশী

১২,খুলির ধারণ . ১০০০ সিসি . ১২০০ সিসি .১৪৫০সিসি
ক্ষমতা(গড়ে)

হোমো ইরেকটাস ও নিয়ান্ডার্থালদের আকৃতি এক হলেও নিয়ান্ডার্থালরা প্রতি বিষয়েই কিছুটা উন্নত ছিল যা হোমো ইরেকটাস থেকে নিয়ান্ডার্থালে বিবর্তনের স্বপক্ষে ইঙ্গিত দেয়।

হোমো সেপিয়েন্স: আগে যাদের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে তাদের মধ্যে হোমো ইরেকটাস এবং হোমো নিয়ান্ডার্থালদের পাওয়া ফসিলের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে। তবে এদের আকৃতি এক হলেও নিয়ান্ডার্থালরা অনেকক্ষেত্রে ইরেকটাসদের তুলনায় উন্নত ছিল বিধায় এটা প্রমানিত হয় যে, হোমো নিয়ান্ডার্থালরা ইরেকটাস থেকে বিবর্তিত হয়েছিল। হোমো সেপিয়েন্স অর্থাৎ আধুনিক মানবজাতির সাথে নিয়ান্ডার্থালদের এবং এদের সমসাময়িকদের পার্থক্য বিস্তর। মানুষের মাথার খুলি উচু ও চওড়া। কপাল খাড়া, চোয়াল হালকা ও দাত ছোট। এজন্য এদের মুখের পেশী হালকা এবং মুখাবয়ব কোমল। আর এ কারনেই এদের খুলির ভারসাম্যবিন্দুর পশ্চাতের পেশীও হালকা, ফলে খুলি ও ঘাড়ের সংযোগস্থল আরও নিচে অর্থাৎ মুখের কাছে। এদের সুস্পস্ট থুতনী ও নাক আছে

মানুষ দুপায়ে চলাচলকারী প্রাণী। এদের মেরুদ্ন্ড পাশ থেকে দেখলে উপর ও নিচের দিকে দুটি বক্রতা দেখা যায়, যা ভারসাম্য রেখা বরাবর দেহের ওজনকে বিন্যস্ত করে। এই ভারসাম্য রেখা, দুই হীপ জয়েন্টের ঘুর্নন কেন্দ্রের পিছন দিকে অবস্থিত মেরুদন্ডের দ্বিতীয় হাড় বরাবর, লম্বালম্বিভাবে অবস্থিত। এই ব্যবস্থা কোমড়ের হাড়কে ভাসাম্য রেখার পিছনে হেলে বাধুনীর মত লিগামেন্টের সাহায্যে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে। এটা দুপায়ে দাড়িয়ে থাকার একটা অতি উন্নত ব্যবস্থা যা সংস্লিস্ট পেশীকে বিশ্রাম দিয়ে দীর্ঘক্ষন দাড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে। হাটুর সংযোগ লক্ষ করলে দেখা যায় একে পিচনে নিয়ে লক করে ফেলা যায় ফলে তার আশেপাশের পেশীকে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ করে দেয়। বসা থেকে দাড়ানোর অতিরিক্ত শক্তি বড় হীড় মাসল থেকে সরবরাহ করা হয়। কোমড়ের কাত হবার ব্যবস্থা, চলার সময় পাকে মাটিতে ঘষা খাওয়া থেকে রক্ষা করে। আর উরুর হাড় ভিতরের দিকে বাঁকা হওয়ার ফলে দুই পা কাছাকাছি থাকে এবং এর ফলে হাটার সময় ডানে বাঁয়ে দুলতে হয়না অথচ প্রয়োজনে সহজেই কাত হওয়া যায়।

শরীরের এজন এ শক্তি ছোচ লিভারের অনুরূপ গোড়ালী এ আংগুলের সমন্বয়ে গঠিত চলন ব্যবস্থার মাধ্যমে মাটিতে প্রবাহিত হয়। চলার সময় হাত গতিশীল ভারসাম্য প্রদান করে। হাতের দোলন, দেহকে অগ্রসরমান পায়ের বিপরীত দিকে কাত হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।

আধুনিক মানুষের সূক্ষ্ণ কাজ করার জন্য কোন কিছু ধারা ক্ষমতা আছে (প্রিসিসন গ্রিপ)।

ফসিল রেকর্ড ইঙ্গিত দেয় হোমো ইরেকটাস থেকে বিবর্তিত হয়ে হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস থেকে আধুনিক মানুষের এত বেশি যে, অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস থেকে মানুষর উদ্ভব হতে পারে না। এ পরিবর্তনের কোন ফসিল রেকর্ডও নেই। ফসিল রেকর্ড প্রমান করে প্রায় ৩৫ হাজার বছর পূর্বে হঠাৎ করেই সমস্ত নিয়ান্ডার্থাল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাছাড় সাম্প্রতিক জেনেটিক এনালিসিস সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রমান করেছে যে, মানুষ নিয়ান্ডার্থালেনসিস থেকে উদ্ভুত হয়নি

"British paleontologist Christopher Sringer is convinced that Neanderthals evolved in Europe from Homo Erectus abd suddenly became extinct between 35000 and 30000 years ago, unable to compete effectively with Homo Sapiens originating in Africa. In my view, he says, "they are dead end highly evolved in their own direction but not the direction of modern humans." _ The 'TIME' March 14, 1994.

তাহলে আধুনিক মানুষ এলো কোত্থেকে? ফসিল রেকর্ড থেকে বোঝা যায় প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে আফ্রিকায় আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছিল। তারা হোমো ইরেকটাস থেকে সরাসরি উদ্ভব হয়েছে বলে ধারণা করা যায় কিন্তু তার সপক্ষে কোন ফসিল রেকর্ড নেই। অথচ হোমো ইরেকটাস থেকে হোমো সেপিয়েন্সের পার্থক্য এত বেশি যে এর বিবর্তনের কয়েক পর্বের এবং সুদীর্ঘ সময়ের ফসিল রেকর্ড থাকার কথা ছিল।

"The total pattern of the bodily structures of H. erectus as preserved in the bones, is rather different from that of Homo Sapiens. Parts of the Post-cranial skeleton are robust but otherewise generally comparable to those of modern humans. The brain is relatively small, though not so small as that as Australopithecus and H. habilis. In addition in this hominids thick skull bones and extra-ordinarily developed eyebrow ridge and occipital torus, some inbestigators say that they see unique, specialized features, not characteristic either of its presumed ancestors or of apes and not pointing to H. Sapiens as the direction of subsequent evolution. Some scientists even infer that these last traits show H. erectus to have specialized so far off the modern human line that it could not have been ancestral to H. Sapiens" __The New Encyclopedia Britannica

বিবর্তনবাদ একটা ভাল তত্ত্ব। সম্ভবত মানুষ (তথাকথিত আধুনিক মানুষ বাদে অন্যান্য সব প্রাণী বিবর্তনের মাধ্যমেই আবির্ভুত হয়েছিল। অন্তত: যতদিন পর্যন্ত বিবর্তনবাদ সত্যিকারভাবে(!) প্রমানিত হচ্ছে না ততদিন পর্যন্ত ...

রেফারেন্স:

1. 'Planet Earth' written by Peter Owen in "The Encyclopedia of Space Travel and Astronomy" edited by Jonm Man
2. Encyclopedia Britannica
3. The Time' March 14, 1994
4. মানুষ ও মহাবিশ্ব__ মেজর মো: জাকারিয়া কামাল, জি

চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান

ভুমিকা: ইসলামী আন্দোলনের মূখ্য হাতিয়ার চরিত্র। আন্দোলনের তঃপরতা যত বৃদ্ধি পাবে, শয়তানের তঃপরতাও তত শক্ত হবে।

সমস্যা সমূহ:
১.পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী সভ্যতার
২. সমাজতন্ত্রের নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারা

সমস্যা সৃস্টিকারী তিন প্রকারের মুসলিম:
১. বৈরাগ্যবাদী
২. স্বার্থবাদী
৩. সঠিক পথহারা (যেমন মাজার পূজারী, মসজিদে বাতিদানকারী)

ইসলামী আন্দোলনকারীদের শক্তি:
১. ঐক্যের শক্তি
২. চারিত্রিক শক্তি

ইসলামী আন্দোলনকারীদের দায়িত্ব:
১. চরিত্রকে পুঁজি হিসেবে পূর্ণ ও সঠিকভাবে ব্যবহার
২. আন্দোলনের জন্য যোগ্যতা অর্জন
৩. মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যেই চরিত্রকে বিনিয়োগ করতে হবে
৪. এ ব্যপারে সতকর্তা অবলম্বন করা
৫. সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করা

মূল আলোচ্য বিষয়:
১. খোদার সাথে সম্পর্ক
২. সংগঠনের সাথে সম্পর্ক
৩. সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক

১. খোদার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির উপায়:
১. মৌলিক ইবাদাত সমূহ যথাযথ ভাবে পালন করা।
২. কোরআন হাদীস সরাসরি অধ্যয়ন করা।
৩. নফল ইবাদাত পালন করা।
৪. সার্বক্ষনিক দোয়া ও জিকির করা।

২. সংগঠনের সাথে সম্পর্ক:
১. কর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
২. দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

১. কর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য:
১. আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্য রক্ষা করা।
২. অন্ধ আনুগত্য পরিহার করা।
৩. নেতার পরিবর্তনেও আনুগত্যে পরিবর্তন না আনা।

২. দায়িত্বশীলের দায়িত্ব ও কর্তব্য:
১. কোমল হৃদয়ের অধীকারী হওয়া।
২. দুর্বলতার কারনে অধ:স্তনকে ধিক্কার না দেয়া।
৩. অধ:স্তনদের সাথে পরামর্শ করে কাজ করা।
৪. সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকা।

৩ সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক:
১. তড়িৎ সিদ্ধান্ত গহন না করা।
২. সকলের সম্পর্ক হবে ভাই ভাই।
৩. কাউকে বিদ্রুপ না করা।
৪. পরস্পরের দোষ না খোঁজা।
৫. খারাপ নামে না ডাকা।
৬. কু-ধারনা না করা।
৭. একে অপরের উপর গোয়েন্দাগিরি না করা।
৮. গীবত না করা।

মূল: চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
লেখক: নইম সিদ্দিকী
আলোচনায়: আবু বকর (তুরাগ)

আমাদের কোরআন শেখার পদ্ধতি কি সঠিক?

প্রথম কবে কার মুখে কোরআনের আবৃত্তি শুনেছি তা ঠিক মনে পড়ছেনা। তবে সেই ছোটবেলা থেকেই ভোর সকালে মায়ের কোরআন তেলাওয়াত শুনছি। ছোটবেলায় নানা বাড়িতে প্রায়ই খুব ভোরে নানার সুমধুর কুরআন তেলাওয়াতের শব্দে ঘুম ভাঙত। আর কুরআনের সুর এত সুন্দর লাগত যে, আমি প্রায়ই অনেকক্ষন নানার পাশে বসে থাকতাম। আরবী পঠনরীতি আর কোরআনের অপ্রতিদ্বন্ধি সাহিত্য এতই মধুর যে তা সবারই মন কাড়ে।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ বাবা মা ই তাঁদের সন্তানকে কোরআন শিক্ষায় শিক্ষিত করতে খুবই আগ্রহী। বিশেষ করে রমজান এলে অনেক পরিবারই প্রাইভেট মৌলভী রেখে বাচ্চাদের কোরআন শেখানোর চেষ্টা করেন। আর অনেকে নিজেদের জ্ঞানকেও বাড়ানোর চেষ্টা করেন। আর এভাবেই আমিও এক মক্তবে কোরআন শিখেছি। কিন্তু আসলে এ শেখার পদ্ধতি এবং উপসংহারটা কি সত্যিই আরাধ্য সাফল্যে প‌ৌছায়?

মক্তবে বা প্রাইভেটভাবে আমারা সত্যিকার অর্থে কোরআন শিখি না বরং কোরআনের ভাষা শিখি। অর্থাৎ আরবী ভাষা শিখি। একটা কায়দা বই দিয়ে এ শিক্ষা শুরু হয় আর সঠিক উচ্চারণে কোরআন তেলাওয়াত দিয়ে শেষ হয়। কিন্তু এতে লাভ এতটুকুই যে এর ফলে আমরা কুরআন তেলাওয়াত করতে পারি এবং যেকোন আরবী সাহিত্য আবৃত্তি করতে পারি। কিন্তু বুঝতে পারি না। আর আমাদের বেশিরভাগ লোকজনই বোঝার চেষ্টা করি না। রমজান এলে অথবা প্রতিদিন সকালে অথবা বাড়িতে কেউ মারা গেলে সুন্দর ভাবে জড়ানো আর ধুলো জরজরিত প‌্যাকেট করা কোরআন বের করে তেলাওয়াত করি।

এটিই কি হওয়া উচিত ছিল? যে এভাবে কোরআন শিখল আর যে শিখলই না তার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু? প্রথমজন কোরআনের অক্ষরগুলো চোখ দিয়ে দেখে শব্দ তৈরি করতে পারে আর অপরজনও চোখ দিয়ে অক্ষরগুলো দেখতে পারে তবে উচ্চারণ করতে পারে না। যে উচ্চারণ করতে পারছে সেও কি উচ্চারণ করল তা বুঝতে পারল না। ব্যাপারটা এমন যে, একজন পিয়ানো বাদক বাজায় কিন্তু সে কানেই শোনে না। আরেকজন বাদকের পিয়ানো থেকে শব্দই আসে না। এ দুজনের মধ্যে আসলে কোন পার্থক্যই নেই কেননা কেউই আসলে সুর শুনতে পাচ্ছে না।

কোরআনের এ দুনিয়ায় অবতরণের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের সার্বিক জীবনের উপর আল্লাহর নিয়ন্ত্রন আনা। আল্লাহ এ দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন, পৃথিবী নামক এ গ্রহে আমাদেরকে তাঁর প্রতিনিধি রুপে পাঠিয়েছেন। আর তাঁর দেয়া দায়িত্ব কর্তব্য শেষবারের মত কোরআনের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। আর এ কর্তব্য কিভাবে আমরা সম্পাদন করব তা ও জানিয়ে দিয়েছেন এ কিতাবের মাধ্যমে। আর নবীজী (স) এর ২৩ বছরের জীবন হলো কোরআনের প্র্যাকটিকাল উদাহরণ। আর এসবের মাধ্যমে আল্লাহর উদ্দেশ্য একটাই তা হলো এ জীবনের ছোট্ট সময় যেন আমরা সঠিক ভাবে পরিচালিত করতে পারি। আর এ জ্ঞান অর্জনকে তিনি করে দিয়েছেন বাধ্যতামূলক। তাই কোরআন ও রাসূলের জীবন ও কর্ম জেনে তা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব।

সর্বশেষ কথা এই যে, আরবী পড়তে শেখা ই কোরআন শেখা নয় বরং আরবী বুঝতে শেখাই হলো মূলত: কোরআন শিক্ষা। আর আমার মত যারা আরবী বোঝেননা তাঁদের উচিত কোরআনের অর্থসহ অধ্যয়ন করা। তবে আরবী ভীনদেশী ভাষা হওয়ায় তার অনেক শব্দ আছে যার সঠিক শব্দার্থ বাংলায় এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়। তাই কোরআনের সঠিক জ্ঞান আহরণের জন্য আমাদের উচিত কোরআন তাফসীর সহ পড়া। সম্ভব হলে বিভিন্ন মুফস্সিরের তাফসীর অধ্যয়ন করা।

Comments of some Renowned Scientists and Qur'anic statement

Dr. Joe Leigh Simpson, Professor of Obstetrics and Gynaecology, proclaims: “...These Hadiths (sayings of Muhammad) could not have been obtained on the basis of the scientific knowledge that was available at the time of the writer (7th century)...It follows that not only is there no conflict between genetics and religion (Islam) but in fact religion (Islam) may guide science by adding revelation to some of the traditional scientific approaches... There exist statements in the Quran shown centuries later to be valid which support knowledge in the Quran having been derived from God”.

Dr. Tejatet Tejasen, Professor of Anatomy, attending the Eighth Saudi Medical Conference, stood up and likewise announced: “From my studies and what I have learnt at this conference, I believe that everything that has been recorded in the Quran 1400 years ago must be true. That can be proved the scientific way”.

Qur'anic Statement (কোরআনের ভবিষ্যদ্বানী) :

Allah mentioned: “Soon we will show them Our Signs in the (furthest) regions (of the earth) and in their own soul, until it becomes manifest to them that this is the Truth...”(41:53)

ইসলাম এবং আধুনিক বিজ্ঞান...

"তিনিই সে সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যাহা কিছু যমীনে আছে সে সব (পদার্থ)। তাহার পর তিনি মনো সংযোগ করেছেন আসমানের প্রতি। বস্তুত: তিনি তৈরি করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সব বিষয়ে অবহিত। - আল কুরআন ২:২৯

কাফেররা কি দেখেনা যে, আসমান জমীন সবকিছু মিলিত অবস্থায় ছিল এবং আমরাই এগুলিকে আলাদা আলাদা করে দিয়েছি।আল কুরআন ২১: ২৯

(ভার্সিটির একটা সেমিনারে একটা প্রসেন্টেশন করেছিলাম, তার স্লাইডগুলোর সারমর্ম)

Definition of Science
Science (from the Latin scientia, meaning “Knoledge") is the effort to discover, understand, or to understand better, how the physical world works, with observable physical evidences as the basis of that understanding. It is done through observation of existing phenomena, and/or through experimentation that tries to simulate phenomena under controlled conditions. Knowledge in science is gained through research.

Way to the Modern Science
The modern age of Science can be divided into three steps:
The Empirical Investigation age: Theophrastus, Aristotle, Elder Pliny.
Dawn of Science: Ibn Al-Haytham, Abu Rayhan Al-Biruni, Ibn-Sina, Al-Khawarizmi etc.
Modern age of Science: Continuing.

Islam and Science
Al-Qur’an, the complete for the people of whole world which is revealed to the Prophet Mohammad (pbuh) is the great encyclopedia for Science.
Reading Al-Qur’an is obligatory for Muslims.
Prophet (pbuh) inspired a lot to acquiring knowledge and using newer technology in every sectors of practical life.

The Big Bang
Currently, the Big Bang model of the origin of the universe is the cosmological paradigm most widely accepted by astronomers. It holds that about 15 billion years ago the universe began with the explosive expansion of a single, extremely dense matter, the primordial mass. Only after the development of radio telescopes in 1937 that, the necessary observational precision was achieved in order for astronomers to arrive at the above conclusion. What does Qur’an say about our universe’s origin?
“Do not the unbelievers see that the Heavens and the earth were joined together, then We split them apart.” (21:30)

Expanding Universe
In 1925, Edwin Hubble (after whom the Hubble Space telescope is named) provided the observational evidence for the expansion of the universe. Stephen Hawking (author of ‘A Brief History of Time’) states: “The universe is not static, as had previously been thought, it is expanding”.
“And the firmament, We constructed with power and skill and verily We are expanding it” (51:47)

Conquest of Space by Human
Human exploration and the conquest of space began with the launching of the Russian Satellite, Sputnik I on Oct. 4, 1957. Then followed the launching of humans into space, which eventually led to a manned space flight to the Moon on July 20th, 1967. Thus the dream of humanity since the dawn of civilization to go beyond the earth to the heavens was realized.
“O assembly of Jinn’s and humans, if you can penetrate the regions of the heavens and the earth, then penetrate them! You will not penetrate them save with a power (of God).” (55:33)

Existance of Sun's Orbit
Nicholas Copernicus in 1512 laid his Heliocentric Theory of Planetary motion, which placed the sun motionless in the centre of the solar system with all the planets revolving around it. Modern science tells us now that the sun too is not still, but is in motion.
“It is He who created the night and the day, and the sun and the moon, all (the celestial bodies) swim along, each in its orbit with its own motion.” (21:33)

The Protective Atmosphere
Earth is constantly bombarded by meteoroids that disintegrate upon the atmosphere and by lethal rays emitted by the sun. This UV radiation is absorbed by the Ozone layer forming the outer fringe of our atmosphere. Thus our atmosphere along with its Ozone layer is a protective covering for us. Life possibly could not have existed without it. How meticulously, does our Lord sustain and protect us against this atmospheric destruction.
“And we have made the atmosphere a protective roof, yet do they turn away from the Signs which these things point to.” (21:32)

Embryology
“God fashioned man from a small quantity (of sperm)” (16:4)
“Then We placed him as a drop in a place of rest” (23:13)
“Then We made the drop into a leech like structure...” (23:14)
“And He (God) gave you hearing and sight and feeling and understanding.” (32:9)

Existence of Pair in all Creation
Animal, plants and vegetation are divided into two genders, male and female.
In electricity, these two genders can be classified as positive and negative.
North and South pole describe it in magnetism, electron and proton in atoms, matter and antimatter etc.
“Hallowed is He, Who created pairs in all things, those that grow from the earth and of themselves, and what they know not.” (36:36)

Some Statements
Dr. Keith Moore, Professor of Embryology, after analyzing the verses of the Quran for three years comments: “It has been a pleasure for me to help clarify statements in the Quran about Human Development. It is clear to me that these statements must have come to Muhammad from God or Allah because almost all of this knowledge was not discovered until many centuries later”
Dr. Maurice Bucaille, French Physician, after studying Quran and comparing it with modern science, addressing the French Academy of Medicine in 1976 proclaimed: “Our knowledge of these disciplines is such, that it is impossible to explain how a text produced at the time of the Qur'an could have contained ideas that have only been discovered in modern times”.

Conclusion
Guidance to humanity proclaimed in the Quran is complete and applicable to all societies and all times. Whether we are living in the Stone Age or the Space Age, riding in horse pulled carriages or flying in Space Shuttles, we haven’t changed a bit.
We have Faith to Al-Qur’an, so, no one can go more forward than us. Now The non believers are discovering things whose are being believed by us strongly. So, we are in ahead. We have to be more conscious about Iman and believe strongly to Al-Qur’an and have to lead the world. No time can be spare.
We want to end our presentation with this message, We are the best in the world and we have to come forward again and lead the world.

বিজ্ঞান কোরআনের তাফসীরের সহায়ক মাধ্যম

একজন ছাত্র বাংলা মিডিয়ামে এস এস সি এবং এইচ এস সি তে সাইন্স বিভাগ হতে এ প্লাস নিয়ে পাশ করেছে। তাকে কি ইংলিশ মিডিয়ামের স্ট্যান্ডার্ড থ্রির জেনারেল সাইন্স বইটি পড়িয়ে দিতে হবে?

আবার মনে করুন বাসায় মেহমান এল। আপনি তাকে বাড়ির সবগুলো ঘর ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিলেন। তার শোবার ঘর, লিভিং রুম, রান্নাঘর সবই তাকে দেখানো হয়ে গেছে। তারপর সে কি তার শোবার ঘরের কোনে দরজাওলা টয়লেট খানি খুজে বের করতে পারবে না?

একজন ব্লগার এই বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, পবিত্র কোরআন গ্রন্থের ব্যাখ্যা দাতারা বিজ্ঞানের বড় বড় আবিষ্কারকে ঐ গ্রন্থে আগেই উল্লেখিত হয়েছে বলে দাবি করে থাকেন অথচ পৃথিবী যে তার আহ্নিক গতির কারনে দিন রাতের আবর্তন ঘটিয়ে থাকে তার ব্যাখ্যা নাকি আল কোরআন দিতে পারেনি।

যা হোক আল কোরআন দিন রাতের আবর্তন সম্বন্ধে কি বলেছে তা নিয়ে এখন কিছু বলব না। তবে এ সন্দেহ প্রকাশটা নিয়ে আমি সন্দেহ প্রকাশ করতে চেষ্টা করব।

ঐ ব্লগারের মতে আল কোরআন বিজ্ঞানের জটিলতম বিষয় গুলো ১৫ শ বছর পূর্বে থেকেই দুনিয়াবাসীকে জানিয়েছেন। আমরা কোরআন থেকে জানতে পেরেছি পৃথিবী গোল। যা গত ৫০০ বছর আগেও অমুসলিম বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেনি। কোরআন মহাবিশ্বের উদ্ভব এবং তার ভবিষ্যত পরিণতি বর্ণনা করেছে। আর এ তত্ত্ব এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে ধারণা হিসেবে রয়ে গেছে। কোরআন বলেছে মহাবিশ্বের সবই তাদের নির্দিষ্ট স্থানকে কেন্দ্রকে করে ঘুরছে। কোন কিছুই স্থির নয়। গ্রহ নক্ষত্রের ভারসাম্য কি করে হচ্ছে ( কেন্দ্রমূখী বল এবং কেন্দ্রবিমুখী বল) তা বর্ণনা কেরেছে।

এরপরও কি আর স্পেসিফিকভাবে বলার দরকার আছে পৃথিবীর রাত দিন কেন হয়? কি মনে হয় আপনাদের?

তারপরও আল্লাহ দিনরাত্রির আবর্তন নিয়ে জটিল কিছু তত্ত্ব কোরআনে প্রকাশ করেছেন যা আমি আগামিতে তার কিছু কিছু ব্লগে প্রকাশ করার চেষ্টা করব। আল্লাহই দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন, তিনিই সবচেয়ে ভাল জানেন মহাবিশ্বের কোন জিনিস কিভাবে তিনি রেখেছেন। আমরা বিজ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে তার কিছু আবিষ্কার করতে পারি মাত্র। বলা যায় বিজ্ঞান কোরআনের তাফসীরের সহায়ক মাধ্যম।

আমার দেশ- মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন

বাংলা আমার, বাংলা তোমার
বাংলা মোদের দেশ,
এই দেশেতে বাস করি সবাই বেশ।

বাংলা আমার মায়ের ভাষা
বাংলা আমার প্রাণ
এই ভাষাতেই কথা বলি চির অম্লান।

এই দেশেতে জন্ম আমার
এই দেশেতেই মরণ
মোরা বাংলা মায়ের দামাল ছেলে
থাকবে চির স্মরণ।

সেই দেশেরই নামের স্মৃতি
থাকবে মোদের দিবানিশি।

কবি পরিচিতি:
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন
অষ্টম শ্রেণী,
সরকারী বিজ্ঞান কলেজ সংলগ্ন উচ্চ বিদ্যালয়

বিভীষিকাময় ২১শে আগস্ট কক্ষনো ফিরে না আসুক..........

আইভি রহমান সহ ২৪ টি প্রাণ ঘাতী এবং এবং অসংখ্য সাধারন মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মীর পঙ্গুত্ব বরণের বিভীষিকাময় ২১ শে আগষ্ট আর কক্ষনো যেন এ বাংলার বুকে ফিরে না আসে। আগামীর বাংলাদেশ দেখতে চাই শান্তিপ্রিয় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাপুর্ণ হিংসা বিদ্বেষহীন সমাজের প্রতিকৃতি হিসেবে।

২১শে আগষ্টে জীবন দেয়া সকলের মৃত্যু পরবর্তি শান্তি এবং পঙ্গুত্ব বরনকারী রাজনৈতিক কর্মিদের সুস্থতা কামনা করি সকলে মিলে।

আর কত সম্পদ হলে অভাব মিটবে?

আকবর সাহেব বাংলাদেশের বড় একজন ব্যবসায়ী। কোটি কোটি টাকার সম্পদ তাঁর। তবে তিনি বড়ই অভাবী। আরব শেখের মহাকাশ যাত্রার খবর শুনে তাঁরও খুব শখ হয়েছে মহাকাশে যাবার। কিন্তু হিসেব কষে দেখলেন তাঁর সম্পত্তি আর ব্যবসা যা আছে তাতে হয়তো মহাকাষ যাত্রার ব্যয়ভার বহন করা যাবে কিন্তু তারপর ফিরে এসে যা থাকবে তা দিয়ে তার বর্তমান জৌলুস ধরে রাখা যাবেনা। ইতিমধ্যে তাঁর বউও বায়না ধরেছে আমেরিকাতে এক বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ব্যাবসায়ী বন্ধুর বিক্রিতব্য আলিশান বাড়িটি কেনার। কিন্তু তাও আকবর সাহেবের পক্ষে সম্ভব নয়। অভাবের তাড়নায় তিনি পরিবারে আর বন্ধু মহলে খুব নিচু হয়ে থাকতে হচ্ছে।

আনোয়ার সাহেব বিশিষ্ট শিক্ষিত ভদ্রলোক। বিরাট এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরী করেন। হিংসা করার মত বেতন তাঁর। তারপরও তিনি অভাবী। ভদ্রলোক একটা তিন বছরের পুরোনো একটা প্রাডো ওয়াগন গাড়ি চালান । তাঁর এক ব্যাবসায়ি বন্ধু গত মাসে একটা লিমুজিন আনিয়েছেন। তার পুরোনো প্রাডো নিয়ে তাকে এখন রীতিমত লজ্জায় পড়তে হচ্ছে। কিন্তু তার পক্ষে লিমুজিন কেন লিমুজিনের একটা দরজা কিনতেও খবর হয়ে যাবে। সত্যি ভদ্রলোক কত বড় অভাবী!

লিয়াকত মিয়া ঠেলাগাড়ি চালায়। কাজে বেরুলে তার ঘরে ভাত রান্না হয় আর নাহলে তিন ছেলেমেয়ে বৃদ্ধ মা বাবা সহ তার না খেয়ে থাকতে হয়। গত তিনদিন থেকে তার খুব জ্বর। প্রথম দিন কষ্ট করে কাজে গিয়েছিল কিন্তু মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে কাজে ইস্তফা দিতে হয়েছে। সহঠেলাওয়ালারা ধরে বাসায় দিয়ে গেছে। ঘরে চাল নেই। তার বউ বস্তির পাশের ঘর থেকে চাল এনে কোনরকম ব্যবস্থা করেছিল গতকাল। আজ তাও নেই। গতকাল থেকে ছেলেটা গোশত দিয়ে ভাত খাবে বলে বায়না ধরেছে। ওরও দোষ কি, গত এক বছরে ভাল রান্না বান্না ঘরে কখনোই হয়নি। পাশের এলাকার এক মুরুব্বির মৃত্যুর পর ওর পরিবারের লোকজন গরীবদের জন্য খানাপিনার আয়োজন করেছিল, তখন ভাল খাওয়াদাওয়া হয়েছিল। এরপর অনেকদিন প্লেটে ভাল খাবারের দৃশ্য চোখেও পড়েনি লিয়াকত মিয়ার পরিবারের লোকজনের। অভাব এধরনের পরিবারের নিত্য সঙ্গী।

তো যাই হোক। শবে বরাতের রাতে এ তিন অভাবী মসজিদে এসে আল্লাহর দরবারে উচিয়ে ধরল, যদি আল্লাহ কোন সহায় দেয়। একজনের অভাব মোটামুটি কয়েক কোটি টাকা , আরেকজনের কয়েক লক্ষ টাকা আর শেষ জনের কয়েকশ টাকা। ভাগ্যক্রমে তিনজন একই কাতারে পাশাপাশি দাড়িয়ে নামাজ পড়ল। তারপর মোনজাতের সময় সবাই আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে তাদের আবেদন জানাতে লাগল।

আনোয়ার সাহেব চোখে মুখে গালভরা অশ্রু নিয়ে বলতে লাগলেন, "আল্লাহ আমার আর কয়েক লাখ টাকা দরকার তারপর আর আগামী একবছর কিচ্ছু চাইবনা। আমাকে কয়েকলাখ টাকার ব্যবস্থা করে দাও। আমি একটা গাড়ি কিনব। সেই গাড়িতে চড়ে তোমার ঘরে এসে নামাজ পড়ে তোমার প্রতি আমি শুকরিয়া জানাব।"

পাশে লিয়াকত মিয়া জোরে জোরে কাদতে কাদতে আল্লাহর কাছে কয়েকশ টাকার জন্য দোয়া করতে লাগল। তার প্রয়োজন কয়েক কেজি চাল আর কিছু তরকারি।

এই দেখে আকবর সাহেব উঠে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন এদের মোনাজাত শুনে আল্লাহ তার মহাকাশ ভ্রমনের জন্য টাকা মন্জুর করার প্রশ্নই আসে না। তবে যাবার সময় মসজিদের খাদেমের কাছে লিয়াকত মিয়ার জন্য হাজার খানেক টাকা দিয়ে গেলেন।

আর এদিকে আনোয়ার লিয়াকতের মোনাজাতের স্টাইল দেখে ভাবল, এ ব্যাটা তো আল্লাহর সব মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে। এর কারনে আল্লাহ তার আবেদন নাও শুনতে পারেন। আর শুনলেও মন্জুর করেন কিনা তার নিশ্চয়তা নাই। তাই একে তাড়ানোর জন্য পকেট থেকে পাচশো টাকার একটা নোট বের করে লিয়াকতকে দিয়ে বলল বাসায় চলে যাও। লিয়াকত টাকাটা নিয়ে বাইরে আসতেই মসজিদের খাদেম ওর হাতে আকবর সাহেবের দেয়া টাকাটা দিল। সব পেয়ে লিয়াকত খুশি মনে বাসায় চলে এল।

ভুলে গেছ তুমি যে "ফখরুদ্দিন"

ফখরুদ্দিনের বয়স তখন ৪৮। জীবনের এত লম্বা পথ পার করার পর হঠাৎই বোধোদয় হলো জীবনে আসলে সত্যিকারের জ্ঞান অর্জন করা হলো না। তাই সব ছেড়ে ছুড়ে জ্ঞানের সন্ধানে বের হলো সে।

খবর পাওয়া গেল অমুক জায়গায় এক ব্যাক্তি মানুষকে জ্ঞান দান করেন। তো সেদিকে ছুট লাগাল ফখরুদ্দিন। সেখানে পৌছে এলাকাবাসীর কাছ থেকে খোঁজ খবর নিয়ে সে একসময় পৌছে গেল সেই জ্ঞানীর প্রাসাদের সামনে। গিয়ে দেখল ওখানে অনেক লম্বা লাইন। মানুষজন লাইনে লাইনে গিয়ে তার কাছ থেকে জ্ঞান নিয়ে ফিরে আসছে। সেও দাড়িয়ে গেল লাইনে।

জ্ঞানদানকারীর কাছে জ্ঞান চাইতেই ফখরুদ্দিনকে সে একটা চামচ হাতে ধরিয়ে দিল। আর সে চামচে ছিল সামন্য একটু সরিষার তেল। জ্ঞানদানকারী ফখরুদ্দিনকে বলল "যাও, পুরো শহর ঘুরে এস, তবে সাবধান চামচের তেল যেন সামান্যও না পড়ে।"

যেই কথা সেই কাজ। ফখরুদ্দিন চামচের দিকে কড়া নজর রেখে সাবধানে পুরো শহর ঘুরে এল। একফোঁটা তেলও পড়েনি। ঘুরে এসে সে আবার জ্ঞানদানকারীর কাছে এল। জ্ঞানদানকারী তাকে জিজ্ঞেস করল "কি দেখলে?" ফখরুদ্দিন উত্তর দিল "আমিতো তেল বাচাতে গিয়ে শহরের কিছুই দেখতে পারিনি।" তখন জ্ঞানদানকারী তাকে ধমকে বলল "যাও এবার তুমি তেলও বাচাবে এবং তার সাথে পুরো শহর ঘুরে ভালভাবে দেখে আসবে।"

ফখরুদ্দিন আবার রওনা করল। তবে এবার সে শহর দেখতে গিয়ে অসাবধানতাবশত: তেলগুলো সব ফেলে দিল। তারপর হাজির হল সেই জ্ঞানদানকারীর কাছে। সব দেখে শুনে জ্ঞানদানকারী ঘোসনা দিলেন "ফখরুদ্দিন শুনে রাখ, তোমার পক্ষে একই সাথে কোন কিছুর যত্ন নেয়া এবং পাশাপাশি তার চারদিকে লক্ষ রাখা সম্ভব নয়"। তারপর ফখরুদ্দিন এখান থেকে এ জ্ঞান লাভ করে খুশি মনে ফিরে এল নিজের দেশে।

এ ঘটনার বেশ কয়েক বছর পর ফখরুদ্দিন এখন বাংলাদেশের তত্তাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

ফখরুদ্দিন মনে করিয়ে দিতে চাই "ভাই তুমি ফখরুদ্দিনই, তোমার দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশের যত সম্পদ তাকে কিছুদিনের জন্য সুরক্ষিত রাখা। তুমি গত দেড় বছরে আশেপাশে বেশি নজর দিতে গিয়ে আমাদের সম্পদ অনেক নষ্ট করেছ। আর বেশি নজর দিওনা। তেল একদম ফুরাতে বসেছে।"

Thursday, October 9, 2008

পেঁচার আধুনিক সংস্করণ আমেরিকা, এই পেঁচাকে নিয়ে একটা গল্প....

একদা এক বনে পাখিদের একটা বৈঠক বসেছে। সব গন্যমান্য পাখি উপস্থিত। টিয়া পাখি থেকে শুরু করে টুনটুনি, হামিং বার্ড পর্যন্ত হাযির। এ বৈঠকে পেঁচাও এসে যোগ দিয়েছে। পেঁচা দেখতে ভয়ংকর আবার কাজকর্মও ভয়ংকর। কেউ তাকে দেখতে পারেনা।
যাহোক, ঈগল পাখির সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়েছে। ঈগল দেখল টিয়া পাখি, কাকাতুয়া পাখি সহ অনেকেই কেমন যেন সন্ত্রস্ত এবং বিরক্ত হয়ে আছে। তো সভাপতি হিসেবে সংলাপ সফল করতে তাদরেকে তাদের সমস্যা দাখিল করার নির্দেশ দিলেন।

তখন পাখিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলল, " হুজুর, এ বৈঠক থেকে সবচেয়ে বিচ্ছিরি, কুৎসিত পাখিটাকে তাড়িয়ে দিন।"

আবেদন শেষ হতে না হতেই সভার এক কোন হতে আওয়াজ এল, "হুজুর বলে দিন, কাকে সভা থেকে তাড়িয়ে দেব?"

সবাই একযোগে তাকিয়ে দেখে আওয়াজটা পেঁচাই করেছে।

আধুনিক এ সভ্যতায়ও একটা বাস্তব পেঁচা বর্তমান। সে হল আমেরিকা। এরা দাবী করে এরা এক বীর জাতি। তারা, বীরের মত যুদ্ধ করে রেড ইন্ডিয়ানদের কাছ থেকে আমেরিকা দখল করেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষি, এরা কুকুরের মত গনহত্যা করে রেড ইন্ডিয়ানদের মেরে আমেরিকায় তাদের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে। ঔপনেবশিক আমেরিকানরা ছিল আধুনিক অস্ত্রে পরিপূর্ন আর রেড ইন্ডিয়ানরা সম্পুর্ন নিরস্ত্র।

আমেরিকানরা গত একশ বছর ধরে বিভিন্ন দেশের অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ি। তারা ইরান ইরাকের যুদ্ধ বাধাতে সাহায্য করেছে, ইসরাইলকে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মদদ করেছে। বিশ্বযুদ্ধে পারমানবিক বোমা ব্যবহার করেছে।
ইরাক দখল করার জন্য এখন পর্যন্ত যুদ্ধ চলছে, আফগানিস্তান দখল করে তাঁবেদার সরকার গঠন করেছে। ইরাণে যুদ্ধ করার জন্য পা উচিয়ে রেখেছে। ৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য তথা এক মহা মরণ তান্ডব চালানোর জন্য একটা আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়েছিল, যদিও তা সফল হয়নি। এরকম আরো অনেক কিছু। এখনও সারাবিশ্বে তারা দৌরাত্ন দেখিয়ে চলে।

আবার প্রায়ই দেখা যায় আমেরিকার অনেক মানবাধিকার সংস্থা রয়েছে। তারা প্রায়ই বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লংঘনের দায়ে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকে। মজার ব্যাপার এই যে তারা মানবাধিকার লংঘনের দায়ে ইরাকে যুদ্ধ করেছিল। গত কয়েকদিন আগে এই জন্য কলিন পাওয়েল দু:খ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশেও তাদের অনেক মানবাধিকার সংস্থা কাজ করছে। তারা প্রায়ই আমাদের বিভিন্ন হুমকি দিয়ে থাকে ।

এখন কারো কি মনে হয় যে, মানবাধিকার লংঘনকারী আমেরিকা মানবাধিকার রক্ষার জন্য কাজ করার উপযোগি? আমি প্রথম গল্পটার সাথে আমেরিকার অবস্থানের অনেক মিল পাই। বর্তমানে সব দেশ যদি মানবাধিকার লংঘনকারি দেশের বিরুদ্ধে লাগে, তবে আমেরিকা বলবে আমার সৈন্যরা তোমাদেরকে সাহায্য করবে। তাই তোমাদের দেশে আমি একটা করে ঘাটি তৈরী করব। আর এরা মানবাধিকার রক্ষা করবে।

আমার অংকের উত্তর কি কেউ মিলিয়ে দিতে পারেন?

বিবর্তনবাদ মতবাদ মতে কোন এককালে মানুষের পূর্ব পুরুষ তার আত্নপ্রকাশের ২০০ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হওয়া বানরের বিবর্তনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিবর্তিত হয়ে মানুষে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ একটা বানর প্রজাতি হতে মানুষে পরিবর্তিত হতে সময় লাগে প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর। যেহেতু এটা প্রকৃতির নিয়ম। তাই তা একটা চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে প্রকৃতিতে এখনও চলছে।

তাহলে আজ কোন বানর প্রজাতি আজ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছর পর মানুষে বিবর্তিত হবে। তাহলে আজ থেকে ঠিক ২০০ মিলিয়ন বছর আগের কোন বানর প্রজাতি থেকে তো আজ কোন মানুষের জন্ম হওয়ার কথা। ঠিক এভাবেই প্রতি বছরইতো একদল মানুষের আবির্ভাবের কথা। কিন্তু কেন হচ্ছে না। গত কাল একটা পোস্ট দিয়েছেলাম এ ব্যাপারে, মোটামুটি সবাই আমাকে তিরস্কার করলো।
কিন্তু আমার তো মাথায় আসছে না গত চার হাজার বছরে কি জঙ্গল থেকে বের হওয়া একদম ফ্রেশ প্রজাতির কোন মানুষ এসেছে বলে কেউ দেখেছে?

আমার মনে হয় দেখেনি। কেননা গত একশ বছরে যে কোন ফ্রেশ প্রজাতির মানুষ আসে নাই এটা একদম নিশ্চিত।

আমার পড়াশুনা যদিও অংক নিয়ে, তারপরও হিসেব মিলতেই চাচ্ছে না।

নাস্তিকতা কি তারপরও যৌক্তিক মনে হয়?

প্রগতিশীলদের জামা কাপড় হলো নাস্তিকতা। আস্তিকতা বিশেষ করে ইসলামী অনুশাসন থেকে বর্তমান সময়ের বুদ্ধিমান(যদিও আমার সন্দেহ হয়) লোকজন অনেক কষ্ট করে হলেও বের হয়ে আসতে চান।

সে যা হোক, নাস্তিকতাবাদীদের প্রথম ধাপ বিধাতাকে অস্বীকার করা। এ ব্যাপারে তাদের চিস্তা হলো, ধর্ম বলে, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেন তাঁর ইবাদাতের জন্য। কই মানুষকেতো আল্লাহর হাতে সৃষ্টি হতে দেখা যায় না। বাবা মায়ের মাধ্যমেই প্রকৃতির অনেক নিয়মের মতই সন্তানের জন্ম হয়।

ধর্ম বলে, পৃথিবীর প্রথম মানুষযুগল হতে বর্তমানকার মানুষের আবির্ভাব হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে। কিন্তু নাস্তিকতার শিক্ষা হলো প্রথম মানুষ বলতে কিছু নেই। প্রথম মানুষের আবির্ভাব বিশ্বাস করা বিধাতাকে বিশ্বাস করারই সমান। তাই কোন না কোনভাবে প্রথম মানুষের ধারনা থেকে বের হতে হবে। তারই গবেষনার ধারাবাহিকতায় এল বিবর্তনবাদের ধারনা। মানুষের পূর্বপুরুষ বানর। মানুষকে বানরের সাথে তাই একই 'গন' এ স্থান দেয়া হয়েছে। তারপর এই বানরেরও উদ্ভব কোন গোত্র থেকে। এভাবে পেছনে ফিরতে থাকলে দেখা যায় মাটিতে পাওয়া অ্যামিনো এসিড হলো প্রানের রহস্য। তবে এর শুরু আসলে কোথা থেকে তা কেউ কি বলতে পারেন? যার শুরু স্পষ্ট নয় তা সত্য অবশ্যই নয়।

মানুষতো বানর হতেই উদ্ভব হয়েছে বলে কিছু লোকের ধারণা। তবে গত ৪০০০ বছরে জঙ্গল থেকে কি কোন মানুষ সভ্য জগতে এসেছে? মানুষ যদি বানরেরই পরের সংস্করণ তবে তো মানুষের কোন পূর্বপুরুষ কোন বানরের পরিবারেই জন্মেছিল। তবে এখন কেন এ ধরনের খবর সি এন এন কিংবা বিবিসিতে আসে না যে, "এ বছর জঙ্গল থেকে আসা বিবর্তিত হওয়া মানুষের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর শুধুমাত্র আমেরিকাতেই এই সংখ্যা ১৫০০০। আর নতুন এই মনুষ্যগুলোর জন্য বাসস্থানের ব্যাবস্থা করতে সরকারের ১৫ কোটি ডলার খরচ করা হয়েছে। নয়া বিবর্তিত মানুষের জন্য আলাদা স্কুলের জন্য এবছর সরকার আলাদা ফান্ড গঠন করেছে। ইত্যাদি।"

ধরা যাক ৫০০০০ বছর আগে বানর থেকে মানুষ নামে এক বুদ্ধিমান প্রানীর বিবর্তন হয়েছে। তবে এতদিনেও কেন মানুষ থেকে অন্য কোন নতুন এবং আরো বুদ্ধিমান প্রানীর উদ্ভব হলোনা? তবে কি মানুষই সেরা জীব। আর একথাতো ইসলামেরই শিক্ষা। তবে তো বলাই যায় মানুষই আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষ সর্বকালেই সকল সৃষ্টির সেরা। এবং এও সত্য যে মানুষ কোন জীব হতেই বিবর্তিত নয়। এটি মৌলিক এক সৃষ্টি। এবং যেহেতু এমনি এমনি কোন কিছুই এ দুনিয়ায় হয় না, তাই মানুষকেও কেউ না কেউ সৃষ্টি করেছে। আর মানুষের সৃষ্টিকর্তা একজন অবশ্যই আছে। আর নাস্তিকতা একটা অযৌক্তিক কল্পনা
আজ যদি কেউ অন্য কাউকে বলে, "জানিস, আজ কি দেখেছি? আজ সকালে মর্নিং ওয়াক করতে হাটতে হাটতে এয়ারপোর্টে গিয়েছি। গিয়ে মাত্র দাড়ালাম আর তক্ষুনি দেখি বিরাট এক লোহার গাদা নড়া চড়া করছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকতেই দেখি এটা একটা বিরাট বোয়িং ৭৪৭ হয়ে গিয়েছে। আমিতো তাজ্জব হয়ে গেছি। আরেকদিন আমি একটা মোটরগাড়ি হতে দেখেছি। "--কত্ত বড় চাপা দেখেন।
নাস্তিকরা এর চেয়ে বড় চাপাবাজ। এরা বলে একটা বিমান বা গাড়ি নয়, বরং দুনিয়াই নাকি এমনি এমনি হয়ে গেছে।

রাষ্ট্র ভাষা বাংলার সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত কি ব্যার্থ?... কথ্য ভাষায় বাংলার পূর্ন ব্যবহার চাই

বাংলাদেশ নামক ছোট্ট এই দেশটি যা পৃথিবীর বেশিরভাগ লোকের কাছে এখনো অজানা তার পরিচয়ের সাথে যে নামটি অঙাঅঙীভাবে জড়িত তা হলো বাংলা। বাংলার গৌরব গাথা যদি লেখা হয় তবে প্রথম গৌরবের মর্যাদা পাবে ৫২'র ভাষা আন্দোলন। বাংলাদেশের যত অর্জন তার শুরু রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে পাওয়া। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে আমাদের প্রিয় ভাই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের মত আরও অনেক ভাইকে হারিয়েছি। আদরের সন্তান, প্রিয়তম স্বামী হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়েছে এই গৌরবের মূল দাবীদারদের প্রিয়জনেরা। বাংলা আমাদের রক্তের সাথে মিশে থাকা এক অপরিহার্য পদার্থ। বাংলা আমাদের শরীরের রক্তে মিশে থাকা অনুচক্রিকার মত। শরীরের কোথাও যখন কেটে যায়, তখন অনুচক্রিকা রক্তকে জমাট বাধার ব্যবস্থা করে শরীরকে রক্ষা করে। বাংলা ভাষাও তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাসের ক্রান্তি কাল ৭১এ সকল বাঙালীকে এক হতে সাহায্য করেছিল। আমরা এই ভাষাকে দিয়েই আমাদের দেশকে চিনি। আমার প্রিয় বাংলাদেশ। কবি তার সাহিত্য মাধুর্য তাই বলেছেন, "মোদের গরব, মোদের আশা, আ'মরি বাংলা ভাষা।"

বাংলাভাষার মর্যাদা ১৯৪৭ থেকে ৭১ পর্যন্ত আমাদের কাছে উপরোল্লিখিত অবস্থায় ছিল। ভাষা আন্দোলন মূলত ছিল শহুরে আর মফস্বলের মানুষের একটা বস্তু। আর গ্রামের মানুষজন এ সম্বন্ধে বেশি কিছু জানত না। তারপরও দেখা গেছে এখনও গ্রামের মানুষের কাছে বাংলা আগে যেমন অপরিহার্য ছিল তেমনি আজও আছে। কিন্তু আজ আমরা শহুরে আর মফস্বলের মানুষজনের কাছে বাংলা ভাষা এখন আর রক্তে মিশে থাকা অনুচক্রিকা নয়, বরং আমরা বাংলাকে এখন রক্তের একটা অপ্রয়োজনীয় জীবাণুর মর্যাদা দিয়ে থাকি। কিভাবে তা বর্ণনা করার অবকাশ রাখে না, তারপরও একটু চেষ্টা করে দেখি।

১. শহরের বর্তমান শিক্ষিত সম্প্রদায় তাদের সন্তানকে ঘুমাতে যাবার সময় "গুড নাইট", এবং ঘুম থেকে উঠে "গুড মর্নিং বলা শেখায়।

২. আমরা আগে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজতাম গোসলখানা অথবা পুকুরঘাটে গিয়ে, এখন টুথব্রাশ করি টয়লেটে কিংবা বাথরুমে গিয়ে।

৩. আগের কাপড় ধোয়া এখন কাপড় ওয়াশ করা আমাদের দৈনন্দিন একটা কাজ।

৪. আমরা ব্যাবসা বলতে ছোট কারবার বুঝি, আর বিজনেস বললে বড় পুঁজির কারবার বুঝি। আগে অনেকে চাকুরী করত, কিন্তু এখন সবাই সার্ভিস করে।

৫. আমরা কাউকে ফোন নাম্বার দেবার সময় কখনো বাংলা কথায় সংখ্যা উচ্চারন করি না। কখনো বলি না যে আমার নাম্বার হলো, শুন্য এক সাত নয়...., বরং বলিযে, জিরো ওয়ান সেভেন নাইন....। ফোনে কথার শুরুতে ইংরেজিতে হ্যালো তো আছেই...।

৬. আমরা দুপুরের খাবার এখন আর খাই না। তবে লান্চ করি। ব্রেকফাস্টও এখন সকালের নাস্তার বদলে করে থাকি।

৭. টিভিতে আলোচনা অনুষ্ঠান এখন টক শো তে গিয়ে পৌছে গেছে। আর বাংলা চ্যানেলের বাংলা টক শো গুলোতে বাংলাকে সম্মান করে একটু একটু বাংলা বলার চেষ্টা করা হয়ে থাকে, বাকি টুকু ইংরেজীতেই চালানো হয়। ভাব দেখলে মনে হয় বাংলায় কথা বললে আমন্ত্রিত অতিথিকে কেউ হয়তো কম শিক্ষিত ভাবতে পারে। আর উপস্থাপনাও হয়ে থাকে আধা ইংরেজীতে আর ইংরেজীর মত করে বলা বাংলায়।

৮. এখন আবার নতুন আমদানি হয়েছে ডিজুস ল্যাংগুয়েজের। আর পাশাপাশি আছে বাংলা সংস্কৃতির বিকৃত রূপ। তা হলো উচু মাত্রায় এডিটেড বাংলা গান যেখানে বাংলিশ Rap এর সংযোজন। এই গানগুলোর জন্য ভাল শিল্পিদের প্রকৃত সম্মান করা যাচ্ছে না।

৯. ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সন্তানকে পড়ানোর প্রবণতা এখন বাবা মাদের বেড়ে গেছে। এরা সন্তানকে ইংরেজী স্কুলে পড়ানোর কারনে সন্তানদের বাংলার দক্ষতা অনেক কমে যায়। অনেক পরিবারে দেখা যায় সন্তানের সাথে বাবা মা বাসায়ও ইংরেজিতে কথা বলে।

১০. বাংলা চলচিত্রের মান দিন দিন অবনতি ঘটায় সকল বয়সের মানুষের কাছে হিন্দি মুভি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর উর্দু ভাষা হিন্দির তুলনায় শ্রুতিমধুর হওয়ায় ভারতীয় চলচিত্রে উর্দুর প্রভাব অত্যন্ত বেশি। তাদের গানের কথাগুলো হয় উর্দু। আর বাংলাদেশে হিন্দি গান তথা উর্দু গান অপেক্ষাকৃত বেশী জনপ্রিয়। আর কথায় কথায় আমরা অনেকেই কথায় কথায় উর্দু বলার চেষ্টা করি। উর্দুকে যদি কথ্য ভাষায় যোগ করার চেষ্টা করি তবে উর্দু থেকে বাচার জন্য কেন রফিক জব্বার বাংলার জন্য জীবন দিলেন?

তবে কি বলতে হবে আমরা অযথাই বাংলার জন্য জীবন দিয়েছি? অযথাই দেশকে স্বাধীন করেছি? আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস ঘোষনার কোন প্রয়োজন ছিলনা?

অবশ্যই না। বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা ছিল, আজ আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। যদিও কোন লক্ষনই দেখা যাচ্ছে না। তবে আমরা খুব বেশি সরে যাইনি। এখনো যদি উদ্যোগ নেয়া হয় তবে বাংলাকে তার পুরোনো মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়া যাবে। তাই আমার কম বুদ্ধির মাথা থেকে বের হওয়া কিছু প্রস্তাবনা আছে। আর আপনাদের সাহায্যও প্রয়োজন।

প্রস্তাবনা:
১. আমরা লেখাপড়া ও অন্যান্য দাপ্তরিক কাজে যদিও ইংরেজী ব্যবহার করাটা অপরিহার্য, কিন্তু দৈনন্দিন কথ্য ভাষায় বাংলার ব্যাবহারে কোন বাধা নেই। তাই আমরা যদি একটু চেষ্টা করি তাহলে হয়তো বাসায় সকলে বাংলার পূর্ন ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারব।

২. মজার কথা হলো আমি নিজেও প্রায় তিন বছর পর বাংলায় লিখতে গিয়ে খেয়াল করলাম হাত দিয়ে কলম চলছেই না। আমার মনে আছে আমি হাতের লেখায় স্কুলে সেকেন্ড ছিলাম। কিন্তু এখন লিখতেই পারছি না। তাই ইউনিভার্সিটি গুলোতে বাংলার কিছু কিছু ব্যাবহারের ব্যাবস্থা করা উচিত।

৩. টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে একশ ভাগ বাংলা ব্যাবহার করে অনুষ্ঠান তৈরীর ব্যবস্থা করা উচিত। শুধু একুশে ফেব্রুয়ারিতেই নয় মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সারা বছরই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্যাবস্থা করা।

৪. তরুন প্রজন্মের কাছে বাংলাকে ব্যবহারের প্রতি আগ্রহী করার জন্য স্কুল কলেজ ও ইউনিভার্সিটি লেভেলে বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক অনুষ্ঠানের ব্যাবস্থা করা।

৫. বাংলা চলচিত্রের উন্নয়ন তথা অশ্লীলতামুক্ত উচ্চ শিল্পমানের শিক্ষামূলক চলচিত্র নির্মান করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া।
ইত্যাদি।

এ-ই শেষ নয়। অনেক কাজ বাকি। সবাইকে একসাথে আবেগ দিয়ে নয় বাস্তব ভিত্তিক ভাবে কাজ করতে হবে। সামহোয়ারইনব্লগকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই তাদের বাংলা চর্চার উৎসাহপূর্ণ ওয়েবসাইটের জন্য। ভাল বাংলা লেখক ও পাঠক সৃষ্টিতে এটি সত্যিই ভাল ভুমিকা রাখছে।

পাশ্চাত্যে ইসলাম বিদ্বেষী প্রবণতা

পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে অব্যাহতভাবে ইসলাম অবমাননার বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বসহ বিশ্ব সমাজ ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছে। তো, পাশ্চাত্যে ইসলাম অবমাননার নেপথ্য কারণ নিয়ে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সাথে। এখানে তাঁর সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হলো :

** পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকা চালিয়ে যাচ্ছে। ডেনমার্কে নবীজীর অবমাননা করে কার্টুন ছাপানোর পর বিশ্বের সভ্য সমাজ তার বিরুদ্ধে ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছে। তারপরও ধর্মনিরপেক্ষতার দাবীদারদের আচরণে কোনো পরিবর্তন আসে নি। তো পশ্চিমারা যে এরকম আচরণ করে যাচ্ছে তার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন।

ড. আনিসুজ্জামান : এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তবে আমার মতে প্রধান কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ঈর্ষা। তৃতীয় কারণ হচ্ছে, কিছু লোক আছে যারা সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট, তারা ইসলামের উত্থানকে পছন্দ করে না। কিন্তু আগামী দিনে ইসলামের অভ্যূদয় সূর্যালোকের মতই নিশ্চিত ও উজ্জ্বল।

** ইউরোপীয়রা নিজেদেরকে বাক স্বাধীনতার প্রবক্তা বলে দাবী করছে। অথচ তারাই আবার হলোকাস্টের বিরুদ্ধে কথা বলা বা এ নিয়ে গবেষণা করাকে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ইসলাম বিরোধী বই লেখার কারণে সালমান রুশদিকে পুরস্কৃত করেছে এবং বহু দেশে হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। তো এরকম দ্বৈত আচরণ করা থেকে কি মনে হয় না , বাক-স্বাধীনতার কথাটা আসলে পশ্চিমাদের একটা মুখরোচক বুলি ছাড়া আর কিছু নয়।

ড. আনিসুজ্জামান : পাশ্চাত্যে দুই ধরণের মানদন্ড ব্যবহার করে যেটিকে আমরা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বলি। বেশ কিছু লোক আছে যারা তাদের আচরণ এবং বক্তব্যের ভিতরে বিপরীতধর্মী অবস্থানের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। তারা যা বলে তা মিন করে না। কিন্তু পুরা পাশ্চাত্যকে আমি এরকম মনে করবো না। কিছু বিবেকবান লোকও সেখানে রয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, পাশ্চাত্যে কিছু লোক প্রতিনিয়ত ইসলামকে অবমাননা করে যাচ্ছে। কেবল পাশ্চাত্যেই নয় আমাদের দেশেও এধরণের লোক আছে। মুসলমানদের ঘরে জন্মগ্রহণ করার পরও অনেকেই ইসলাম অবমাননাকর কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে।

** আমরা লক্ষ্য করেছি যে,ইসলামের এতো বিরোধিতা সত্ত্বেও পশ্চিমা বিশ্বে কিন্তু ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হবার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তাহলে কি বলা যায় যে মুসলমান হবার প্রবণতা রোধ করার জন্যে ইসলামের বিরুদ্ধে এই আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া?

ড. আনিসুজ্জামান : এটা আংশিক সত্য ।এর সাথে অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, বিদ্বেষ এগুলোও যুক্ত।

** বিশ্বের সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে ইসলাম ১৪ শ' বছর আগে একটা উন্নত সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। যেই সভ্যতা যুগের সকল অন্ধকার দূর করে দিয়ে মানুষকে দিয়েছে উন্নত এক জীবনের আলো। তো পশ্চিমাদের এই ইসলাম অবমাননার মাধ্যমে কি ইসলামের সেই আলোকে নিভিয়ে দেওয়া সম্ভব?

ড. আনিসুজ্জামান : কেউ কেউ এই ডেলুশনে ভুগছেন সবাই না। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে বলেছেন, তারা মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তার আলোকে প্রজ্জ্বলিত করবেন। সুতরাং আমাদের আশাবাদী হতে হবে , আল্লাহ যে রাব্বুল আলামীন এবং রাসূল (সাঃ) যে রহমাতুল্লিল আলামীন এই শিক্ষার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সকল অজ্ঞ ও ইসলাম বিদ্বেষীদের মোকাবেলা করতে হবে


পাশ্চাত্যে ইসলাম বিদ্বেষী প্রবণতা : এ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা

** পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকা চালিয়ে যাচ্ছে। ডেনমার্কে নবীজীর অবমাননা করে কার্টুন ছাপানোর পর বিশ্বের সভ্য সমাজ তার বিরুদ্ধে ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছে। তারপরও ধর্মনিরপেতার দাবীদারদের আচরণে কোনো পরিবর্তন আসে নি। তো পশ্চিমারা যে এরকম আচরণ করে যাচ্ছে তার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন।

এ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা : পশ্চিমা সভ্যতায় সমাজতন্ত্রের পতনের পর নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ কিংবা মুক্তি সংগ্রামে লিপ্ত মানুষের জন্যে ইসলামই হচ্ছে মূল চালিকা শক্তি , তাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার উৎস । ফলে পশ্চিমারা একটা লক্ষ্য ঠিক করে রেখেছে যে মানুষের জন্যে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ধর্ম সেই ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচার প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে হেয় করা এবং মুসলমানদের মৌলবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদেরকে বিশ্বসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা । তারা তাদের এই লক্ষ্যের এক পর্যায়ে এসে সরাসরি রাসুলে করিম (সা:)এর উপর কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র একে বা নানা ধরণের বিদ্রুপাত্মক কথা বলে তাকে অবমানানার চেষ্টা করছে ।আর তাদের এ পরিকল্পনার বিষয়টি আজকের নয় । বেশ আগ থেকে তারা এ অপচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র করে আসছে এবং বর্তমানে এ কাজে তারা আরো কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

** ইউরোপীয়রা নিজেদেরকে বাক স্বাধীনতার প্রবক্তা বলে দাবী করছে। অথচ তারাই আবার হলোকাস্টের বিরুদ্ধে কথা বলা বা এ নিয়ে গবেষণা করাকে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ইসলাম বিরোধী বই লেখার কারণে সালমান রুশদিকে পুরস্কৃত করেছে এবং বহু দেশে হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। তো এরকম দ্বৈত আচরণ করা থেকে কি মনে হয় না , বাক-স্বাধীনতার কথাটা আসলে পশ্চিমাদের একটা মুখরোচক বুলি ছাড়া আর কিছু নয়।

এ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা : এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই । কারণ মৌলিক অধিকার হচ্ছে আমি আমার বিশ্বাস , আমার অধিকার ও আমার আদর্শ নিয়ে চলব। আমার শালীনতার মাত্রা আমি নির্ধারণ করব ' কিন্তু সেগুলো তারা মানছে না । মুসলিম নারীদের হিজাবের বিষয়টি শালীনতার বিষয়টি ইউরোপে প্রবেশ করুক এটা তারা চাচ্ছে না । আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে ফ্রান্স বা ইউরোপের অন্যান্য দেশে তাদের দাবীকৃত কোন মৌলাবাদী গিয়ে তো আর মেয়েদের হিজাব পরানোর জন্যে উৎসাহিত করছে না । নারীরা নিজেদের শালীনতার জন্যে ইসলামী আইন মেনে হিজাব পরছে । পশ্চিমারা অনুভব করছে ইসলাম বিরোধী এত সব প্রচার প্রচারণা বা পরিকল্পনার পরও স্বপ্রণোদিতভাবে মানুষের ইসলাম গ্রহণ করার যে হিড়িক পড়ে গেছে তাতে তারা আতঙ্কিত বোধ করছে। আর তাই তারা আজ ইসলামের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে ।

** আমরা লক্ষ্য করেছি যে,ইসলামের এতো বিরোধিতা সত্ত্বেও পশ্চিমা বিশ্বে কিন্তু ইসলামে ধর্মে দীক্ষিত হবার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তাহলে কি বলা যায় যে মুসলমান হবার প্রবণতা রোধ করার জন্যে ইসলামের বিরুদ্ধে এই আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া?

এ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা : আপনার এ বক্তব্যের সাথে আমি পুরোপুরি একমত । গ্রেট ব্রিটেন বা যুক্তরাষ্ট্রে শান্তির ধর্ম ইসলাম গ্রহণকারীর সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ আমরা সকলেই জানি আধুনিক সমাজ ও সভ্যতার মূল ভিত্তি হচ্ছে পরিবার ব্যবস্থা , পরিবারের ঐক্য ইত্যাদি ।কিন্তু বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে সেই পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাচ্ছে , পরিবারের ঐক্য নষ্ট হচ্ছে, পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন ভাবে জীবন যাপন করছেন। ঐ সব সমাজের এক এক ব্যক্তি অগণিত বিয়ে করছে তারপরও শান্তি পাচ্ছে না ।তাদের জীবনে প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে শৃঙ্খলার অভাব , দেখা যাচ্ছে পারিবারিক অশান্তি । এখানে উল্লেখ্য যে ইসলামের যে আদর্শ পরিবার প্রথা, সাম্য ,ভ্রাতৃত্ববোধের কথা বলা হয়েছে তা ঐ সব সমাজে অনুপস্থিত ফলে তারা শান্তির জন্যে জীবনের শৃঙ্খলার জন্যে সুন্দর জীবনের জন্যে ইসলামের পথে আসার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর ঠিক একইভাবে মরিয়া উঠেছে পশ্চিমা সভ্যতারধারকরা যে কিভাবে মানুষের এই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার প্রবণতা রোধ করা যায় ।

** বিশ্বের সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে ইসলাম ১৪ শ' বছর আগে একটা উন্নত সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। যেই সভ্যতা যুগের সকল অন্ধকার দূর করে দিয়ে মানুষকে দিয়েছে উন্নত এক জীবনের আলো। তো পশ্চিমাদের এই ইসলাম অবমাননার মাধ্যমে কি ইসলামের সেই আলোকে নিভিয়ে দেওয়া সম্ভব?

এ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা : না , ইসলাম অবমাননা করে পশ্চিমারা ইসলামের যে আলোকিত ধারা তাকে তারা কোনোভাবেই নিভিয়ে দিতে পারবে না । পশ্চিমারা আফগানিস্তানে , ইরাকে বা ফিলিস্তিনীদের উপর যে অত্যাচার চালাচ্ছে তাছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের সৃষ্ট কারাগারগুলোতে মানুষের উপরে যে নির্যাতন চালিয়েছে বা এখনও চালাচ্ছে তাতে আমার তো মনে হয় তাদের ভেতরেই ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। আপনারা লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে একটা ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কাজেই আমি মনে করি যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে পাশ্চাত্য সভ্যতা গড়ে উঠেছে তা একটা ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতা । তারা ক্রমান্বয়ে নিশ্চিহ্ন হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে নানা কারণে যে ক্ষোভ তৈরী হচ্ছে তার ফলে তারা নিজ নিজ দেশেই এখন প্রশ্নের সম্মুখীন ।

** ইসলাম ঠেকাও প্রবণতাকে অনেকেই সাংস্কৃতিক সন্ত্রাস বলের অভিহিত করছেন। এই সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের কালো ছায়া মুসলিম দেশগুলোতেও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটাকে রোধ করার জন্যে মুসলিম চিন্তাবিদদের কী করণীয় থাকতে পারে।

এ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা : আমি মনে করি যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মোকাবেলার জন্যে মুসলিম বিশ্বের নানা ধরণের সংগঠনগুলোর মধ্যে, সরকারগুলোর মধ্যে ইসলামী বা মুসলিম সংস্কৃতির বিনিময় করা দরকার । এছাড়া ইলেকট্রনিক মিডিয়া , প্রিন্ট মিডিয়া বা অন্যান্য মিডিয়াকে অনেক বেশী শক্তিশালী করা দরকার পশ্চিমাদের এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বা সন্ত্রাস রোখার জন্যে । আমরা মুসলমানরা এসব মিডিয়ার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি। পশ্চিমাদের অনেক অবান্তর প্রশ্নের জবাব আমাদের কাছে থাকা সত্ত্বেও আমরা তা মিডিয়ার দূর্বলতার কারণে বিশ্বের প্রান্ত থেকে প্রান্তরে ছড়িয়ে দিতে পারছি না । আমাদের বক্তব্য মাত্র গুটি কয়েক এলাকায় বা মানুষের মধ্যে প্রচারিত হচ্ছে। ফলে তাদের ষড়যন্ত্রের জবাব আমাদেরকে শক্তিশালী মিডিয়ার মাধ্যমে দিতে হবে । মুসলিম সমাজের মধ্যে যারা শিক্ষিত শ্রেনী আছেন,গবেষক শ্রেণী আছেন যারা বিত্তশালী আছেন তাদের প্রত্যেকেকে এগিয়ে আসতে হবে এ কাজে । মুলসমানদের বিরুদ্ধে যে অপবাদ, অপমান ছুড়ে দেয়া হচ্ছে অথচ মুসলমানরা তা নয় , মুসলমানরা প্রকৃতপক্ষে যা তা কিন্তু পশ্চিমারা কেউ বলছে না । আমাদের উপর মিথ্যে , অযৌক্তিক ও বানোয়াট দোষ চাপানো হচ্ছে । ফলে এসবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্যে মিডিয়াগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে ।

সৌজন্যে: রেডিও তেহরাণ।

দাতা সংস্থা!!

বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং উন্নয়নের কথা এলেই তার সাথে সাথে আরেকটা নাম শুনা যায়, তা হলো দাতা সংস্থা। বাংলাদেশে এই দাতা সংস্থার কত গুরুত্ব তা কল্পনাও করা যায় না। বাংলাদেশের নীতিতে দাতা সংস্থা আর বৈদেশিক অশ্লীল হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের সরকার এক পাও দাতা সংস্থার পরামর্শ ছাড়া এগোয় না। তারমানে বুঝাই যায় বাংলাদেশের সকল ক্ষেত্রে দাতা সংস্থার কত অবদান। দেখি দাতা সংস্থার কিছু ফেরেস্তাশুলভ আচরন যার কারনে আমরা তাদেরকে আমাদের Savior বা সম্মান করে দাতা সংস্থা বলি।

১. দাতা সংস্থা মানে হলো এ ডি বি, আই এম এফ এবং বিশ্ব ব্যাংক। তারা আমাদের কে অনেক টাকা পয়সা দেয় উন্নয়ন কার্যে। আর এই টাকা এমনি এমনি দেয় না, দেয় ঋণ হিসেবে।

২. তারা আমাদের উন্নয়ন কার্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিনা শর্তে ঋন দেয় না। তারা ঋণ দেয়ার সময় এমন এমন সব শর্ত দিয়ে দেয় যা দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী। মাঝে মাঝে তারা এমন শর্ত দেয় দেখে মনে হয়না বাংলাদেশ কোন স্বাধীন দেশ, বরং কতগুলো দেশ আর ব্যাংকাররাই দেশের মালিক।

৩. তারা আমাদেরকে নাকি বিনা লাভে ঋণ দেয়। আসলে কি তা? না, কক্ষনোই না। তারা কোন উন্নয়ন কাজে ঋণ দিয়ে তা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে কতগুলো শর্ত দিয়ে দেয়। যেমন, তারা তাদের নিজস্ব কাউন্সিলর নিয়োগ করে, কনসাল্টেন্ট নিয়োগ দেয়, ক্রয় সংক্রান্ত কোন ব্যাপার থাকলে তাদের নির্ধারিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নির্ধারিত জিনিষ কেনার শর্ত দিয়ে দেয়। আর এভাবে প্রায় ৫০ শতাংশ টাকা তারা উশুল করে নেয়। তারপর তো আবার পুরো ঋণ উশুল তো করেই। আর সুদতো থাকছেই।

উপরে উল্লেখিত শর্তগুলোর বাস্তবায়নের পর কি আমরা বলতে পারি যে, এডিবি, বিশ্ব ব্যাংক এবং আই এম এফ বাংলাদেশের জন্য দাতা সংস্থা। এরা স্রেফ শুধু ঋণদান কারী সংস্থা। কিন্তু বাংলাদেশের সব সরকারই এদের এতটা সম্মান করে যে, এরা যেন বাংলাদেশের মা বাপ। এরা যা বলে তা সন্তানের জন্য উপকারী। বাংলাদেশের বিদেশে প্রবাসী জনগোষ্ঠি থেকে সরকার গত বছর যে পরিমান রেমিটেন্স বাবদ আয় করেছে তার সম পরিমানও ঋণ দেয়নি এই তথাকথিত দাতা সংস্থারা। অথচ তারা সরকারের কাছ থেকে অনেক সুবিধা ভোগ করে, অপরদিকে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিক ভাইয়েরা বাংলাদেশি মিশন থেকে লান্ছিত হয়ে ফিরে আসে।

বাংলাদেশ থেকে এই দাতা সংস্থার সকল কার্যক্রম উঠিয়ে দেয়া উচিত এবং প্রবাসী বাংলাদেশি দেরকে সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দেয়া উচিত। তবেই বাংলাদেশের বেশি লাভ হবে।

রাজাকার বিরোধীদের প্রতি-দেশবিরোধী চক্র তাড়ানোর উপায়

আমি মনে করি ব্লগ থেকে দেশবিরোধী সকল ব্লগারকে তাড়িয়ে দেয়া উচিত।

মনে করুন আপনি রাজাকার বিরোধী পোষ্ট দিতে পছন্দ করেন, আমার মনে হচ্ছে আপনার কর্মসূচি এবং সর্বোপরি একাজের উপর কোন ধারনাই নেই। কেননা যদি আপনি কোন অ্যঅলগোরিদমকে কোন ল্যাংগুয়েজএ ইম্প্লিমেন্ট কাজ করতে যান তবে আপনাকে প্রথমে জানতে হবে আপনি আসলে কি করছেন, কি আউটপুট চান আর কিভাবে তা করবেন। আর কোন ল্যাংগুয়েজএ করবেন তা নিয়ে কোন চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। আপনি যে ল্যাংগুয়েজ ভাল জানেন তাই ব্যাবহার করুন।

তো আপনি করতে চান রাজাকার তাড়াতে। রাজাকার কথাটার মানে হল ভলান্টিয়ার। প্রথমেই ভাষাটা চেন্জ করে একে বলুন দেশবিরোধী। কারন এতে আপনার অ্যাসাইনমেন্টের টাইটেলটা পরিপূর্ন হবে। আর দু:খের ব্যাপার এই যে যারা আগে কখনো দেশবিরোধী কাজ করেছে তার দ্বারা আজও দেশবিরোধী কাজ হচ্ছে আর ভবিষ্যতেও হবে। আর যাদের কে আজ দেশের স্বার্থে কাজ করতে দেখছেন তারা আগেও করেছে ভবিষ্যতেও করবে।

জানা উচিত অ্যাসাইনমেন্ট শেষে ঘটনাটা কি ঘটবে। কিভাবে করতে হবে তাও জানতে হবে। তবে তা কোন নেটওয়ার্ক ব্যাবহার করে করবেন তা জানার কোন প্রয়োজন নেই।

দেশবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রকারিদের তাড়াতে আমি আপনার পাশে আছি। কেননা দেশপ্রেম ইমানের অংশ। দয়া করে থামবেন না। আপনি হয়তো কষ্ট করে জীবনটা কাটিয়ে দেবেন কিন্তু আপনার সন্তানের সুন্দর জীবনের জন্য অন্তত কাজ করে যান।

অসমে ডাইনি সন্দেহে এক পরিবারের ৪জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে

ভারতের অসম রাজ্যের দূরবর্তী এক গ্রামে ডাইনী সন্দেহে এক পরিবারের বধূ সহ ৪জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে এ রাজ্যের পুলিশ আজ জানিয়েছে। পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, রাজধানী গোহাটি থেকে ২৬০ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে অবস্থিত কইলাজুলি গ্রামের এই পরিবার ওই এলাকায় প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী কবিরাজী চিকিৎসার সাথে জড়িত ছিলো। গত সপ্তায় তাদের তৈরি অষুধ খেয়ে এক গ্রামবাসী মারা যাওয়ার পর পরিবারটিকে ডাইনি বলে সন্দেহ করা হতে থাকে। গতকাল কয়েকজন গ্রামবাসী ওই পরিবারের লোকজনকে আমন্ত্রণ করে। আমন্ত্রণস্থলে যাওয়ার পর এই পরিবারের সদস্যদের উপর লোকজন ইট-পাথর ও লাঠি-সোটা নিয়ে চড়াও হয়। বেদম মারধরের ফলে চারজনই জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাদেরকে একটি গর্তে পুতে ফেলা হয়। গতকাল শেষ বেলায় এই হতভাগ্য চারজনের মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করেছে। তবে এই পৈশাচিক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার জন্য পুলিশ এ পর্যন্ত কেউকে গ্রেফতার করেনি। ভারতের নজরকাড়া অর্থনৈতিক উন্নতি সত্বেও গ্রামে বসবাসকারী ভারতীয়দের অনেকেই গভীর ভাবে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, তারা ভূত-প্রেত-যাদু-টোনায় বিশ্বাস করে। প্রতিবছর ডাইনী অপবাদ দিয়ে ভারতে বহু ব্যক্তিকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়ে থাকে।

ভিখিরি উচ্ছেদ অভিযান

ভিখিরি বাংলাদেশে এক বিরাট প্রবলেম। ঢাকার রাস্তাঘাটে হাটতে গেলেই বিভিন্ন রকম ভিখিরির দেখা মেলে। এ ঘটনা শুধু ঢাকায়ই নয়, চট্টগ্রাম, সিলেট সহ সকল বড় বড় শহর এমনকি মফস্বল শহরগুলোরও এক সাধারন দৃশ্য।

ভিখিরিদের রাস্তার ফুটপাত ধরে দাড়িয়ে, বসে এমনকি শুয়ে থাকতে দেখা যায়। একদল ভিখিরি আবার হেটে হেটে ভ্রাম্যমান ভাবে ভিক্ষে করে।

ফুটপাতের ভিখারিরা প্রায়ই আমাদের হাটার সময় বিরক্ত করে। দেখা যায় ভার্সিটি যাচ্ছি অলিম্পিক ফাস্র্ট গতিতে । এর মধ্যে শার্ট ধরে টান দিয়ে বসে। রাস্তা আটকে ভিক্ষা প্রার্থনা করে। আর ফুটপাতের বেশ খানিকটা আটকে রাখে এ ভিখারীরা, যার ফলে অফিস টাইমে তো কথাই নেই। বিরাট বিপাক।

আর যারা হেটে হেটে ভিক্ষা করে তারা বিপাকে ফেলে বেশি। এরা অফিসে আদালতে, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে, বাসা বাড়িতে ইত্যাদি। মাঝে মাঝে হঠাৎই একদল কোরাস শিল্পি একই ভঙ্গীতে রাস্তা আটকে গড়াতে দেখা যায়। কখনো হয়তো দেখা যায় ছোট্ট একটা ছালার টুকরা পরে হাটতে থাকা ভিক্ষুক। আর গান গাওয়া অন্ধ ভিক্ষুকের গানের কোন জুড়ি নাই, সারাদিনই বাজতে থাকে।

ভিখারীরা ভিক্ষা করে তাদের দৈহিক বিকলাঙ্গতার জন্য কাজের অক্ষমতার কারনে। বিভিন্ন ভিক্ষুকের বিকলাঙ্গতা:
১. হাত কাটা যাওয়া।
২. হাত অবশ হয়ে যাওয়া।
৩. গোদের কারনে হাত কাজের অনুপযোগী হওয়া।
৪. পা কাটা যাওয়া, অবশ হয়ে যাওয়া, ও গোদ রোগ।
৫. অন্ধত্ব। ইত্যাদি।

উপরে উল্লেখিত ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দিতে মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে। কিন্তু আরেকদল ভিক্ষুক আছে যাদের ভিক্ষা পাবার কোন অধিকার নেই। যেমন কোন বিকলাঙ্গ শিশুকে নিয়ে শিশুর বাবা মার ভিক্ষা কখনোই যৌক্তিক নয়। তার পর সবল কাজে সক্ষম বৃদ্ধা বা জোয়ান মহিলা। তাছাড়াও একদল সবল পুরুষ ভিক্ষুকও আছে। তারপর শিশু ভিক্ষুক। এদের কাজ করার ক্ষমতা অথবা অভিভাবক রয়েছে। এদের ভিক্ষা পাবার কোন অধিকার নেই। কিন্তু সত্যিকারের ভিক্ষুকদের তুলনায় এদের ক্ষমতা বেশি যার ফলে এদের পরিসর বড় বলে এরা ভিক্ষা বেশি পায়।

আরেক ধরনের সাহায্য প্রার্থী রয়েছে যারা প্রফেসনাল ভিক্ষুক নয় তবে প্রয়োজনের তাগিদে অতি লজ্জাকে পরিহার করে রাস্তায় নামে, মসজিদে যায়, মাঝে মাঝে বাসা বাড়িতে যায় সাহায্যের জন্যে। এদের সাহায্য করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। কেননা এদের মত প্রবলেম আমাদের সকলের জীবনেই আসতে পারে। যেমনটি অমিত, শাশ্বত সত্য।

আমরা কি ভিক্ষকদের রাস্তা থেকে সরাতে পারি না? সরকার হয়তো চাইলে একদিনেই পারে। একদিন উচ্ছেদ অভিযান চালালেই মোটামুটি সাফ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা কখনোই নৈতিক নয়।

আমার সাজেশন:
১. আমরা একটা অর্গানাইজেশন গড়ে তুলতে পারি যেটি সত্যিকারের সাহায্য প্রার্থীকে বাছাই করবে।
২. সত্যিকার সাহায্যপ্রার্থীকে আইডি কার্ড দেওয়া হবে।
৩. ভিক্ষকদের জন্য ফান্ড তৈরী করা হবে। সে ফান্ড থেকে সকল আইডি প্রাপ্তদের ভাতা দেয়া হবে।
৪. জনগনের সবাইকে তাদের ভিক্ষার জন্য ও সাহায্যের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা এ ফান্ডে জমা দেয়ায় উৎসাহী করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে সাহায্যপ্রার্থীদের নিয়ে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ক্যাম্পেইন ইত্যাদি করা হবে।


আপনাদের কারো কাছে যদি পোষ্টটি গ্রহনযোগ্য মনে হয় এবং নতুন কোন পরামর্শ দেয়ার থাকে তবে তা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকার!!!

বাংলাদেশের জনগন অনেক উথ্থান পতন আর আন্দোলনের মাধ্যমে পেয়েছে গনতন্ত্র। গনতন্ত্র এমন এক রাষ্ট্রব্যাবস্থা যাতে রাজতন্ত্রের মত নেই কোন একক সর্বক্ষমতাময় রাজা-বাদশাহ। আবার নেই স্বৈরশাষকের ন্যায় জবাবদীহিতাহীন সরকার। এ ব্যাবস্থায় জনগনই রাষ্ট্রের সব। কিন্তু সব জনগন যদি দেশের নীতিনির্ধারন করতে যায় তবে অবশ্যই এখানে জট পাকিয়ে যাবে। তাই জনগনই তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে জ্ঞানী আর দেশপ্রেমিক লোককে এলাকাভিত্তিক নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধি হিসেবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংসদ কার্যক্রম সংগঠিত হয়। এ প্রতিনিধিরা একেকজন আবার একেক আদর্শের বাহক হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জনগনের সাথে কাজ করে থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্য বিশিষ্ট দল একক ভাবে অথবা অন্য দলের সাথে জোট সরকার গঠন করে।

দেশের সকল কার্যক্রম করে সরকারী কর্মকর্তাগন আর জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা তৈরি মন্ত্রি পরিষদ এবং সংসদ সদস্যগন সকল কার্যক্রম দেখাশুনা করেন এবং সঠিক ও ন্যায্য ভাবে বন্টনের চেষ্টা করে থাকেন।

এখন কথা হলো, কিভাবে এরকম রাজনীতিবিদ হওয়া যায়? রাজনীতিবিদ কি এমনি এমনি সৃষ্টি হতে পারে?

ভাল রাজনীতিবিদ হতে প্রয়োজন প্রথমত ভাল মানুষ হওয়া। তেমন ভাল যতটা ভাল মানুষ হলে দেশকে ব্যাক্তিস্বার্থের উর্দ্ধে রাখা যায়। ততটুকু দেশপ্রেমিক হতে হবে যতটুকু দেশপ্রেমিক হলে দেশের ও দেশের মানুষের স্বার্থে জীবন দেয়া যেতে পারে। জীবনে অসীম দু:খ দুর্দশার জন্য তৈরী থাকতে হবে। কেননা দেশের জন্য খাটতে গেলে নিজের ও পরিবারের জন্য খাটার সময় পাওয়া যায় না। শিক্ষিত হতে হবে, আর সুন্দর চারিত্রিক বৈশিষ্টসম্পন্ন হতে হবে। বছরের পর বছর দেশের মানুষের জন্য নি:স্বার্থে খেটে যেতে হবে। আরও যা করা প্রয়োজন তা হলো দেশের সকল ব্যাপারে নজর রাখা। দেশের ভালমন্দ নিয়ে ভাবা। নিজের এলাকার মানুষের দু:খ দুর্দশা সম্পর্কে খেয়াল রাখা। সমস্যাগুলো খুজে বের করা এবং সমস্যা উত্তরনের চেষ্টা করা।
উপরোক্ত গুনগুলো অন্তত যার মাঝে আছে তাকেই না তার এলাকার লোকজন তাদের এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে পাঠাতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হবে। আর কোন রাজনৈতিক দলও তাকেই নমিনেশন দেবে এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু বাংলাদেশের জনগন কোন ভাল লোক দেখে ভোট দেয় না। ভোট দেয় মার্কা দেখে। আর এই সুযোগে দলগুলোও নমিনেশন দেয় টাকাওয়ালা লোক দেখে। আর গনতন্ত্র অজানার উদ্দেশ্যে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়।

আহসান মন্জিল




বাংলাদেশে কি জাতীয় নির্বাচন হবে? কাদের নিয়ে?

বাংলাদেশের কয়েকদফা স্বৈরশাষন ছাড়া যতবার জাতীয় নির্বাচন হয়েছে তাতে দেখা গেছে হয় বি এন পি নয়তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। এ দুটা দল ছাড়াও আরেকটি দল ধীরে ধীরে অনেকদূর এগিয়ে গেছে । তা হল জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় পার্টি নামে আরেকটি দল আছে যার সমর্থন ধীরে ধীরে কমছে। এছাড়াও আরো বেশ কিছু দল রয়েছে যেগুলো শুধু নামসর্বস্ব। যেগুলোর দুএকজনকে মানুষজন মিডিয়ার কারনে চেনে।

জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সংলাপ শুরু হয়েছে। বড় দলগুলোর চেয়ারপার্সনরা সবাই জেলে। তাছাড়াও অনেক প্রধান রাজনীতিবিদগনও বিগত সময়ে করা দুর্নীতির অপরাধে জেলে। বড় তিনটি দলই সংলাপে অংশগ্রহনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

তবে সরকার কাকে নিয়ে সংলাপে বসবে? সংলাপই যদি বাস্তবায়িত না হয় তবে সরকার কিভাবে জাতীয় নির্বাচনে সফল হবে? কাকে নিয়ে নির্বাচন হবে?

আমরা কখনো কখনো মিথ্যা বলি, কে জীবনে কখনো মিথ্যে বলেনি?

ছোটবেলা থেকেই আমরা কোননা কোন ভাবে মিথ্যে বলে থাকি। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মিথ্যে বলে টিচারের কাছে ছাড় পাওয়া প্রায় সব ছাত্রের জন্য সাধারন। তার চেয়েও সাধারন মিথ্যে হলো হোমওয়ার্ক না করে মিথ্যা বলে পার পাওয়া।
মার কাছে মিথ্যে বলে টাকা নেয়া, মিথ্যা বলে অনেকদুর চলে যাওয়া। ইত্যাদি।
বাবার সাথেও আমরা কম মিথ্যা বলি না। আত্নিয় স্বজনও বাদ নয়।

কর্মজীবন তো মিথ্যা বলার প্রধান চর্চা কেন্দ্র। যারা সরকারী চাকুরী করে তাদের সুন্দর চেহারা আর দামী কোটের আড়ালে থাকে এক অঝর ধারায় মিথ্যা বলা চরিত্র। উদাহরন, আমার এক আত্নীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম এস এস সির পর। সেখানে আমার আত্নীয় তার মিথ্যা ভাউচার করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ভাউচার গুলো ছিল ফটোস্ট্যাট এর বিলের। ভাউচার অর্ডার দিয়ে বানানো হয়েছিল এবং ভাউচারে যে বিল গুলো লিখেছিলাম সব ছিল ভুয়া। অর্থাৎ মিথ্যে দিয়ে আমাদের জনগনের টাকা তারা পকেটে ভরে নিচ্ছেন। ছোট ছিলাম বলে কিছুই বলতে পারিনি। আর বলারও কিছু ছিলনা কেননা আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা এ ব্যাপারে করনীয় সম্বন্ধে কিছু শেখায়নি।

আর যারা বেসরকারী চাকুরী করেন তারাও উপোরোক্ত কাজটি করতে পারেন। প্রাইভেট চাকুরীজীবীদের মিথ্যা বলার সুযোগ কম থাকে। তারপরও যে মিথ্যার কোন সুযোগ থাকে না বলা যাবেনা।

এটা একটা সাধারন উদাহরন। তবে সবাইযে মিথ্যা বলেন তা কখনোই সত্য নয়। আমাদের সমাজে অনেকেই আছেন যারা সম্পুর্ন সৎভাবে জীবনযাপন করার চেষ্টা করেন। তারপরও আমার চ্যালেন্জ পৃথিবীতে এমন লোক পাওয়া যাবে না যিনি জীবনে একটা মিথ্যে বলেননি।

কিন্তু গত ২ হাজার বছরের মাঝে এমন একজন মাত্র ব্যাক্তিত্ব আছেন যার জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পুর্ন জীবনের স্পষ্ট বিবরনী লিপিবদ্ধ আছে। বলা যায় এক রকম তিনিই একমাত্র ব্যাক্তি যার জীবনকে আমরা আয়নার মত দেখতে পারি। তিনি হযরত মোহাম্মদ (স)।

তিনিই ইতিহাসের একমাত্র ব্যাক্তি যিনি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটিও মিথ্যে বলেননি। রাসুল (স) এর আদর্শই সবোৎকৃস্ট আদর্শ।

কাকে আমি অনুসরণ করব?

অ্যাডভেন্চারে সেরা বলে ছোটবেলায় ম্যাকগাইভার হতে চাইতাম, আর হাতও ভেঙেছিলাম তাই।
বক্তৃতা খুব হৃদয়কাড়া বলে শেখ মুজিবকে নকল করার চেষ্টা করতাম।
কর্মময় রাষ্ট্রনায়ক বলে জিয়াকে নকল করে গ্রামে গেলে মাটি কাটার চেষ্টা করতাম।
স্কুলের সেরা শিক্ষককে অনুসরন করতে চেষ্টা করতাম।
সেরা ক্লাসমেটকে অনুসরন করতে চেষ্ট করতাম।
সেরা প্রতিবেশীকে অনুসরন করতে চেষ্টা করি।
সেরা শক্তিশালীকে অনুসরন করতে চেষ্টা করি।
......

আমরা মানুষরা অনুসরনপ্রিয়। যাকে আমাদের চোখে সেরা মনে হয় তাকেই আমরা কোননা কোনভাবে অনুসরন করতে চেষ্টা করি। তার মত হতে চাই। বাস্তব জীবনে তার আদর্শকে মেনে চলতে চেষ্টা করি।

পৃথিবীর সবাই জানে এবং দলমত ধর্ম নির্বিশেষে একবাক্যে বিশ্বাস করে পৃথিবীর সেরা মানুষ হযরত মোহাম্মদ (সা)। যারা একটু পড়াশুনা করে তারা সহজেই বুঝতে পারবেন। আর অন্যরা পাগলের প্রলাপের মত উল্টাপাল্টা কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক।

তিনি একাধারে সেরা অ্যডভান্চারার, সেরা বক্তা, সেরা রাষ্ট্রনায়ক, সেরা শিক্ষক, সেরা প্রতিবেশী, সেরা বন্ধু, সেরা শক্তিশালী, সেরা রাজনীতিক......ইত্যাদি।

তো আমি তো তাঁকেই আমার একমাত্র আদর্শ হিসেবে পছন্দ করব। নাকি?

আজ মহান মে দিবস: শ্রমিকদের নিরাপত্তা চাই


আজ পহেলা মে। মহান মে দিবস। । ১৮৮৬ সালে ৮ ঘন্টা কর্মদিবসের দাবীতে আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে আজকের এই দিন বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক শ্রমদিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

আজকের বাংলাদেশে এর প্রভাব কি? বাংলাদেশের অধিকাংশ শ্রমিক অশিক্ষিত নয়তো উপযুক্ত শিক্ষাপ্রাপ্ত নয়। তাই তাদের বেশিরভাগই এই দিনটি সম্বন্ধে জানেনা। তারপরও কিছুদিন পরপরই বাংলাদেশের শ্রমিক-মালিক ক্ষোভ মে দিবসের চেতনা সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশের শ্রমিকদের বর্তমার অবস্থা কাঙ্খিত অবস্থায় নেই। বাংলাদেশে ৮ ঘন্টা কর্মদিবসের পদ্ধতি থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শ্রমিকদেরকে জোর করে বেশি খাটানো হচ্ছে। নেই বেতনের ব্যাপারে কোন নিয়ম। বেতন দেয়া হয় এত কম যে এ বাজারে কোনমতে বাচাও কষ্টকর হয়ে যায়। আবার নির্দিষ্ট সময়ে বেতন না দেওয়া একটি সাধারন ঘটনা। বিশেষ করে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা মহিলা গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবন বাচানোর জন্য চাকরীর পাশাপাশি পার্টটাইম দেহব্যাবসাও করতে হচ্ছে।

কন্সট্রাকশন শ্রমিকদের অবস্থা সবচাইতে খারাপ। এদেরকে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তাদের উঁচু বহুতল ভবনে কাজ করার সময় দেয়া হয়না কোন হেলমেট। বেল্টের ব্যাবস্থাতো নেইই। ভবন তৈরির সময় যে নিসাপত্তা বেষ্টনী করা উচিত তা ঠিকমত তৈরি করা হয়না। এর কারনে প্রায়ই শ্রমিক ও পথচারী নিহত হচ্ছে। তারপরও পেটের দায়ে শ্রমিকরা এই অনিরাপদ স্থানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশে শিশুশ্রম বন্ধে আইনের কোন প্রয়োগ নেই। বাংলাদেশের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ন কাজে শিশুরা নিয়োজিত আছে। কিন্তু তাদের দেখবার জন্য বাংলাদেশের সরকার এগিয়ে আসে না। শিশুশ্রম বন্ধ শুধুমাত্র আইন দিয়ে সম্ভব নয়। শ্রমিক শিশুদের পুনর্বাসনের মাধ্যমেই শুধু এটি সম্ভব।

বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় এখনও পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রনের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রায়ই এসব কারখানাগুলোতে আগুন লাগে আর প্রয়োজনীয় উপকরনের অভাবে ফায়ার সাভিসের আসার আগেই মানুষ জিনিসপত্রের পচুর ক্ষতি হয়।

সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় বিশ লাখ শ্রমিক নিরাপত্তাজনিত কারনে নিহত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এর সংখ্যা কম নয়। আজকের মে দবসে তাই শ্লোগান হোক "শ্রমিকদের নিরাপত্তা চাই।"

বাংলাদেশে শ্রমিকদের সমস্যাগুলো বের করা একলা কারো পক্ষে সম্ভব নয় আর সমাধান করাতো নয়ই। তবে সরকার যদি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয় তবে আমার ধারনা সবাই সরকারকে সহায়তা করবে। কেননা বাংলাদেশের মানুষের নৈতিকতাবোধ অন্য যে কোন জায়গার চাইতে বেশি।

Saturday, October 4, 2008

ধরা খেয়েছে বর্বররা, আর জিতে গেল গনতন্ত্র

বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতা ত্যাগ করার পরদিন থেকেই বাংলাদেশে এক চরম নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। ঢাকায় রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে কমুনিস্ট- আওয়ামী বর্বর ১৪ দলীয় জোট বেশ কয়েকটা মানুষকে হত্যা করল। শুধু ঢাকাতেই নয় সারাদেশে এই অবস্থা বিরাজ করেছে। সারাদেশে বেশ অনেকেই নিহত হয়েছে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কমুনিস্ট মনোভাবাপন্ন বিভিন্ন দলের কর্মীরা।
তারপর চলল দিনের পর দিন অবরোধ। তাও করল এরাই। এক সময় ঘোসনা এল বঙ্গভবন অবরোধ। সেখানে অক্সিজেন পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়ার ঘোসনা এল। এই অবস্ঘায় সরকার দিশ না খুঁজে পেয়ে জরুরী অবস্থা ঘোষনা করল। তত্ত্বধায়ক সরকারের উপদেষ্টাগন পরিবর্তিত হলো।

এই চরম অগনতান্ত্রিক অবস্থা থেকে কিছুটা মুক্তি তখন পাওয়া গেলেও পুরোপুরি মুক্ত হওয়া গেলনা সেই পুরাতন শক্তির বিভিন্ন উস্কানীতে হওয়া আন্দোলনের কারনে। কিন্তু সর্বোপরি এরা কিন্তু সফল হয়নি কোন কাজেই। এর মধ্যে কিছু উপদেষ্টা পরিবর্তিত হলো। নতুন আসা উপদেষ্টাদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে কমুনিস্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত। তো এরা ক্ষমতায় এসেই তাদের পুরোনো অযৌক্তিক ইচ্ছাগুলাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইল। বলা যায় একাজ করার জন্য তারা আসল কাজই ভুলে গেল। আর পুরোনোরাও এদের সমর্থনে ছিল। ভেবেছিল যাক একটা সুযোগ পাওয়া গেছে, এবার সব ইচ্ছা পুরন করে ফেলব। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তাদের এ ইচ্ছা গুলো শুধুই তাদের নিজের ইচ্ছা। তাদের সাথে হাতে গোনা কিছু শিক্ষার মোড়কে পোরা অশিক্ষিত লোক। এদের সাথে নাই সাধারণ মানুষের কোন যোগাযোগ। তাদের কথাকে সাধারণ কোন মানুষই সমর্থন করে না। তারপরও তারা তাদের ইচ্ছা পুরনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠল। এদের ইচ্ছাগুলো ছিল ১. ইসলামি দল নিষদ্ধ করা। ২. যুদ্ধাপরাধী বিচার. ৩. নারীর সমঅধিকার।

এরা নিজেদের মিডিয়াকে এজন্য রান্নাঘরের আশেপাশে চুরির আশায় থাকা কুকুরের মত লেলিয়ে দিয়েছে। বড় বড় সেমিনার করেছে। দেশি বিদেশি কুটনিতিক ব্যবহার করেছে। তার ওপর সরকারী ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছে।

কিন্তু তারপরও তারা সফল হয়নি। তাদের মুখগুলো ধরা পড়ে যাওয়া চোরের মত এখনও টিভিতে দেখা যায়।
এদের ব্যার্থতার কারন:
১. কোন দাবীই তাদের যৌক্তিক ছিল না।
২. এদের কোন কাজে সাধারণ জনগনের সমর্থন ছিল না।
৩. একসাথে সব পেতে চেয়েছিল।
৪. বাংলাদেশের মানুষের ইসলামী চেতনায় চরম আঘাত হানতে চেষ্টা করেছিল।

গনতন্ত্র যেভাবে জয়ী হলো:
১. তাদের প্রত্যেক ইস্যুর বিরুদ্ধেই দেশের সাধারন পেশাজীবিগন বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু তাদের সাথে ছিল কয়েকজন হাতে গোনা মানুষ।
২. সাধারণ মানুষ এই ইস্যুগুলোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি বরং এরাই মিডিয়াকে খারাপভাবে ব্যবহার করেছে।
৩. বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই আল্লাহভীরু, আর এরা নাস্তিক। নাস্তিককে কখনোই সাধারণ মানুষ নের্তৃত্বের আসন দেয়না।

ইসলামী দল বন্ধ করে দেয়ার ব্যপারে যখন মাতামাতি উঠল তখন মানুষজন কিছু বলেনি কারন তাঁরা জানে যে এটা এই কমুনিস্টদের অতিকল্পনামাত্র। দুদিন বাদে ঘোর কেটে যাবে। পরে যখন যুদ্ধাপরাধী ইস্যু আসল তখনও আমরা অনেকটা চুপচাপই থাকলাম। আমাদেরকে চুপচাপ দেখে এরা ভাবল এবার নতুন আরেকটা ইস্যু উঠাই। তা হলো নারী সমঅধিকার। এবার তাদের আঘাত এল সরাসরি ইসলামের উপর । এবার আর মানুষজন আর চুপ থাকল না। গর্জে উঠল সমস্বরে। আন্দোলনের জোয়ারে সরকার বাধ্য হলো নারী নীতিমালা স্থগিত করতে। যেখানে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র শিক্ষকদের জরুরি বিধিমালা লংঘনের কারনে অনেক হেনস্তা হতে হয়েছ, সেখানে মুসলিম আন্দোলন কারীরা বহাল তবিয়তে অবস্থান করছেন। এর কারন অন্য কিছু নয়, এখানে সারা দেশের মানূষ আলেমদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন। এখানেই গনতন্ত্রের জয় প্রমানীত হলো। গনতন্ত্র কত শক্তিশালি তা এখানে এই জরুরি অবস্থায় অবরুদ্ধ বাংলাদেশের মানুষ প্রমানিত করল। আর ভেসে গেল কমুনিস্ট স্বৈরাচারী শক্তি।


এই কমুনিস্টরা আজ বিমর্ষ চিত্তে বিবৃতি দিয়েছে যে, যুদ্ধাপরাধী ইস্যুর দিক থেকে নজর সরিয়ে নেয়ার জন্যই নাকি নারীনীতি বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে।

হতভাগারা এখনও বুঝল না। বুঝবেও না কখনো। কারন আল্লাহতো এদের কান বন্ধ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশে গনতন্ত্র এখন্ও আছে থাকবে আজীবন।

রেসিপি- ঠান্ডা বাতাস

আজ ব্লগারদের কি হলো বুঝতে পারছি না, সবাই একের পর এক রেসিপি দিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাপার কি?

সবাই যখন দিল তখন আমিও বাদ যাই কেন। আমি আজকের সবচেয়ে সেরা রেসিপি দিব।

খাবারের নাম: খোলা রাস্তায় ঠান্ডা বাতাস

রেসিপির বৈশিষ্ট্য:
১. এখন গরমের দিন, তাই এই গরমে বাতাসের খুব প্রয়োজন।
২. বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট।

প্রয়োজনীয় উপকরণ:
১. একটা সুতি জামাকাপড়।
২. একটা চপ্পল স্যান্ডেল।

বানানো পদ্ধতি:
বানানোর কোন ম্যানুয়াল পদ্ধতি নাই।

পরিবেশনের সময়:
রাতে। কারন তখন অফিস থাকেনা। কারেন্ট চলে গেলে এর পরিবেশনের জন্য সবচেয়ে ভাল সময়। আর রাতে প্রায়ই দমকা ঠান্ড হাওয়া ঢাকার আকেশে বয়ে যায়।

পরিবেশন পদ্ধতি:

সুতি জামাকাপড় পরে রাস্তায় বেরোয়ে যাবেন। খোলা জায়গার আশা অন্তত ঢাকায় করা উচিত না তারপরও পাওয়া গেলে সেখানে যেতে হবে। আর নইলে রাস্তায় ফুটপাতে বসে থাকা যেতে পারে। আগে এভাবে আপনার কাছে অত্যন্ত ধুলাবালি সম্পন্ন তবে ঠান্ডা বাতাস আপনার দিকে পরিবেশিত হতে থাকবে।

উপভোগ করুন আজকের সেরা রেসিপি।

হরলিক্সে ভাইরাস!! সাবধান.....

ভয় পেয়েছেন? ভয় পাওয়ারই বিষয়। তবে নিশ্চিত থাকুন এ ভাইরাস হরলিক্সের বোতলে নয়। টেলিভিশনে হরলিক্সের অ্যাডে। ইদানিং হরলিক্সের ভারতীয় এডের বাংলা ভার্সন বাংলাদেশের সব চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে। এখানেই আমার অত্যাধুনিক ভাইরাস স্ক্যানার "সততার আলো ১.০ B" একটা ভাইরাস পেয়েছে।

অ্যাডভারটাইজের কনটেন্ট:
" প্রথমেই একটা ছোট্ট মেয়েকে তার মা বলছে,"তুমি কি জান দুধ কোথায় গেল?" মেয়েটি খুবই সুন্দর করে ভালমানুষিভাবে উত্তর দিল" আমি তো দেখিনি।"
------আসলে মেয়েটিই দুধগুলো সরিয়েছে আর এখন সে মিথ্যা দিয়ে তা ঢাকার চেষ্টা করছে।

পরে দেখাল যে অনেকগুলো ছোট্ট ছেলেমেয়ে যেখান থেকে পারছে সেখান থেকে দুধ চুরি করে আনছে। শেষে দেখাল একটা ছেলে তাদের গরুটা হাত দিয়ে ধরে তার মাকে বলছে" ইদানিং গরুর দুধ কম পড়ছে, তাই না মা?"
----এখানেও নিজে দুধ চুরি করে মাকে মিথ্যা বুঝানো হচ্ছে।

আর এ অ্যাডের মুল গানই হল, যেখানে দুধ পাও যেভাবে হোক নিয়ে এস, আর হরলিক্সের মন মাতানো মিল্কশেক বানিয়ে খাও।

পাঠককুল নিশ্চয় অ্যাডটা দেখেছেন, আর নিশ্চয় বুঝতে পারছেন ভাইরাসটি কি? তা হল মিথ্যা। এ অ্যাডভারটাইজে মিথ্যার ব্যাবহারকে কে ছোটদের মাঝে উৎসাহিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভাইরাসটির কার্যকারীতা:
১. শিশুরা সহজেই যে কোন শিক্ষা গ্রহন করে। আজ আমরা যদি তাকে সত্য বলার শিক্ষা দেই তবে সে সারাজীবন সত্য বলবে আর যদি মিথ্যা বলা শিখাই তাও সারাজীবন প্র্যাকটিস করে যাবে যদি না সে খুব কনফিডেন্ট না হয়।

২. শিশুরা টিভি দেখে খুব প্রভাবিত হয়। তারা এই অ্যাড দেখে একবার হলেও নিজেরা প্রাকটিস করতে চেষ্টা করবেই। যেমনটি আমি করতাম। আমি একবার তো ম্যাকগাইভার হতে গিয়ে হাত ভেঙেছলাম।

৩. সবচাইতে বড় কথা অ্যাডটা খুবই দৃষ্টিনন্দন। যার প্রভাব অবশ্যই পড়বে। তাছাড়া এটা প্রায় সারাদিনই প্রচারিত হচ্ছে দেশি বিদেশি সব চ্যানেলে এমনকি শিশুদের প্রিয় চ্যানেল কার্টুন নেটওয়ার্কেও।


শিশুদের প্রতি এই অ্যাডের শিক্ষা:
১. মিল্কশেক খাওয়া খুবই মজার। তাই তোমরা এটি খেতে থাক।
২. মিল্কশেক খাওয়ার জন্য দুধ চুরি কর।
৩. চুরি করে বাচার জন্য মিথ্যা বল।
৪. নিজের প্রয়োজন মেটাও যে করে হোক।
৫. শিশুদের স্বার্থপর হতে বলছে।
৬. চুরিতে অনেক অ্যাডভেন্চার রয়েছে।
৭. মিথ্যা বলার অনেক আর্ট আছে।

ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের লক্ষন:
১. রান্নাঘরে বারবার আসা যাওয়া।
২. বাবা মাকে হরলিক্স কিনে দেবার জন্য বায়না ধরা।
৩. ফ্রিজ থেকে দুধ গায়েব হওয়া।
ইত্যাদি।

আক্রান্তদের সমস্যা:
১. আজ সে চুরি করে মিথ্যা বলে জিহ্বার সুখের জন্য মিল্কশেক খাচ্ছে।
২. পরে ভাল রেজাল্ট করার আশায় পরীক্ষায় নকল করবে।
৩. আগামীতে টাকার লোভে দুর্ণীতি করবে।
৪. বাংলাদেশ ৬ষ্ঠবারের মত দুর্ণিতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করবে।

এ ভাইরাসের প্রভাবে সমাজের কি ক্ষতি হতে পারে?
১. আগামী প্রজন্ম এক মিথ্যুক জাতিতে পরিণত হওয়া।
২. দুর্ণীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সাফল্য অর্জনের আশংকা।
৩. সত্য কথা ইতিহাসে পরিণত হওয়া।
৪. সম্পুর্ন এক বিশৃংখল সমাজ প্রতিষ্ঠা। ইত্যাদি।

আমাদের প্রাপ্তি:
"একটি হরলিক্সের সাথে একটি মিল্কশেক ফ্রি, ফ্রি,ফ্রি।"

সব কিছু নিয়ে, ভাইরাসটি আমাদের কি দিবে বুঝতে পেরেছেন?

আপনাদের মত কি? এ ব্যাপারে?

নাস্তিক্যবাদীতা কি করে সমাজ ও দেশের জন্য উপকারী হয়?.......

মনে করুন আমাদের আল্লাহর প্রতি ভীতি নেই। তবে.

১. আমরা কেন ভাল হয়ে চলব?
২. কেন সুযোগ পেলেই মিথ্যার মাধ্যমে আমাদের প্রয়োজন হাসিল করব না?
৩. কেউ যদি কাছে কিনারে না থাকে তবে আমরা যে কোন অপকর্ম করতে কেন দ্বিধা করব?
৪. কেন সুযোগ পেলে দুর্নীতি করব না?
৫. কেন চুরি করব না?
৬. কেন বড়দের সম্মান করব?
৭. কেন ছোটদের আদর করব?
৮. নারীদের কেন নিরাপত্তা দেব?
৯. কেন খুনাখুনি করব না?
১০ কেন পরের ধন কেড়ে নেব না?
১১. কেন দেশপ্রেমিক হয়ে নিজেদের ক্ষতি করব?
১২. সর্বোপরি কোন অপকর্ম করতে কি আমাদের বাধবে?

ভেবে দেখুন তবে সমাজের অবস্থা কি দাড়াবে? একে অপরের উপর শুধু জুলুম করবো। শক্তিধর দুর্বলের উপর চড়াও হবে। কেউ কাউকে ভালবাসবো না। সমাজ কলুষতায় ভরে যাবে। আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময়ের মত অবস্থা সৃষ্টি হবে।

এ সমাজ কি আমাদের কাম্য? আজ যারা প্রগতিশীল বলে আল্লাহকে অবিশ্বাস করে তারা কি আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র হতে পারে? তারা কি দেশপ্রেমিক হতে পারে? তারা কি করে মানবাধিকার সংরক্ষন করবে?

তারা তো সকল ধরনের অপকর্ম করার জন্য প্রয়োজনীয় আবহাওয়া তৈরীর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তাদের চেষ্টাকে ব্যার্থতায় পর্যবসিত করতে আমরা কি পারব না?

আমদের সমাজে আমেরিকান সমাজের আদর্শের কোন প্রয়োজন আছে কি?

পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশ আমেরিকা। আমাদের যুব সমাজের একটাই আশা আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া ইত্যাদিতে যাওয়া। তাদের কাছে আমেরিকা হল স্বর্গের আরেক নাম। আমাদের একজন কানাডা প্রবাসী ব্লগার তো তার প্রোফাইলেই লিখে রেখেছেন, যে তিনি কানাডায় বসতি গড়ার চেষ্টা করেই চলেছেন।

আমাদের সরকারও বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন দেশের সমাজের আদর্শ হিসেবে ইসলামী সমাজকে বাদ দিয়ে আমেরিকার সমাজকে গ্রহন করতে।
বিশেষ করে আমাদের দেশে এনজিও প্রতিষ্ঠান গুলোতো এ ব্যাপারে আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার মধ্যে এনজিও কর্মী রাশেদা কে চৌধুরী তত্তাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়েই ক্ষমতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে শুরু করে দিয়েছেন। আমরা খেতে পাচ্ছিনা আর তিনি নতুন ঝামেলা হিসেবে নারীনীতি প্রণয়নে হাত দিলেন। আর আমাদের প্রবাসী বন্ধুদের অনেকেই যারা আমেরিকার মত কুসমাজের সংস্পর্শ পেয়ে গেছেন তাঁরা এর পক্ষে গান গেয়ে চলেছেন।

আমাদের সমাজ যদি আমেরিকার মত সমাজে পরিণত হয় তবে কি ঘটবে চিন্তা করুন....
১. পারিবারিক বন্ধন ঢিলে হয়ে যাবে।
২. বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যাবে।
৩. সমাজে উচ্ছৃংখলতা বেড়ে যাবে।
৪. আমেরিকান দের মত মানিব্যাগে বউয়ের ছবি মাসে মাসে পরিবর্তিত হবে।
৫. ১২-১৩ বছরের কুমারী মেয়েও খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
৬. প্রতি মিনিটে ১টি করে ধর্ষন হবে।
৭. ড্রাগস আসক্তি বেড়ে যাবে।
৮. মদ খাওয়া সমাজে আচারে পরিণত হবে।
৯. ..................................ইত্যাদি।

এরকম সমাজ কি আমাদের জন্য খুব ভাল হবে। আমাদের সমাজে মনুষ্যত্ব আছে। আছে মা বাবার প্রতি ভালবাসা। আছে নারীদের প্রতি সম্মান ও নিরাপত্ত্বা। আছে নৈতিকতার প্রতি শ্রদ্ধা ও চর্চা।

কয়েকদিন আগের একটি ঘটনা। বেশ কয়েকজন ব্লগার একটি ধর্ষনের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাস্কর চৌধুরী । তিনি শ্রীমঙ্গলে মানব বন্ধনের আয়োজন করেছিলেন। আরো ব্লগার যারা এনিয়ে ভাল ভাল পোষ্ট দিয়েছেন তাঁরা হলেন মানবী, ফারজানা মাহবুবা । তাঁরা নিখাঁদভাবেই এ কাজগুলো করেছেন। এটা এদেশের সমাজেই সম্ভব। আর তবে আমেরিকাতেও মানব বন্ধন হয় তবে তা হয় একটা চড়ুই পাখির অ্যাকসিডেন্টকে কেন্দ্র করে।

তাই আমরা কেন অন্য একটি বাজে সমাজের রূপ ধারণ করতে যাব?
আমরা কি ওদের চেয়ে ভাল নেই?

তত্তাবধায়ক সরকারের কাজ দেশের আইন চেন্জ করা নয়। তাদের দায়িত্ব আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার জন্য ভাল একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। নতুন অপ্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা নয়। আমাদের গনতন্ত্র আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেবার আবেদন জানাচ্ছি।
যদি আমাদের প্রয়োজন হয় আমরাও সমাজ সংস্কার করতে পারি। দেশে শুধু তাঁরাই কয়জন শিক্ষিত বুদ্ধিমান লোক তা ভাবাটা বোকামী।
তাঁদের মনে যদি স্বৈরশাষনের বিন্দুমাত্র ইচ্ছা জেগে ওঠে, তবে তাঁদের সাবধান করতে চাই এই বলে যে, আমরা আগেও অনেক স্বৈরশাষককে দুর করেছি রাস্তার আন্দোলন আর ভোট নির্বাচনের মাধ্যমে।

আসুন আমরা একসাথে সমাজে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ দুর করি। আর কিছু শিক্ষার উর্দিপরা মূর্খের অপকর্মকে শক্ত হাতে দুর করি। সর্বোপরি আসুন গনতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠায় আমরা একসাথে কাজ করি

যে কারনে আমি সংশয়হীন...

সেদিন একজনের পোষ্ট দেখলাম, তিনি নাস্তিকতার স্বপক্ষে কিছু কথা লিখেছিলেন। নাস্তিকতার পেছনে তিনি ভাল যুক্তি দিয়েছিলেন। নাস্তিকতার ব্যাপারে সবচেয়ে পরিষ্কার হয়েছি যখন তিনি নাস্তিকদেরকে সম্মান করে সংশয়বাদী বলেছেন। তার কথার আমার কিছু নিজস্ব জবাব :

১."তিনি বলেছিলেন, সবকিছুর স্রষ্টা যখন আল্লাহ তবে আল্লাহর স্রষ্টা কে?"

***প্রথমত নাস্তিকতার প্রথম শিক্ষা হল কোন কিছুরই কোন স্রষ্টা নেই। তবে দুনিয়ার এতসব জিনিষ কোথা থেকে এল?

সব কিছু যদি এমনিই সৃষ্টি হয় তবে, আমাদের সামনে এমনি এমনি কোন কিছু সৃষ্টি হতে দেখিনা কেন?

বিজ্ঞান বলে সব নাকি ন্যাচারাল সবকিছুরই ব্যাখ্যা আছে। আবার অনেক আধুনিকতা বাদীদের কথায় বিজ্ঞান ইসলামকে অসত্য প্রমানীত করে।

এখন কেউকি আছেন যিনি বলতে পারবেন ন্যাচারটা সৃষ্টি করল কে?

ইতিহাস সাক্ষ্যি বিজ্ঞানের চর্চা খ্রীস্টানদের কাছে অকাম্য ছিল। ইসলামের শুরু থেকেই ইসলাম আর বিজ্ঞান এক স্বত্ত্বায় মিশে আছে।আর খ্রীস্টানদের বিজ্ঞান চর্চা মুসলমানদের প্রেরনায় পাওয়া।

উদাহরণ, গত শতাব্দিতে আবিষ্কৃত বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার বিশেষ করে ভ্রূনবিদ্যা, বিগ ব্যাংয়ের আধুনিক তত্ত্বের মত অনেক তত্ত্ব মুসলিমগন নির্ভূল ভাবে বিশ্বাস করেছেন গত ১৪০০ বছর ধরে।

বিজ্ঞান বলে প্রত্যেক আঘাতের একটি প্রতিঘাত রয়েছে, এবং কোন বল প্রয়োগ না করলে কোন বস্তুর অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়না। তবে কোন শক্তি ছাড়াই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে তা কি করে বিশ্বাসযোগ্য হয়?

প্রথমে যে প্রশ্ন করেছেন তার জবাবের শেষ অংশ:
যেহেতু সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কোন কিছুই সৃষ্টি হয়না, তাই এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই একজন রয়েছে। আর সেই সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আল্লাহ।
আর আল্লাহ যদি আমাদের সৃষ্টিকর্তা হন তবে কোরআনই আমাদের একমাত্র আদর্শ। আল কোরআনের মত আরেকটি নির্ভূল সাহিত্যকর্ম প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি এ ঘোষনাই দেব। আর আমার অটল বিশ্বাস আর কোন গ্রন্থই সৃষ্টি কারো পক্ষে সম্ভব নয় যা ১৪০০ বছর তো দুরের কথা ১৪ মিনিট পরও নির্ভুল থাকতে পারবে। অবাক করার বিষয় আজ পর্যন্ত কেউ সাহসও করতে পারেনি আলকোরআনের সমান আরেকটি বই লিখতে।

আল কোরআনের সুরা ইখলাসে আল্লাহ ঘোষনা করেছেন তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন।

আল্লাহর সৃষ্টি সম্বন্ধে ভাবার মত জ্ঞান আমাদের নেই।
আর আমাদের জ্ঞানতো এমন নয় যে আমরা সবই জানি। বিখ্যাত এরিস্টটলের তত্ত্বগুলোও আজকের দিনে অপ্রয়োজনীয়।
সার্জারী বিদ্যায় একটা কথা বেশ প্রচলিত ছিল আজ থেকে ২০ বছর আগেও, তা হলো," ভালো সার্জন বড় করে কাটে।", বর্তমানে বলা হয় "বড় সার্জন ছোট করে কাটে।" পৃথিবী গোল এটা মানুষ বিশ্বাস করত না, ইত্যাদি।
অথচ এত বড় বিজ্ঞানীদের তত্ত্ব আজকের দিনে অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু কোরআনের বানী আজও সমান ভাবে প্রয়োজনীয়। এতটুকু প্রয়োজনীয়তা হারায়নি। কিন্তু আজ ১৪০০ বছর পরও কোরআনের কোন বানী অমূলক বলে কেউ প্রমানীত করতে পারেনি।

তাই আমার কোন সংশয় নেই। কোন বুদ্ধিমান মুসলিমের তো অবশ্যই কোন অমুসলিমেরও সংশয় থাকার কথা নয়।

আমাদের প্রতি আল্লাহর প্রথম আদেশ পড়, পড়, পড়।
আমি আরো পড়তে চাই, জানতে চাই।

পিলার বানান কি?

গ্রামের স্কুল।

সপ্তম শ্রেনীর ক্লাসরুম। ইংরেজী ক্লাস চলছে।

স্যার জিজ্ঞেস করলেন,"এই তোরা বলত, পিলার বানান কি?"

সবাই একে একে বলতে লাগল।
কেউ ডাবল এল দিয়ে বলল, আবার কেউ কেউ একটা এল দিয়ে বলল।

স্যার বিরক্ত হয়ে ক্লাসের ফার্স্টবয়কে দাঁড় করিয়ে বলতে বলল যে, এল কি একটা হবে না দুইটা?

সে সবসময়ের মত একটু ভাল ছাত্র টাইপের গম্ভীর হয়ে বলল,"স্যার আসলে এখানে একটা এল দিলে চলে, তবে দুইটা এল দিলে একটু মজবুত হয়।"

ফ্রেন্চদের নিয়ে একটি কৌতুক

একবার এক বাঙালি ডিভি ভিসা পেয়ে আমেরিকা এল। কিন্তু অদক্ষতার কারনে কোন চাকরিতে স্থায়ি হতে পারল না। অনেকটা ভবঘুরের মত এখানে সেখানে ঘুরতে লাগল। হঠাতই তার দেখা হয়ে গেল এক পাগলা প্রফেসরের সাথে।

আমেরিকার অনেক প্রফসরের মত সে ও বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করতে পছন্দ করত। তার একটা এক্সপেরিমেন্টের জন্য একজন লোক প্রয়োজন। বাঙালী ভবঘুরেকে পেয়ে সেতো চাঁদ পেয়ে গেল।

বাঙালী ভবঘুরেকে প্রফেসর তাকে প্রস্তাব দিল তার এক্সপেরিমেন্টে সাহায্য করার জন্য। প্রফেসর একটা ঘর দেখিয়ে বাঙালীটিকে বললেন "তুমি এ ঘরে কিছুক্ষন অবস্থান করবে। প্রতি ঘন্টায় তোমাকে দেয়া হবে ৬০ ডলার।" বাঙালীতো খুশি। সে ভাবল যে ওখানে গিয়ে থাকা কোন ব্যাপার হল নাকি। গিয়ে একটা ঘুমই দিয়ে দেব নাহয়।

বাঙালীটি ঘরে প্রবেশ করল। অন্ধকার ঘর। যেমনটি ভেবেছিল আসলে ঘরের পরিস্থিতি সে রকম চিলনা। ঢুকতেই এক বিকট গন্ধ নাকে এল। প্রথমে কিছুটা সহ্য করা গেলেও ধীরে ধীরে গন্ধ টা অসহ্য হয়ে গেল। এতই বিকট ছিল গন্ধটা যে ঘুমের কথা ভাবারও সময় পেলনা। কোনমতে ঘড়ি ধরে একঘন্টা থাকার পর সে রুদ্ধশ্বাসে ঘর থেকে বেরিয়ে এল।

যথারীতি প্রফেসর তাকে ১০ডলারের ৬টি নোট ধরিয়ে দিল। নোট দেখে বাঙালীর লোভ গেল বেড়ে। মনে মনে ভাবল ধ্যাত কেন যে এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম। ইস যদি আরেকটা চান্স পাই তবে ব্যাটার সব টাকা হাতিয়ে ফেলব।

তার মনের কতা পড়তে পেরই যেন প্রফেসর সাহেব আবার প্রস্তাব করলেন। তবে এবার আরেকটা ভিন্ন ঘরে। এবারে টাকার পরিমান আগের চেয়ে অনেকগুন বেশী। এবারে প্রতি মিনিটের জন্য ১০০ ডলার। বাঙালীতো দিল একলাফ। যাহ এবারে আমেরিকার সব টাকা আমার। যত যাই হোক, আমি আর বেরুচ্ছিনা। নাক চেপে, দাত খিঁচে বসে থাকব। প্রয়োজনে আহত হব, শহীদ হয়ে যাব তাও আমার ডলার চাই।

ভাল কথা, সে ঢোকার প্রস্তুতি নিল। নাক, মুখ শার্টখুলে চেপে বেধে নিল। এবার নিশ্চিন্ত। প্রফেসর দরজাটা খুলেই ধাক্কা দিয়ে বাঙালীটিকে ঘরে ঢকিয়ে দিল। হঠাত এই আচরনে হতবুদ্ধ বাঙালীর কয়েক সেকেন্ড পার হয়ে যায় ঘটনা বুঝতে বুঝতেই। এটাও প্রচন্ড অন্ধকার ঘর, কিছুই দেখা যায়না। তারপরেই তার শার্ট বাধা নাকের ভিতর কি যেন বোঁটকা টাইপের ঘন কি যেন ঢুকতে শুরু করল। তীব্র গন্ধে নাকে জ্বালাপোড়া শুরু হল। হাত দিয়ে নাকটা আরো জোরে চেপে ধরে সে। তারপরও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। মনে মনে আশাহত হয় সে। তার নাক, মুখ, হাত পা সব যেন একসাথে এই তীব্র দুর্গন্ধ থেকে মুক্তির জন্য আকুলি বিকুলি করছে। তার লম্বা সময় থাকার চিন্তা উবে গেছে কয়েক সেকেন্ড আগেই। এখন একশ ডলার পাওয়াই তার একমাত্র কাম্য। কিন্তু ঘড়ি যেন চলছেইনা। এক সেকেন্ড হওয়ার ২০ সেকেন্ড আগেই বের হওয়ার জন্য দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করল। প্রফেসরকে দরজাটা বন্ধ করার সুযোগ পাওয়ার আগেই দরজা খুলতে হল। ঘর থেকে বের হয়েই বাঙালী ভদ্রলোক অলিম্পিক ফাস্ট টাইপের দৌড় দিল। প্রফেসর তার এক্সপেরিমেন্টের কথা ভেবে তার পেছন পেছন গাড়ি চালিয়ে এলেন। এক মাইল যাওয়ার পর বাঙালী থামল। প্রফেসর তার থামার পর গাড়ি থেকে নেমে এলেন। তাকে দেখে বাঙালী দৌড়ে এসে তার কলার চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে বলল,"ঐ ব্যাটা প্রফেসর ঐ ঘরে কোন জানোয়ার ছিল তাড়াতাড়ি বল.."। প্রফেসর কোন মতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, " ওখানে ছিলেন একজন ফ্রেন্চলোক।"


প্রফেসরের এক্সপেরিমেন্টের বিষয় ছিল,"একজন ফ্রেন্চ পারফিউম ব্যবহার না করলে কতক্ষন তাকে সহ্য করা যায়।"

বি:দ্র: ফ্রেন্চরা অনেকদিন একটানা গোসল করে না। তাদের গায়ের বিশ্রি গন্ধ দুর করতে তারা পাফিউম ব্যবহার করে। তবে এই পারফিউম ব্যবহার তারা নিজেরা আবিশ্কার করেনি। তারে শিখেছে স্পেনীয় মুসলিম সভ্যতাকাছ থেকে। তাছাড়াও ইউরোপের বিজ্ঞানের অগ্রগতি্ও মুসলিমদেরই দান। জানতে ক্লিক করুন গ্রানাডা ট্রাজেডী ও মুসলিম উম্মাহর করণীয়

একজন ছাত্রের জন্য এর চেয়ে সুন্দর রুটিন কি আর হতে পারে?

১. সকালের ঘুম ভাঙবে মুয়ায্যিনের সুললিত কণ্ঠের আযানের শব্দে।
২. হাতমুখ ধুয়ে ফজর নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়া এবং নামাজ শেষে হালকা জগিং করে বাসায় ফেরা।
৩. সামান্য নাস্তা করে কিছুক্ষন কুরআন তেলাওয়াত, তাফসির অধ্যয়ন করা।
৪. এবার কিছুক্ষন পড়াশুনা করা।
৫. সকালের নাস্তা করে, গোসল করে ভার্সিটি, কলেজ অথবা স্কুলে যাওয়া।
৬. মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করা।
৭. দুপুরে লান্চ ব্রেকে যোহর নামাজ পড়ে, লান্চ করে আবার ক্লাসে যাওয়া।
৮. বিকেলে ক্লাস শেষে আসর নামাজ পড়ে বাসায় ফেরা।
৯. বিকেলে খেলাধুলা করা ও সন্ধায় মাগরিব নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে আসা।
১০. পড়াশুনা, এশার নামাজ এবং রাতের খাবার।
১১. কিছুক্ষন ব্লগিং, টিভি দেখা, পড়াশুনা ইত্যাদি। এবং ১০টার মধ্যেই ঘুম।

রুটিনটির কিছু বৈশিষ্ট্য:
১. একটানা একঘেয়ে পড়াশুনার বিরক্তিমুক্ত।
২. বন্ধুদের সাথে ৫বার দেখা করার সুযোগ।
৩. ৫ বার অযু বিভিন্নভাবে দেহের উপকার করবে।

আরো অনেক কিছু, তবে আমি সব বলতে পারছিনা এবং আপনাদের কাছে এর সাথে যোগ করা যেতে পারে এমন তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এর অপকারীতা জানানোরও আহবান রইল।

(বি: দ্র: এটা কিন্তু আমার রুটিন নয়। এ রুটিন পালন করতেই হবে তাও বলছিনা।)

মুসলমান সকলেই দিনে কমপক্ষে ৫ বার আল্লাহর সাথে একান্তে কথা বলে

কজন ব্লগারের ব্লগ দেখলাম, তিনি লিখেছেন কেউ কি আল্লাহর সাথে কথা বলতে পারে কিনা।

সত্যিই পারে।

আপনারা কি জানেন যে কোন নও মুসলিমকে ইসলামের সাক্ষ নেওয়ার পর কি শিক্ষা দেওয়া হয়? তা হল নামাজ। নামাজই মুসলমান আর অমুসলমানের মধ্যে পার্থক্য।

আমরা যারা মুসলমান আমাদের নিয়মিত নামাজ পড়ার চেষ্টা করা উচিত। একদিনে তা হবে না। তবে দিনের পর দিন অনুশীলনের মাধ্যমে ৫ ওয়াক্ত নামাজ একদম সহজ রুটিনে পরিনত করা সম্ভব। নামাজ মানুষ এবং আল্লাহর মধ্যে সুসংহত সম্পর্ক সৃষ্টি করে।
(চলবে)

গ্রানাডা ট্র্যাজেডি : মুসলিম উম্মাহর করণীয়

আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ

ইসলামের সোনালী যুগে জাজিরাতুল আরবের সীমানা ছাড়িয়ে ইসলামী রাষ্ট্র বিস্তৃত হয়েছিল পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণের সকল দিগন্তে। হযরত আলী (রা) এর ইন্তেকালের পর উমাইয়া খিলাফত শুরু হয়, তাদের সময় ব্যাপক সাম্রাজ্য বিস্তৃতি ঘটে এবং এসময়ে মুসলমানগণ জিব্রাল্টার পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বুকে স্পেন সাম্রাজ্যের প্রতাপশালী ও অত্যাচারী রডারিককে পরাজিত করেন। স্পেন হয়ে যায় ইউরোপের মুসলিম দেশ। সেটি অষ্টম শতকের কথা।

সময়ের ব্যবধানে অনেক কিছুই বদলে যায়। ইতিহাসের পালাবদলের হাত ধরে আবার ১৪৮২ সালে মুসলমানদের করুণ পরিণতি লাভ করতে হয় নিজ হাতে গড়ে তোলা জ্ঞান-গরিমা ও শৌর্য-বীর্যের প্রতীক, জ্ঞানের নগরী রাজধানী গ্রানাডাতে। প্রধানত: ১লা এপ্রিলকে গ্রানাডা-ট্র্যাজেডির দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

আজ হতে ৫২৬ বৎসর আগে সেই যে স্পেনের রাজধানীতে এক ট্র্যজেডির মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় মুসলমানদের পতন হয় তা কেবল একটি ঘটনামাত্র নয়, বরং হাজার ঘটনার জন্মদাতা। এরই পথ ধরে, মসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকে বিদ্বেষী খ্রীষ্টন-ইহুদীগণ। পরপর তিনটি ক্রুসেড এর পর মুসলিম দুনিয়া মূলত: অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে ইউরোপের উপনিবেশিক শক্তির উপনিবেশে পরিণত হয়। ফলে যা হওয়ার তাই-হয়। পরাজিত মুসলমানগণ বিজয়ী ইউরোপের সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক গোলামে পরিণত হয়।

দীর্ঘ দুই, আড়াইশো বৎসর গোলামী শেষে আবার একে একে স্বাধীন হয়েছে মুসলিম দেশ সমূহ, যার সংখ্যা বর্তমানে ৫৭টি। ভূ-রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করলেও এসব দেশ সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গোলামীর জিঞ্জির ছিড়তে পারেনি। এ অবস্থায় ঘুরে ফিরে পশ্চিমের অনুসরণ-অনুবর্তন ও অণুকরনের এক নির্লজ্জ মহড়া চলছে।

১লা এপ্রিল এলেই পশ্চিমা বিশ্বের মতো আমাদের তরুণ-তরুণীরাও পালন করে এপ্রিল ফুল (অঢ়ৎরষ ভড়ড়ষং) দিবস। সম্ববত: আমাদের তরুনদের মন-মানসে চেপে বসা পশ্চিমা ভূত তাড়িয়ে তাদেরকে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সচেতন করার এটিই সময়। বক্ষমান প্রবন্ধ তারই একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস।

স্পেনের সোনালী অধ্যায় ঃ
তারিকের স্পেন জয় ছিল এক বিস্ময়কর বিষয়।
স্পেনের প্রজা উৎপীড়ক রাজা রডারিক ক্ষমতায় এসেছিলেন তার পূর্বসূরী শাসক ইউটিজাকে হত্যা করে। এ সময় সিউটা দ্বীপের শাসক ছিলেন কাউন্ট জুলিয়ান। জুলিয়ান তার কন্যা ফ্লোরিন্ডাকে রাজকীয় আদব কায়দা শিখানোর জন্য রডারিকের কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু রডারিক ফ্লোরিন্ডার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। উইটিজা ছিলেন জুলিয়ানের শ্বশুর। শ্বশুর হত্যা ও কন্যার অপমানের প্রতিশোধ নিতে জুলিয়ান মুসলিম বীর মুসাকে আমন্ত্রণ জানান স্পেন দখল করার জন্য।

স্পেনের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা যখন অত্যন্ত শোচনীয় তখন মুসাকে আহবান জানানো হয় তা আক্রমণের জন্য। সে সময় মুসলিম বিশ্বের শাসক ছিলেন ওয়ালিদ। মুসা তাঁর অনুমতি নিয়ে সেনাপতি তারিক-বিন-জিয়াদকে পাঠান স্পেন আক্রমনে। পরে মুসা এসে তার সাথে যোগ দেন।

সেনাপতি তারিক ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে রডারিকের ১ লক্ষ ২০ হাজার সৈন্যর মোকাবিলায় এগিয়ে আসেন। সৈন্য সংখ্যার ব্যবধান তাকে মোটেও ভাবিয়ে তোলেনি কারণ তিনি জানতেন তাদের আসল শক্তি লোকবল নয় বরং ঈমানের অফুরন্ত শক্তি।

ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে, স্পেনের মাটিতে পা রেখেই সমস্ত সৈন্যদের নামিয়ে আনলেন তারিক। জ্বালিয়ে দিলেন তাদেরকে বয়ে আনা জাহাজগুলো। তারপর সৈন্যদের লক্ষ্য করে বললেন- প্রিয় বন্ধুগন, এখন তোমাদের সামনে স্পেন, রডারিকের সেনাবাহিনী আর পিছনে ভূ-মধ্য সাগরের উত্তাল জলরাশি। তোমাদের সামনে দুটোপথ। হয় লড়তে লড়তে জয়ী হওয়া, শাহাদাতের মর্যাদাসিক্ত হওয়া কিংবা সাগরের উত্তাল তরঙ্গের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাপুরুষের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা। তার বক্তব্যে অনুপ্রাণিত সৈন্যগণ বিপুল বিক্রমে লড়াই করে সেদিন বিজয়ী হয় এবং রডারিক ওয়াডালেট নদীতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে।

স্পেনে মুসলিম সভ্যতার বিকাশ: ইউরোপের মানুষের নব জাগরণ:
মুসলিমগণ দীর্ঘ ৮০০ স্পেন শাসন করেন।
আসলেই তখন ছিলো ইউরোপীয় মানুষদের মধ্যযুগ। পুরো ইউরোপ জুড়ে তখন খ্রীষ্টীয় শাসন চলছিলো। গীর্জা ও রাষ্ট্রের যৌথ শাসন জনগণের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছিল। বিজ্ঞানীদের ধর্ম-বিদ্বেষী চিহ্নিত করে তাদের প্রতি নির্যাতন চলছিল। ক্ষমতার দ্বন্দ ছিলো সর্বত্র। ধর্মীয় বিধান সমূহ গীর্জার ও পুরোহিত শাসকদের ইচ্ছানুযায়ী পরিবর্তিত হচ্ছিল বারবার।
এমনি সময়ে স্পেনের বুকে ইসলামের বিজয় ছিলো স্পেনীয় সাধারণ মানুষের একটিবড় পাওনা। তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান-আদল-ইনসাফ, সাম্য-সৌভ্রাতৃত্ব, সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক নতুন সড়কে পা রাখলো মুসলিম শাসন ব্যবস্থার অধীনে। মুসলিম শাসনের সময় স্পেনের রাজধানী ছিলো গ্রানাডা এবং তার অপর প্রধান শহর ছিলো কর্ডোভা। গ্রানাডায় পড়ে ওঠে মুসলিম সভ্যতার একটি তীর্থস্থান। সেখানকার আলহামরা প্রাসাদ, গ্রান্ড মসজিদ আজো মানুষেরকাছে বিস্ময়কর স্থাপত্য। কর্ডোভায় গড়ে ওঠে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্র সমূহ। বাগদাদের নিজামিয়া বিশ্বদ্যিালয়ের চেয়েও বড় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে ওঠে কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়। সারা ইউরোপ থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা এসে এখানে জড়ো হয় মুসলিম জগতের সহায়তায় গড়ে ওঠা জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য। আজ যেমন হাভার্ড কিংবা অক্সফোর্ড যায় লোকেরা তখন তারা যেতো কর্ডোভায়। এই বাতিঘর থাকে আলোকিত হয়েই আধুনিক ইউরোপের উদ্দীপক ঘটনা শিল্প-বিল্পবের নায়কেরা নিজ নিজ দেশে শিল্প- গবেষনা ও উন্নয়নের রেনেসার সূচনা করেন।

মুসলিম শাসন আমলে স্পেনের ঘরে ঘরে ইসলামের বিস্তার ঘটে। প্রতিটি এলাকায় গড়ে ওঠে সুন্দর সুন্দর মসজিদ। সকাল-সন্ধ্যা। আজানের সুমধুর ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হতো। দুই সভ্যতার মিলনকেন্দ্র স্পেনে দীর্ঘ মুসলিম শাসনামল ছিলো শিক্ষা সংস্কৃতি, সভ্যতার চরম উৎকর্ষের কাল, ধর্মীয় সহনশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধের লালন ও বিকাশের সময়। এসময়ে স্পেনীয় মুসলমানগণ সমগ্র ইউরোপের সামনে সভ্যতা ও সংস্কৃতির মডেল হিসেবে চিহ্নিত হয়। এটিকে ইউরোপ স্বীকৃতি দিয়েছে ‘মরুসভ্যতা’ হিসেবে। এই দরোজা দিয়েই ইউরোপের মানুষের কাছে পৌছে যায় মসলিনসহ মুসলিম দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ পণ্য সমূহ। আজকের আমেরিকা তখনও অনাবিস্কৃত এক অজানা ভূখন্ড আর ইউরোপের বহু দেশের লোকেরা তখণও স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য নিয়মিত গোসল করার বিষয়েও অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। অথচ মুসলিমানগণ রাস্তার মাঝে মাঝে গড়ে তুলেছিলেন ‘চঁনষরপ ঃড়রষবঃং’ বা হাম্মামখানা। সেখানে শুধু অজু-গোসলের ব্যবস্থাই থাকতোনা, থাকতো সুগন্ধি প্রসাধন ও বাসানের ব্যবস্থা।

ইউরোপের বাতিঘর গ্রানাডা ছিলো সকল মানুষের জন্য এক আকর্ষনীয় কেন্দ্র বিন্দু।
একে একে মুসলমানগণ সময়ের সাথে বদলে যেতে থাকলেন।
জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তির সন্ধানে কঠিন সাধনার পথ ছেড়ে তারা ধীরে ধীরে ভোগ- বিলাস আরাম-আয়েশে মত্তহতে শুরু করলো। ঐক্য সংহতি, শৌর্যের স্থলে তারা বিভক্তি, হানাহানি, ভীরুতা ও অদুরদর্শিতার পথে পা বাড়ালো। তাদের মাঝে শুরু হলো প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের খেলা, প্রজাসাধারণের স্বার্থের বদলে তারা ব্যক্তি ও গোষ্টির স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে শুরু করলো। প্রসাদে গড়ে উঠলো রং-মহল, তাদের হেরেমের নেতৃত্ব চলে গেলো-ইউরোপীয় রাজন্য বর্গের সুন্দরী আত্মীয়দের হাতে।

গ্রানাডা ট্র্যাজেডির ইতিকথা:
অন্য সকল এলাকার মতো ইউরোপের মুসলমানদের মাঝেও জন্ম নিল ভোগ-বিলাস, সম্পদের লোভ ও ব্যাতির লিন্সা। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের যখন বিজয় চলছিল, রোম-পারস্য সহ সমগ্র পরাশক্তি যখন মুসলিম শাসনের অধীনে চলে এলো ঠিক তখনি ইউরোপের খ্রীষ্টান স¤প্রদায় নতুনভাবে জেগে উঠলো ধর্মীয় চেতনায়। তারা সমস্ত খ্রীষ্টান রাজন্যবর্গের কাছে, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের কাছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যের ডাক দিলো। সে ডাকের একটিই কথা- মুসলমানদের পরাজিত করতে হবে, ইসলামকে ঠেকাতে হবে। এর নাম দেয় তারা ‘ক্রুসেড’ বা ‘ধর্মযুদ্ধ’। সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ক্রুসেডের আহ্বানে সাড়া দেয় খ্রীষ্টীয় ঐক্য শক্তি, নিজেদের বিভেদ ভুলে তারা মুসলিম শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ধর্মযুদ্ধ বলা হলেও এটি প্রকৃতপক্ষে ছিল জয়ের জন্য যুদ্ধ।

৬৩৮ খৃষ্টাব্দে খলিফা উমার (রা) বিনাযুদ্ধে, বিনা রক্ত ব্যয়ে জেরুজালেম দখল করে নেন। ১০৯৯ সালে মুসলমানদের দলাদলির সুযোগে পোপ দ্বিতীয় আরবান প্রেরিত ইউরোপীয় খৃষ্টান বাহিনী জেরুজালেম দখল করে ৪৬১ বছরের একটানা মুসলিম শাসনের অবসান ঘটায়। ক্রশের নামে শপথ গ্রহণ করা হতো বলে এ যুদ্ধের নাম হয় ক্রুসেড। ১০৯৫ সালে এ যুদ্ধের আহবান জানানো হয়। ১০৯৭ সালে পোপের মূল বাহিনী ফ্রান্স থেকে রওয়ানা হওয়ার কথা থাকলেও মাঝখানে পিটার নামক এক ভবঘুরে ১০৯৬ সালে তার বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয় ও পরাজিত হয়। ১০৯৭ সালে মূল ক্রুসেডারগণ জেরুজালেমের কাছে গেলে সুলতান সুলায়মান তাদেরকে খুব শক্তিশালী মনে করেননি। ফলে তারা সামনে এগিয়ে যায়।

এ সময় এশিয়া মাইনরের তুর্কী সুলতান, সিরিয়ায় আরব আর মিসরে ফাতিমীয় সুলতান পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হলে বিদেশী ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসেননি। ১০৯৭ তে ক্রুসেড বাহিনী এন্টিয়ক অবরোধ করে ৬০ জন বন্দী মুসলমানকে পুড়িয়ে হত্যা করে। খাদ্যভাবসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় তখন ক্রুসেড বাহিনী আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হচ্ছিল তখন ফিরোজ নামক এক পারসিক বিশ্বাসঘাতক শত্র“দেরকে দুর্গে ঢোকার গোপনপথ দেখিয়ে দেয়।

১০৯৯ সালের মে মাসে ক্রুসেডারগন জেরুজালেম অবরোধ করে। জেরুজালেম যেহেতু মিসরীয় সুলতানের দখলে সেহেতু সিরীয় মুসলিম বাহিনী নিস্ক্রিয় থাকে। হারতে হারতে জিতে গেলো ক্রুসেডারগণ। শান্তির দুত বলে দাবীদার ক্রুসেডারগণ নগরবাসীকে নিমর্মভাবে হত্যা করে এমনকি ‘মসজিদুল আকসা-র’ আশ্রয় নেয়া প্রতিটি মুসলমানকে তারা হত্যা করে। ফলে মসজিদে এক হাটু রক্ত জমে যায়।

এ ঘটনার পর ১১৪৪ সালে মসুলের সুলতান আতাবেগ জঙ্গী এডেসা দুর্গ ক্রুসেডারদের হাত থেকে দখল করে নেন। ১১৪৫ সারে পোপ তৃতীয় ইউজিনিয়াস ২য় ক্রুসেডের ডাক দেন। ১১৪৮ সুলতান নুরুদ্দিনের হাতে সম্মিলিত ক্রুসেডারদের পতন হয়। ১১৮৭ সালে সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেন এবং সেখানে জুমআর নামাজ আদায় করেন। এবং মজার বিষয় হলো ২য় বারের মতো জেরুজালেম দখল করতেও মুসলমানগণকোন রক্তপাত ঘটায়নি। ৮৬ বছর পূর্বে ক্রুসেডারগণ জেরুজালেমে যে নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছিলো মুসলমানগন এতদিন পর তার মধুর প্রতিশোধ নিলেন সব বন্দীকে মুক্ত করে দিয়ে।
এরপরও ক্রুসেড হয়েছে বারবার। ৬ষ্ঠ ক্রুসেডের সময় পর্যন্ত বারবার ধোঁকার আশ্রয় নেয় খ্রীষ্টান রাজন্যবর্গ ও ক্রুসেডারগন। ১০৯৫ থেকে দীর্ঘ ১৯৬ বৎসর পর্যন্ত এইসব ক্রুসেডের ফলে বহু নীরিহ মানুষ জীবন হারায়। চূড়ান্ত ভাবে ১২৪৪ সালে জেরুজালেম মুসলমানদের দখলে আসে। ১২৪৪ থেকে ১৯১৯ পর্যন্ত একটানা ৬৭৫ বছর জেরুজালেম মুসলিম শাসনে থাকে। ১৯১৯ সালে ইংরেজ জেনারেল এলেনবাই জেরুজালেম শহরে সদলবলে ঢুকে ঘোষনা করলেন এতদিনে ক্রুসেড শেষ হলো।

এই সব ঘটনা যখন চলছিল এরই মাঝে মুসলিম শাসকদের অদুরদর্শী নেতৃত্ব, জনগনের অসচেতনতা ও অনৈক্যের ফলে বিশ্বের নানা প্রান্তে মুসলিম জাতিকে দিতে হয়েছে বড় বড় মাশুল। এই মাশুলেরই একটি হচ্ছে গ্রানাডা ট্র্যাজেডি।

১৪৯২ সালে গ্রানাডা ট্যাজেডি সংঘটিত হয়।
স্পেন মুসলমানদের শাসক তখন বাদশাহ-হাসান। আবু আব্দুল্লাহ ছিলো সুলতান হাসানের ছেলে। খ্রীষ্টানগণ হাসানের বিরুদ্ধে তার পুত্র আবু আব্দুল্লাহকে দিয়ে বিদ্রোহ করালো একথা বলে যে যদি বাবাকে গদীচ্যুত করতে পারে তবে তাকে ক্ষমতায় বসানো হবে। পিতার বিরুদ্ধে আবু আব্দুল্লাহ বিদ্রোহ করলে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে পালায়ন করেন। আবু আব্দুল্লাহ ক্ষমতা গ্রহণ করার পর পরই শুরু হয় স্পেনের মুসলমানদের পতন। আবু আব্দুল্লাহর দুর্বল নেতৃত্ব, নৈতিক অবস্থান চিন্তা করে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও রানী ইসাবেলার যৌথ বাহিনী স্পেন আক্রমন করে বসে।
আবু আব্দুল্লাহ আক্রমণ নিয়ে আলোচনার জন্য দরবারে বিশেষ সভার আয়োজন করেন। ফার্ডিন্য্ন্ডা আবু আব্দুল্লাহকে আশ্বাস দিলো যে তারা যদি বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে তাদের জীবন রক্ষা করা হবে। দুর্বল রাজা ও তার সভাসদগণ অতীতের চুক্তিভঙ্গের রেকর্ড ভুলে গিয়ে ফার্ডিন্যান্ডের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনেক সাহসী সৈনিক আত্মসমর্পনের পরিবর্তে লড়াই করে শাহাদাতের অমীয় পান করলেও অন্য সকলে গ্লানিকর আত্মসমর্পনের পথে যায়।

ফলে সহজেই ফার্ডিন্যান্ড গ্রানাডার রাজপথ সহ সমগ্রশহর দখল করে নেয় ২৪শে নভেম্বর ১৪৯১ সালে। তারা শুরু করে নৃশংস ও বর্বর পন্থার হত্যাবজ্ঞ, লুন্ঠন ও ধর্ষন। এসব অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে উঠলে অনেক মুসলিম স্থানে স্থানে বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহী এসব লোকজনকে হত্যা করার পাশাপাশি এক পর্যায়ে ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার বাহিনী ঘোষনা করে যারা শান্তি চায় তারা যেনো সব মসজিদে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। সরল বিশ্বাসে, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় হাজার হাজার মুসলিম আবাল-বৃদ্ধ বনিতা নগরীর মসজিদ সমূহে গিয়ে আশ্রয়গ্রহণ করলো। তখনও এসব মানুষ জানতোনা কত নিষ্ঠুর এক খেলা অপেক্ষা করছে তাদের জন্য! মসজিদ গুলোতে মুসলমান নর-নারী ও শিশুরা নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কাঁদছে তখন রাতের আঁধারে জ্বালিয়ে দেয়া হলো সমস্ত মসজিদ। দাউ দাউ করা আগুন, নারী-পুরুষের আর্ত চিৎকার আর ফার্ডিন্যান্ড-ইসাবেলার ক্রুর হাসি একাকার হয়ে গেলো।
এই হলো গ্রানাডা ট্র্যাজেডি।
কী এক নির্মম পরিহাস অদৃষ্টের! ঘটনাটি ঘটলো ১লা এপ্রিল ১৪৯২। এমনি ঘটেছিলো ইহুদীদের হাতে খ্রীষ্টানদের পরিণতি অন্য এক ১লা এপ্রিল। প্রতারণা, হাসি তামাশাচ্ছলে ১লা এপ্রিল উদযাপিত হলেও এটি মূলত: মুসলমানদের জন্য এক ট্র্যাজেডির দিন।

একদিন যে কর্ডোভা ও গ্রানাডার মসজিদ গুলো থেকে পাঁচওয়াক্ত আজান ধ্বনিত হতো, আন্দোলিত হতো স্পেনের মুসলমানদের হৃদয়, আজ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে সব গীর্জার স্তম্ভ। যে কোন নামাজী স্পেনের বিমান বন্দরে নামাজে দাঁড়ালে অন্যরা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে-কী করছে এই লোক? আহ্ কী অসহ্য দৃশ্য!
আল্লামা ইকবাল যখন কর্ডোভায় যান তখন তাঁর হৃদয়ের কষ্ট বেরিয়ে আসে সেখানে রচিত কবিতা ‘কর্ডোভার মসজিদ” এ:
“সকল কলা-শৈলী তোমা পুজে তোমার গর্ব বয়।
তোমার তরেই আন্দালুসের মাটি কাবার তুল্য হয়।
........................
সত্যসেবক হায়, কোথা সে আরব দেশের ঘোড়াসওয়ার
মহত্তম চরিত্রটি করত বহন ঈমান যার।
........................
চোখের তারায় জাগে আহা, তোমার দেশের দিগ¦লয়
কত বরষ ধরে হেথায় আজান বিহীন প্রভাত হয়।
....................
ইনকিলাবের ঢেউ নাচে না, জীবন সে নয়, মৃত্যু যে,
জাতির পরমাত্মা বাঁচে উপপ্লবের নৃত্যে হে।
....................
কালের হাতে সেই সে জাতি মুক্ত তরবারির প্রায়,
কর্মকৃতি, হিসাব যে গো, নিত্য করে সাঁঝের ছায়।
............................
আন্দালুস, স্পেন, গ্রানাডা কর্ডোভা আজ এক অতীত স্মৃতির নাম, এক নীল কষ্টের নাম, দুঃসহ দুর্ভার যন্ত্রনার নাম। আর সেই কষ্ট আমাদেরই স্বীয় কৃত কর্মের ফল, আপন হাতের কামাই।

ট্র্যাজেডির শেষ নেই:
গরংভড়ৎঃঁহব হবাবৎ পড়সবং ধষড়হব
দুঃখের রজনী শেষ হতে চায় না।
মুসলিম উম্মাহর ক্ষেত্রেই যেনো একথাটি সবচেয়ে বেশী প্রযোজ্য।
ফার্ডিন্যান্ডের হাতে স্পেনের পতন, চেঙ্গিসের হাতে বোখারার পতন, হালাকু খাঁর হাতে বাগদাদের পতন, লর্ড ক্লাইভের হাতে সিরাজের পতন আর বেলফোর ঘোষণার মধ্যে দিয়ে ইসরাইল নামক মধ্যপ্রচ্যের বিষফোড়ার জন্ম এ সবই যেনো একই সুতোয় গাঁথা। আর বর্তমান সময়ে ইরাক ও আফগানিস্তানে যা হচ্ছে, গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যা কিছু ঘটছে এগুলোও বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়।
সময়ের পার্থক্য ছাড়া এসব ঘটনার প্রকৃতি, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, পরিণতি প্রায় এক ও অভিন্ন। আমরা হয়তো একটি ঘটনা বিশ্লেষন করি, কষ্ট পাই, আহত হই, আবার সাহও খুঁজে পাই কিন্তু এড়িয়ে যাই অপর ঘটনা। অথচ এসবের মাঝে থোড়াই পার্থক্য।
আমাদের এই যে চেইন অব ট্র্যাজেডি, তার কী কোন শেষ নেই?
যে দিকে তাকাই সে দিকেই দেখতে পাই একই দৃশ্যপট, একই দৃশ্যকাব্য, আমরা আমাদের অনৈক্য ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত, অবিমৃষ্যকারিতার মাশুলও দিয়ে চলছি।

কারণ ও প্রতিকার:
প্রথমত: জাতি হিসেবে আমাদের আত্মপরিচয় বিস্মৃতিই এর প্রধান কারণ। “তোমাদের জাতির পিতার নাম ইবরাহিম (আ) আর তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন “মুসলিম বা আত্ম সমর্পিত জাতি।”
বিজয় পর্বে আমরা এ মুসিলম পরিচয় উর্দ্বে তুলে ধরতাম, আল্লাহতে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে চলতাম আর তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে আকাশ ও জমিনের সবগুলো দূয়ার খুলে আমাদের জন্য আসতো বিজয়, বরকত ও রহমতের ধারা।
যখনই আমরা এ মূল পরিচয় ভুলে গিয়ে অন্যদের তুষ্টির চেষ্টা করেছি। তখনই এসেছে আমাদের পতন।
আজ তাই মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ে ঘুরে দাঁড়াবার দিন।
দ্বিতীয়ত: দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে গাফলতি ও ঔদাসীন্য আমাদেরকে বারবার পরাজিত করেছে। তোমাদেরকে শ্রেষ্ট জাতি হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে মানবতার জন্য, যেনো তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও ও অসৎকাজের থেকে বিরত রাখো। যদ্দিন আমরা এ দায়িত্ব পালন করেছি পৃথিবী আমাদের কুর্ণিশ করেছে। আর যখন থেকে বেহুশ, গাফেল হয়ে, দায়িত্ব বিস্মৃত, গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যাওয়া তৃণখন্ডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছি তখণ থেকে আমাদের বিশাল সংখ্যা আমাদের ধোঁকায় ফেলেছে।
ব্যক্তি ও সামষ্টিক পর্যায়ে আবার সকলকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে। দুষ্টের দমন কিংবা শরীর পতন হওয়া চাই আমাদের প্রত্যয়।
তৃতীয়ত: জাতীয় অনৈক্য, বিভেদ ও আন্তর্জাতিক অসংহতি খেয়ে ফেলেছে গোটা মুসলিম দুনিয়াকে। গ্রানাডা, বাগদাদ, বোখারা, পলাশী, ফিলিস্তিন যেদিকেই তাকাইনা কেন, সে সময়কার ঘটনাই পর্যালোচনা করিনা কেন, হোক তা প্রাচীন কিংবা আধুনিক কালের কথা একই হতাশার চিত্র ভেসে ওঠে আমাদের চোখে। “ঈমান, ভ্রাতৃত্ব, আল্লাহ প্রেম আর তাকওয়ার স্থান দখল করেছে ক্ষুদ্র ব্যক্তি, গোষ্টি ও জাতীয় স্বার্থ, প্রতিহিংসা ও খোদাহীনতা।
সে সময় যেমন বিভন্ন রাষ্ট্রের মুসলিম শাসকগণ অনৈক্য ও বিভেদের কারণে জাতীয় (উম্মাহর) প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেননি, আজো পারছেন না। তা না হলে , গ্রানাডার ঘটনাও ঘটত্নোা, ঘটতোনা প্রথম ক্রুসেডের পতন, ফিলিস্তিনের অভ্যূদয় কিংবা বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের সকরুণ পরিণতি।
এখনও বিশ্বে ৫৭টি মুসলিম দেশ অস্তিস্ত নিয়ে টিকে আছে, অনৈক্য ভূলে ঐক্যবদ্ধ হতে দেরী করলে এ সবের অস্তিত্ব বিলীন হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার হোক তা ভৌগলিক বিলুপ্তি কিংবা সাংস্কৃতিক অদৃশ্যায়ন।
আল্লাহর একটাই আহবান “তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধারণ করো। আর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।”

চতুর্থত: আল্লাহর নবীর (সা) উপস্থিতিতে যেমন ছিলো আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই, হযরত হোসাইনের সময় যেমন ছিরো ইয়াজিদ, গ্রানাডায় যেমন ছিলো আবু আব্দুল্লাহ, জেরুজালেমে যেমন ছিলো ফিরোজ, পলাশীতে যেমন ছিলো মীর জাফর তেমনি সকল যুগেই কিছু মুনাফিক, ঘরের শত্র“ বিভীষণ মুসলমানদের পতনের, পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অর্থগৃধনু, ক্ষমতালিন্সু এ সমস্ত হীন চরিত্রের লোক শেষ পর্যন্ত নিজেও কোন কিছু ভোগ করতে পারেনি, তারপরও ইতিহাসে আমরা এর পুনরাবৃত্তি দেখতে পাই।
এ সবের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা ছাড়া বিশ্ব মুসলিমের নবশক্তিতে আবির্ভুত হওয়া সম্ভব নয়।

পঞ্চমত: গ্রানাডা ট্র্যাজেডি আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় ইসলামের শত্র“রা যখনই সুযোগ করতে পেরেছে মুসলমানদের সরল বিশ্বাসকে পুজি করে তাদের প্রতারিত ও পরাজিত করেছে। সুতরাং সন্ধি ও লড়াই দুই অবস্থার জন্যেই আমাদের প্রস্তুত থাকা উ”িত। যাতে, কোন কারণে দুশমন গাদ্দারী করলে তার উপযুক্ত সাজা দেয়া যায়। মুসলিম একটি শান্তি প্রিয় জাতি কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সে প্রয়োজনে লড়াই করতে জানবেনা। আল্লাহ এই আহবানই করেছেন আমাদের “তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, জীবন দেয় ও নেয়।” অকাতরে জীবন দেয়া এবং প্রয়োজনে অত্যাচারীর টুটি চেপে ধরার মতো সৎসাহস তার থাকা চাই।
ষষ্টত: গ্রানাডার পতনের সামরিক কারণের চাইতেও তার সাংস্কৃতিক কারণ অনেক বেশী। একটি জাতি ক্রমশ: সাংস্কৃতিক ভাবে কতটুকু দেওলিয়া হলে তার আটশত বৎসর শাসনকালের নাম নিশানা এক শতাব্দীর মধ্যে মুছে যেতে পারে তা অবশ্যই ভাবনার দাবী রাখে। ক্ষমতাসীনদের ঘরে ঘরে ইউরোপীয় শাসকদের সুন্দরী আত্মীয়দের বরণ করে নেয়ারও একটি পরিণতি তারা ভোগ করেছে, যা করেছে মোঘল বাদশাগণ হেরেমে রাজপুতসহ অন্যরমনীদের স্থান করে দিয়ে।
সাংস্কৃতিক ভাবে মুসলমান হিসেবে গড়ে উঠার সমূহ আয়োজন ছাড়া দিনের বিপর্যয় থেকে বাঁচা সম্ভব নয়।

সপ্তমত: গ্রানাডা ট্র্যাজেডির ৫২৬তমবর্ষে একটি কথাই বারবার মনে পড়ছে। ফার্ডিন্যান্ড কিংবা ইসাবেলার ক্রুর হাসির গমকে যেদিন সেখানকার সব শিশু কিশোর যুবা বৃদ্ধকে একযোগে হত্যা করা হয়েছিল। সেদিন হয়তো ওরা ভেবেছিল মুসলিম জাতির কেউ আর ইউরোপে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। সময়ের পালাবদলে তাদের সে স্বপ্ন ধুলায় মিশে গেছে। মিশনারী জাতি মুসলিম, তার সদস্যগণ আজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সমগ্র ইউরোপ-আমেরিকাসহ সব কটি মহাদেশ। আজ ইউরোপের প্রতিটি দেশেই আবারগড়ে ওঠছে মসজিদ, মিনার, সেখানে সেজদার অবণত হচ্ছে অযুত নিবেদিত প্রাণ আল্লাহর বান্দা।

সুতরাং আমাদের হতাশার কিংবা ব্যথিত হওয়ার কিছুই নেই। আল্লাহ তার আলোকে প্রজ্জ্বলিত রাখবেনই। তা কাফেরদের কাছে যতই কষ্টকর হোকনা কেন। হান্টিংটন ও তার দোসরদের হাজার প্রপাগান্ডার পরেও আমরা বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারি, যদি হই আমরা সত্যিকারের মুমিন।
গ্রানাডা ট্র্যাজেডি থেকে শুরু করে আজ অবধি পশ্চিমের সমস্ত ইসলাম বৈরীতা মূলত: ক্রসেডেরই প্রতিচ্ছায়া। কেবল রুপান্তরিত হচ্ছে সামরিক, সাংস্কৃতিক ও আধিপত্যবাদী ‘ক্রুসেডে’।

সুধীজন,
“সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত, মিথ্যার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।”
আসুন, এই মহান দিনে আত্মতৃপ্তি কিংবা হতাশায় না ভুগে আমরা নিজেদের অবস্থান উপলব্ধি করি, ঐক্যবদধ হই, দাওয়াতে নিষ্ঠাবান হই আর সকল ধরনের জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি হোক তা জবানের , কলমের কিংবা সামরিক। আল্লাহর সাহায্য মুজাহিদের জন্য, ভীরু ও কাপুরুষের জন্য নয়। পশ্চিমের ভয়ে ‘জিহাদ’ শব্দটিকে পরিহার করা আমাদেরকে অন্য এক ট্র্যাজেডির দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমরা আর কোন নতুন ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হতে চাই না।

তথ্য পঞ্জি:
আল-কোরআন, আল ইমরান-১০৪. ১১০. ১৩৯, বাকারা-৪৩, মা’আরিজ-২৫, আলহাজ্ব-৪১, তওবা-১১১.
ক্রুসেডের প্রতিছায়া, মুহাম্মদ আসাদ, মুহাম্মদ আসাদ: শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলী, দি পাইওনিয়ার, পৃষ্ঠা ১১৪. ১২০।
ক্রুসেড ও মুসলিম বিশ্ব, ডা: মুহাম্মদ গোলাম মোয়াজ্জেম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, মুসলিম বিশ্ব সংখ্যা, ১৯৮৪, পৃষ্ঠা-৬৫২।
রিচার্ভ - চেঙ্গিস, বেগিন, সামিউল আহমদ খান, ই.ফা. পত্রিকা. মুসলিম বিশ্ব সংখ্যা ১৯৮৪. পৃষ্ঠ: ৬৬৬
‘কর্ডোভা মসজিদ’ - আল্লামা ইকবাল; বালে জীবরীল।
‘উন্দুলস মে ছান্দ - আল্লামা তকী ওছমানী
‘ক্রুসেডের ইতিবৃত্ত’ আসকার ইবনে শাইখ, মদীনা পাবলিকেশন্স।